Thursday, March 28, 2024
Homeফিচারগণতন্ত্র ও মানুষের মত বাঁচার দাবিতে সংগঠিত হোন — বাসদ (মার্কসবাদী)

গণতন্ত্র ও মানুষের মত বাঁচার দাবিতে সংগঠিত হোন — বাসদ (মার্কসবাদী)

২৪ – ৩০ এপ্রিল দাবি সপ্তাহের ডাক

ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান!

বাসদ-মার্কসবাদী৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ নির্বাচনের নামে একটি নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ‘এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিগিং’ করে আগের রাতেই বেশিরভাগ ভোট দিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন-পুলিশ-নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় এই ভোটডাকাতির নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের ‘ভূমিধস’ বিজয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সরকার জনমনে নৈতিক বৈধতা পাবে না। চলমান নিপীড়নমূলক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকে তা তীব্রতর করবে। ‘উন্নয়ন’-এর নামে বাস্তবে দেশে চলছে লুটপাটের রাজত্ব। কিছু ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। তাই, নিজেদের অধিকার রক্ষায় মানুষকে সংগঠিত হতে হবে ও আন্দোলনে নামতে হবে।

দেশের আয় বাড়ার দাবি যতই সরকার করুক, মধ্যবিত্ত-গরীব-নিম্নবিত্তরা জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। এর ওপর সরকার গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন-ফি বাড়ছে, প্রতিবছর বাড়ছে বিদ্যুৎ-পানি-তেলের দাম। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ, ঢাকা শহরে বাড়িভাড়ায় চলে যায় বেতনের বড় অংশ। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেসরকারিকরণের জন্য চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এর উপর শহরে জলাবদ্ধতা, যানজট, বিশুদ্ধ পানির সংকট, যানবাহনের অভাব ও উচ্চ ভাড়া। ঘরের মেয়েদের নিয়ে প্রতিটি পরিবার সবসময় শঙ্কায় থাকেন। দেশে অব্যাহতভাবে বাড়ছে নারীর উপর সহিংসতা ও নির্যাতন। যৌন নিপীড়নের বিচার চাওয়ায় সোনাগাজিতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বর্বরতা সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে।

একদিকে শহরের বাজারে মধ্যবিত্ত আগুন দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনছে। অন্যদিকে গ্রামের কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় বসেছে। প্রতিদিন সব হারিয়ে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসছে হাজার হাজার লোক। সস্তা দরে তারা শ্রম বিক্রি করছে। গ্রামের ছোট চাষী, ভাগচাষী, ক্ষেতমজুর থেকে শুরু করে শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকানকর্মচারী কিংবা চা বিক্রেতা সবাই ঋণের চক্রে বন্দী। সপ্তাহের শেষে কিস্তি পরিশোধের আতঙ্ক তাদের তাড়া করে বেড়ায়। গার্মেন্টসে চাকরি করা ৪০ লক্ষ শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত খাটে, মজুরি যা পায় তাতে সংসার চলে না। শিপমেন্টের সময়ে তাদের সাপ্তাহিক ছুটিও থাকে না। বকেয়া মজুরির দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। আর এক অংশ আছে যারা প্রতিদিন কোন কাজ পায় না, কিছু পেলে করে, না পেলে খাওয়াও জুটে না। তারা অনেকে থাকে ফুটপাতে-রাস্তায়-স্টেশনে।

এই অবস্থার পরিবর্তনে লড়াই ছাড়া কোন পথ নেই। এই ফ্যাসিবাদী সরকার শুধু নয়, তার পেছনে থাকা এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে হবে। আমাদের দল বাসদ (মার্কসবাদী) গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও দেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রসমাজ-পেশাজীবীসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে একদিকে জনগণের ন্যায্য দাবি আদায় করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠবে। এই সংগ্রামে আপনার অংশগ্রহণ ও সমর্থন কামনা করছি।

আশু দাবি
১. ৩০ ডিসেম্বরের ভোটডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে সকল গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ গঠন করে তার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চাই।

২. স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান চাই। দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বিচারবহির্ভূত আটক-হত্যা, গুম-ক্রসফায়ার বন্ধ করতে হবে। মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা চলবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল চাই। বিচারবিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত ও প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ করতে হবে। প্রশাসন-পুলিশসহ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন-এর অগণতান্ত্রিক প্রথা বাতিল করতে হবে।

৩. দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে। কালো টাকার মালিক-অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপী-ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেপ্তার, আয়ের সাথে সঙ্গতিবিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৪. গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা ঞঈই-কে সক্রিয় করা, গরীব-মধ্যবিত্তের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করতে হবে। রেল-বিআরটিসিসহ সরকারি গণপরিবহন বিস্তৃত করতে হবে। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে অল্প ভাড়ায় বহুতলবিশিষ্ট আবাসন প্রকল্প বা কলোনী নির্মাণ করতে হবে। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর কর।

৫. শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরী ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক-শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন প্রণয়নও সকলক্ষেত্রে বাস্তবায়ন চাই।

৬. কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হাটে হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চাই। খাদ্যশস্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে। ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজ ও রেশন চাই। ভূমিহীনদের খাস জমি বরাদ্দ দিতে হবে। কৃষিঋণ মওকুফ ও সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, এনজিও ও মহাজনী ঋণের হয়রানী বন্ধ কর। সেটেলমেন্ট অফিসের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ কর।

৭. শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ চাই। বেকারদের নাম তালিকাভুক্ত করে কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে বেকার ভাতা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় শূণ্যপদে নিয়োগ ও সরকারি চাকুরীতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।

৮. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে দোষীদের দ্রæত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মাদক, পর্ণোগ্রাফী ও জুয়া নির্মূল কর। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন চাই।

৯. শিক্ষা বাণিজ্য ও প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে হবে। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল চাই। চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অধীনে প্রত্যেক নাগরিকের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা-আক্রমণের ঘটনাসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে।

১১. ভারতের কাছ থেকে তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চাই না। রামপালে সুন্দরবন ধ্বংসকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে হবে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎপ্রকল্প চাই না।

১২. আভ্যন্তরীণ নদী বাঁচাও, নৌ-পরিবহন ও মাছ-পানি-পরিবেশ রক্ষা কর। প্রজনন মৌসুমে নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সকল মৎস্যজীবীকে সরকারি খাদ্য ও অর্থসহায়তা দিতে হবে। মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধ কর।

১৩. নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করে ড্রাইভারদের নিয়োগপত্র, মাসিক বেতন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সবেতন ছুটি ও প্রশিক্ষণ চাই। লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। সড়ক পরিবহন খাতে মুনাফালোভী বাস মালিক-সরকারি দল সমর্থিত চাঁদাবাজ মাফিয়া ও শ্রমিকনেতা-ঘুষখোর পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা সিÐিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে।

কর্মসূচি
২৪-৩০ এপ্রিল ২০১৯ : দাবি সপ্তাহ
এলাকায় এলাকায় প্রচার-গণসংযোগ, মিছিল, হাটসভা, পথসভা, পদযাত্রা, সমাবেশ

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments