ঢাকা : নারীদের বিয়ের বয়স কমানোর চক্রান্ত বন্ধ, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকদের প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বেতন-ছুটিসহ কাজের বিবরণী সুনির্দিষ্ট করে নিয়োগপত্র প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, সহ-সভাপতি সুলতানা আক্তার রুবি, সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন, দপ্তর সম্পাদক তাছলিমা নাজনীন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের বয়স সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। জাতীয় শিশু নীতি ২০১৪-তে শিশু বলতে ১৮ বছরের নিচের বয়সের শিশুকে বোঝানো হয়েছে। শিশু অধিকার সনদে একই কথা বলা হয়েছে। তাহলে বিয়ের বয়স নিয়ে সরকারের এই ধরনের যড়যন্ত্র কেন? নারী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ সকলেই ১৬ বছরের মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করাকে যখন অযৌক্তিক মনে করছে তখন সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারিতার সামিল। ধারণা করা হচ্ছে, একদিকে দুনিয়ার সামনে বাল্যবিয়ের হার কম দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং অন্যদিকে কূপমণ্ডুক মৌলবাদী চক্রকে খুশি করে ভোটের সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যা কোনোভাবেই মানা যায় না। সরকারের এই স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত নারীর জীবনকে আরো বিপন্ন করবে, নারী নির্যাতনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করবে।
বক্তারা বিদেশে নারী শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে এই বছর লক্ষাধিক শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গৃহপরিচারিকা ও গাড়িচালক এই দুই খাতে শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও প্রতিমাসে শুধু গৃহশ্রমিকই যাবে ১০ হাজার। বেতন ৮০০ রিয়াল বা বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ টাকা যা খুবই অপ্রতুল। এত অল্প বেতনে এই শ্রমিকদের সৌদি আরবে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা-হয়রানি কি বন্ধ হবে? গৃহশ্রমিক হিসাবে নারীদের পাঠানোর পূর্বে পূর্ণ নিরাপত্তার বিষয়টি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন সেটি উপেক্ষিত। সৌদি আরবে কর্মরত বেশিরভাগ নারী শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের, এমনকি ধর্ষণের শিকার হয়। অন্যান্য দেশে নারী শ্রমিকরা ঠিকমতো বেতন ও ছুটি পান না। উল্লেখ্য যে নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশ সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিক প্রত্যাহার করেছে। সেজন্য নারী শ্রমিকদের সৌাদি আরবে পাঠাতে হলে তার পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বেতন-ছুটিসহ কাজের বিবরণ সুনির্দিষ্ট করে শ্রমিকদের প্রেরণ করতে হবে।
রংপুর : নারী শ্রমিকদের পাঠানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ১৬ মার্চ বিকাল ৪টায় স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধা : প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আয়োজন নিশ্চিত করে বিদেশে নারী শ্রমিকদের পাঠানোর দাবিতে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধা জেলা শাখার মানববন্ধন করে।