Wednesday, May 1, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদঢাকায় নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিক্ষোভ

ঢাকায় নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিক্ষোভ

bnmc pic.JPG 2বিয়ের বয়স কমানোর টালবাহানা বন্ধ, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকদের প্রেরণ এবং বেতন-ছুটিসহ কাজের বিবরণী সুনির্দিষ্ট করে নিয়োগপত্র প্রদানের দাবীতে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ২১ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, সহ-সভাপতি সুলতানা আক্তার রুবি, সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন, দপ্তর সম্পাদক তাছলিমা নাজনীন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ৭ মার্চ’১৫ আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের ঠিক আগের দিন প্রথম আলো পত্রিকায় বিয়ের বয়স নিয়ে একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮, তবে পিতা-মাতা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ’বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪’ এর খসড়া আইনে এমন কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দিয়েছেন।
bnmc pic.JPG 3অন্যদিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে মেয়ের বিয়ের বয়স ১৬ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। একই সাথে তিনি মন্তব্য করেছেন – ‘‘তৃণমূলের অনেক বাবা-মা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য ঘুরছেন। আমার কাছে অনেকে আসছেন। মেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। বাবার বাড়ি আর ফিরবে না। ছেলের বাড়িতেও যেতে পারছে না। তখন বিয়ে ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।’’ প্রশ্ন হলো কত জন মেয়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে সেই পরিসংখ্যান কি প্রতিমন্ত্রী দিতে পারবেন? আর সরকারের একজন দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী হয়ে তিনি কি করে এই ধরণের ধৃষ্টাতাপূর্ণ উদাহরণ উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্য ঐ কিশোর বয়সের মেয়েদের মর্যাদা তথা নারীর মর্যাদাকেই ক্ষুন্ন করেছে। প্রতিমন্ত্রীর এই ধরণের বক্তব্য আমরা প্রত্যাখান করছি। একই সাথে বলতে চাই যে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের বয়স সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। জাতীয় শিশু নীতি ২০১৪তে শিশু বলতে ১৮ বছরের নিচের বয়সের শিশুকে বুঝানো হয়েছে। শিশু অধিকার সনদে একই কথা বলা হয়েছে। তাহলে বিয়ের বয়স নিয়ে সরকারের এই ধরণের টালবাহানা, যড়যন্ত্র কেন? নারী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ সকলেই ১৬ বছরের মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করাকে যখন অযৌক্তিক মনে করছে তখন সরকারের এই ধরণের সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারিতার সামিল। সরকারের এই স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত নারীর জীবনকে আরো বিপন্ন করবে, নারী নির্যাতনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করবে। শুধু বাহবা পাওয়ার জন্য বা বাল্যবিয়ের হার কম দেখানোর উদ্দেশ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
bnmc pic.JPG 5বক্তারা সৌদি আরবে নারী শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে বলেন, সৌদিআরব বাংলাদেশ থেকে এই বছর লক্ষাধিক শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গৃহপরিচারিকা ও গাড়িচালক এই দুই খাতে শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও প্রতিমাসে শুধু গৃহশ্রমিকই যাবে ১০ হাজার। বেতন মাত্র ৮০০ রিয়ালে যা বাংলাদেশী টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। এত অল্প বেতনে এই শ্রমিকদের সৌদআরবে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা-হয়রানি কি বন্ধ হবে? গৃহশ্রমিক হিসাবে নারীদের পাঠানোর পূর্বে পূর্ণ নিরাপত্তার বিষয়টি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন সেটি উপেক্ষিত। ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবে কর্মরত ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের ১৫০ জন গৃহকর্মীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে তাঁদের বেশিরভাগ নারী শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছেন। অন্যদেশে নারী শ্রমিকরা ঠিকমত বেতন ও ছুটি পান না। কিন্তু সৌদি আরবে নারী শ্রমিকরা শারীরিক নির্যাতন এমনকি ধর্ষণের শিকারও হয়েছে। উল্লেখিত (ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন) দেশসমুহ নির্যাতনের অভিযোগে শ্রমিকদের সৌদিআরব থেকে শ্রমিক প্রত্যাহার করেছে। সেজন্য নারী শ্রমিকদের সৌাদি আরবে পাঠাতে হলে তার পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বেতন-ছুটিসহ কাজের বিবরণ সুনির্দিষ্ট করে শ্রমিকদের প্রেরণ করতে হবে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments