Sunday, April 28, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল ২০১৫কার্ল মার্কস : জীবনসংগ্রাম ও শিক্ষা শীর্ষক আলোচনা

কার্ল মার্কস : জীবনসংগ্রাম ও শিক্ষা শীর্ষক আলোচনা

11138535_10153165334639004_5422901266990072413_nগত ১৪ মার্চ ছিল মানবজাতির মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক মহান কার্ল মার্কসের ১৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ২০ মার্চ বিকাল ৫টায় ‘কার্ল মার্কসের জীবন সংগ্রাম ও শিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভা দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনা করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। ফখরুদ্দিন কবির আতিকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী তাঁর আলোচনায় বলেন, ইতিহাসের একটা বিশেষ পর্বে সামন্ততন্ত্র উৎখাত হয়ে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। সামন্ততন্ত্র-গির্জাতন্ত্রকে উৎখাত করে আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লব গোটা ইউরোপকে প্রবলভাবে ভূমিকম্পের মতো আলোড়িত করেছিল। জার্মানি তখন সামন্তীয় ব্যবস্থায় আটকে ছিল, অঞ্চলগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সেখানেও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের আকুতি সঞ্চারিত হয়েছিল। মার্কস যেখানে জন্মেছিলেন সেই রাইনল্যান্ড ফ্রান্সেরই সন্নিহিত অঞ্চল। ফলে ফরাসি বিপ্লবের অভিঘাত ওই অঞ্চলে তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবে বুর্জোয়াদের মধ্যে বিভিন্ন অংশের দ্বন্দ্বে আপসহীন বিপ্লববাদীদের ভূমিকা জার্মানির উঠতি বুর্জোয়াদের ভীত ও শংকিত করেছিল। যে কারণে জার্মানির বুর্জোয়াশ্রেণী শুরু থেকেই একটা আপসকামী চরিত্র নিয়ে বিকশিত হচ্ছিল। এসব ঘটনাবলী জার্মানিতে একদল চিন্তাশীল মনীষীর জন্ম দিয়েছিল যাঁদের অন্যতম হেগেল-ফয়েরবাখ-শিলার-হাইনে। কার্ল মার্কস সেই উত্তাল সময়েরই ফসল।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী কার্ল মার্কসের চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, কাব্য-সঙ্গীত-সাহিত্য-নাটক-দর্শন-বিজ্ঞান প্রভৃতি মানবিক জ্ঞান ও চর্চার সমস্ত দিকে ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ ও আগ্রহ। কিন্তু সে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বজগতকে জানা ও বোঝার সংগ্রামের অংশ, যে জানাকে তিনি পাল্টানোর কাজে নিয়োজিত করেছেন। তাঁর ওই সংগ্রামের ভিত্তিতেই তিনি বলতে পেরেছিলেন, এযাবৎ দার্শনিকেরা শুধু জগতকে ব্যাখ্যাই করে গেছে, আসল কাজ হল তাকে পাল্টানো। আমাদের সামনেও তিনি সে শিক্ষাই রেখে গেছেন। তিনি বলেন, একদিকে তাঁর মধ্যে ছিল ভালোবাসার প্রবল শক্তি আর অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন দুর্দমনীয়ভাবে আপসহীন। গ্রহণ ও বর্জনের এই দ্বান্দ্বিক সংঘাতময় পথেই এই মহান মনীষীর জন্ম। নাম-যশ-অর্থ-বিত্তের লোভ বা কোনো ধরনের লোভের কাছে তিনি মুহূর্তের জন্য মাথা নত করেননি। তাঁকে সেদিন কতজন চিনতো? কতজন মানুষ সেদিন তাঁর চিন্তার অনুসারী হয়েছিল? অথচ এই মানুষটির চিন্তার ধারা আজ সারা দুনিয়ার বিপ্লবী সংগ্রামকে পথ দেখাচ্ছে।

কার্ল মার্কস ইতিহাসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী ব্যাখ্যার ভিত্তিতে মানবজাতির সামনে এ ঐতিহাসিক নিয়মটি তুলে ধরলেন যে মানবজাতির এযাবৎ লিখিত ইতিহাস হল শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। এই শ্রেণীসংগ্রামের শিকড় হল উৎপাদন ব্যবস্থায়। উৎপাদন ব্যবস্থা হল ভিত্তি, সমাজ হল তার উপরিকাঠামো। উৎপাদন ব্যবস্থার অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব যখন অনিরসনীয় হয়ে পড়ে তখন ওই দ্বন্দ্ব সমাজকে নাড়া দিতে থাকে, সমাজের মধ্যে পরিবর্তনের আকুতি তৈরি হয়। তখন যে শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহ সেই আকুতিকে ধারণ করতে পারে তারাই পরিবর্তনের বা বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়। কার্ল মার্কস দেখালেন, বর্তমান পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থায় সর্বহারাশ্রেণী অর্থাৎ শ্রমিকশ্রেণীই হল সেই শ্রেণী যে সামাজিকভাবে সবচেয়ে অগ্রসর, সবচেয়ে প্রগতিশীল। তাই তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন, শৃংখল ছাড়া সর্বহারাশ্রেণীর হারাবার কিছু নেই, জয় করবার জন্য রয়েছে সমগ্র জগৎ।

মানবমুক্তির জন্য সত্যকে খুঁজে বের করার প্রবল আকুতি থেকে মার্কস যেমন একদিকে জ্ঞানরাজ্যের সমস্ত শাখায় তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেছেন, ঠিক একইভাবে তিনি তর্ক-বিতর্কেও লিপ্ত হতেন প্রবলভাবে। শোষিতশ্রেণীর বিভিন্ন অংশের এবং পেটিবুর্জোয়াশ্রেণীর প্রতিনিধি যেসব বিপ্লবীরা সেদিন সংগ্রাম করছিলেন তাঁদের সাথে তিনি দিনের পর দিন বিতর্ক করেছেন, সামনাসামনি এবং লিখিতভাবে। একইভাবে তিনি বুর্জোয়াশ্রেণীর বিভিন্ন চিন্তার অসারতা ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, মার্কসকে স্মরণ করতে হলে তাঁর সহযোদ্ধা, কমরেড ইন আর্মস ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, তাঁর মহান শিষ্য ও বিশ্বসর্বহারাশ্রেণীর মহান নেতাদের নামও আমাদের স্মরণ করতে হয়। কমরেড লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সেতুং, শিবদাস ঘোষ প্রমুখ মহান মার্কসবাদীদের অবদানে মার্কসবাদী জ্ঞানভাণ্ডার ও বিপ্লবী আন্দোলন সমৃদ্ধ হয়েছে। যে শিক্ষাকে আয়ত্ত্ব ও আত্মস্থ করার মধ্য দিয়ে আমরা গোটা সমাজকে পাল্টানোর, একটি শোষণহীন বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংগ্রাম করে চলেছি।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments