শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১টায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪’ এর খসড়া আইনে বিয়ের বয়স কমানোর নির্দেশনা বাতিল ও ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের ঢাকা নগর শাখার সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত, ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা নাজনিন সুরভী, সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা ও ফাহিমা কানিজ লাভা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সমাজ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের সরকার দেশের জনগণকে অন্ধকার যুগে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি সরকার বাল্যবিবাহের বয়স কমানোর বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা এরই একটি নমুনা। ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ সরকার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ করেছিল। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বয়স আরো বাড়িয়ে ২৫ করা যায় কিনা। সেখানে সরকার প্রধানের বিয়ের বয়স ১৬ করার নির্দেশনা গণতান্ত্রিক মুক্তমনা সকল মানুষকে হতবাক করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও সরকার দলীয় জোটের নেত্রীরা মরিয়া হয়ে সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অযৌক্তিক ও হাস্যকর তথ্য উপস্থাপন করছেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন ২০১৩ সালে এই সরকার যে শিশু আইন করেছে সেখানে শিশুর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮, আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে শিশুর বয়স বলা হয়েছে ১৮ যা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করেছে। কিন্তু তারপরও কেন এই বয়স নিয়ে তালবাহানা! গত ১৩ সেপ্টেম্বর ’১৪ দৈনিক প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সারা বিশ্বে তৃতীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে প্রথম। গার্ল সামিট থেকে ফিরে এসে এই ধরনের প্রতিবেদন সরকারকে বিব্রত করেছে। তার হাত থকে রক্ষা পেতে সরকার দেশের নারীদের আরো পিছিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সমাবেশে বলা হয়, বাল্যবিবাহ কিংবা ১৮ বছরের মধ্যে বিবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েরা। কারণ তাকে গর্ভধারণ করতে হয়। ফলে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ে, মা জরায়ু ক্যান্সারে ভোগে, রক্তশূন্যতা, পুষ্টিহীনতা বাড়ে, মা ও শিশু মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ তো গেল শারীরিক বিষয়। ১৮ বছরের আগে কোনো মানব শিশু মানসিকভাবে কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে না। তাহলে তাদের কেন এমন একটি বিপজ্জনক পরিবেশে ঠেলে দেওয়া?
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে কেন বাল্যবিবাহ বাড়ছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার-গবেষণা হয়েছে। তাতে যে তথ্য বেরিয়েছে তা হল দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা-কুসংস্কার, অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফির বিস্তার ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিবাহ কমাতে হলে সরকারের উচিত হবে এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কথা বলে ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, কুসংস্কার , পশ্চাৎপদতাকে বৃদ্ধি করছে। সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে, সরকার মৌলবাদী চিন্তার কাছে আত্মসর্মপণ করছে। আর তা যদি হয়, সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান ও সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাতিল করে বাল্যবিবাহের হার কমানোর যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা বিধান করার জন্য আহ্বান জানান।