সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের উদ্যেগে ২০ মে ২০১৫ ধান-গম-ভুট্টাসহ কৃষি ফষলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও সরকারি উদ্যোগে হাটে হাটে ক্রয় কেন্দ্র খুলে ধানসহ কৃষি ফসল ক্রয় করা, গ্রামীণ গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য আর্মি রেটে রেশন এবং উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দ করে কৃষকদের জন্য সরাসরি ভর্তুকি প্রদান ও সার-বীজ-কীটনাশক-ডিজেল সরবরাহ করে কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্নস্থানে ধান সড়কে ফেলে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ২০ মে সকাল ১১টায় রংপুর নগরীর সাতমাথায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। চাষীদের অবরোধে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক ও বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু’র সভাপতিত্বে অবরোধ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পলাশ কান্তি নাগ, আহসানুল আরেফিন তিতু, কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক আনোয়ারুল ইসলাম, বাবু মিয়া, নুর ইসলাম, ক্ষতিগ্রস্ত চাষী বাদশা মিয়া প্রমুখ।
সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে বেলা ১২টায় উপজেলার দারিয়াপুর হাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা ধান ও ভুট্টা রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং ধান-ভুট্টার বস্তা দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ সদস্য সচিব মনজুর আলম মিঠু, নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, কৃষক নেতা মাহাবুব রহমান খোকা, জাহেদুল ইসলাম, মোজাহেদুল ইসলাম রানু, গিদারী ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক গোলাম ছাদেক লেবু।
এছাড়া আজ বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁদপুর জেলা ফরিদগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের গোবিন্দপুর, বাকচান্দা ও গাঙগাটি বাজার-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এসব বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছর প্রতি মন ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৭০০-৭৫০ টাকা। অথচ বর্তমানে কৃষকদের বাধ্য হয়ে ৪০০-৪৫০ টাকায় প্রতি মন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার মন প্রতি ৮৮০ টাকা ধানের মূল্য নির্ধারণ করে ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও কোথাও কোনো ধান ক্রয় করেনি। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে কৃষকরা। প্রতি বছর এভাবে ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়াই যেন কৃষকের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কৃষকের উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বন্ধ্যা বীজ, ক্ষতিকারক সার ও কীটনাশকে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। অন্যদিকে ক্ষেতমজুরদের বছরে ৩ মাস কাজ থাকে বাকি ৯ মাস কোনো কাজ থাকে না। অনাহার অর্ধাহার প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের উৎস কৃষি। অথচ প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয় এই কৃষি খাত। এখানে বাজেট বরাদ্দ এতই সামান্য যা এই খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশাল জনগোষ্ঠির সঙ্গে তামাশা করার সামিল।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকার ঘোষিত মূল্যে ধান ক্রয়, গরিব মানুষের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা ও আর্মি রেটে রেশনিং, উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দ করে কৃষি ফসল উৎপাদন খরচ কমাতে সরকারি উদ্যোগে কৃষককে ভর্তুকী প্রদান এবং ক্ষেতমজুরদের জন্য বছরে ন্যূনতম ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প, পর্যাপ্ত টিআর, কাবিখা সহ সকল বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধী ও অসহায় নারীদের নুন্যতম ৩০০০/- টাকা মাসিক ভাতা প্রদানের দাবী জানান। তারা অপসংস্কৃতি অশ্লিলতা, যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য, মাদক জুয়া হাউজি বন্ধে কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ দাবি করেন।