বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ১৩ দফা দাবি নিয়ে সারাদেশের জেলায় জেলায় প্রচারপত্র বিলি, প্রচারমিছিল, পথসভা ও সভার মাধ্যমে ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল ‘দাবি সপ্তাহ’ পালন করছে। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ২৫ এপ্রিল ২০১৯ প্রচার মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি তোপখানা রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে পল্টন, জিপিও, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান মোড়, বায়তুল মোকাররম হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। প্রচার মিছিল চলাকালে কর্মীরা রাস্তার দু’পাশে প্রচারপত্র বিলি করেন। পথচারী, দোকানপাটের ব্যবসায়ী-কর্মচারী, বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা অফিসফেরত চাকুরীজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ এই দাবিগুলোকে সমর্থন জানান। মিছিলটি বায়তুল মোকাররমের পাশের রাস্তায় ঢোকার পর দু’পাশের হকাররা করতালি দিয়ে মিছিলটিকে অভ্যর্থনা জানান। গুলিস্তান মোড়ে ও বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তারা পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের তীব্র প্রতিবাদ জানান। হকার ও সাধারণ মানুষরা ব্যাপকহারে এই পথসভা দুটিতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর পল্টন মোড়ে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রচার মিছিলটি শেষ হয়।
পথসভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখার সংগঠক কমরেড নাঈমা খালেদ মনিকা, কমরেড সীমা দত্ত, কমরেড রাজু আহমেদ, কমরেড জয়দীপ ভট্টাচার্য, কমরেড মাসুদ রানা ও কমরেড রাশেদ শাহরিয়ার। প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য কমরেড আ.ক.ম. জহিরুল ইসলাম।
সমাবেশগুলোতে বক্তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ নির্বাচনের নামে একটি নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ‘উন্নয়ন’-এর নামে বাস্তবে দেশে চলছে লুটপাটের রাজত্ব। কিছু ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। দেশের আয় বাড়ার দাবি যতই সরকার করুক, মধ্যবিত্ত-গরীব-নিম্নবিত্তরা জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। এর ওপর সরকার গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন-ফি বাড়ছে, প্রতিবছর বাড়ছে বিদ্যুৎ-পানি-তেলের দাম। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ, ঢাকা শহরে বাড়িভাড়ায় চলে যায় বেতনের বড় অংশ। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেসরকারিকরণের জন্য চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এর উপর শহরে জলাবদ্ধতা, যানজট, বিশুদ্ধ পানির সংকট, যানবাহনের অভাব ও উচ্চ ভাড়া। ঘরের মেয়েদের নিয়ে প্রতিটি পরিবার সবসময় শঙ্কায় থাকেন। দেশে অব্যাহতভাবে বাড়ছে নারীর উপর সহিংসতা ও নির্যাতন। যৌন নিপীড়নের বিচার চাওয়ায় সোনাগাজিতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বর্বরতা সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে।
একদিকে শহরের বাজারে মধ্যবিত্ত আগুন দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনছে। অন্যদিকে গ্রামের কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় বসেছে। প্রতিদিন সব হারিয়ে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসছে হাজার হাজার লোক। সস্তা দরে তারা শ্রম বিক্রি করছে। গ্রামের ছোট চাষী, ভাগচাষী, ক্ষেতমজুর থেকে শুরু করে শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকানকর্মচারী কিংবা চা বিক্রেতা সবাই ঋণের চক্রে বন্দী। সপ্তাহের শেষে কিস্তি পরিশোধের আতঙ্ক তাদের তাড়া করে বেড়ায়। গার্মেন্টসে চাকরি করা ৪০ লক্ষ শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত খাটে, মজুরি যা পায় তাতে সংসার চলে না। শিপমেন্টের সময়ে তাদের সাপ্তাহিক ছুটিও থাকে না। বকেয়া মজুরির দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য, পিইসি পরীক্ষা বাতিল, নারীদের উপর নিপীড়ণ বন্ধ করাসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। বক্তারা ঢাকা নগরীর যানজট, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদির বিরুদ্ধে এই প্রচার সপ্তাহে জনমত গড়ে তোলার আহবান জানান।