Saturday, December 21, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই, চলছে লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই, চলছে লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য

finial coverবেশ কিছুদিন বন্ধের পর আজ শাওনের ক্যাম্পাস খুলবে। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আবার সেই চাপ – ক্লাস-পরীক্ষা, কয়েক হাজার টাকা সেমিস্টার ফি। এইতো সে দিন সেমিস্টার ফি দিতে গিয়ে বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হলো। নানান কথা ভাবতে ভাবতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এলো। গেটের সামনে আসতেই দেখলো তার বন্ধুরা জটলা পাকিয়ে আছে। জিজ্ঞেস করতেই বলল, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস হওয়ায় ইউজিসি’র (ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন) কালো তালিকা ভুক্ত হয়েছে। যে কোন সময় বন্ধ ঘোষণা এমনকি সনদ বাতিল হতে পারে। শাওনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অসহায়ের মতো চারপাশ দেখছে আর ভাবছে… স্বপ্ন ছিল একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। সর্ব্বোচ্চ গ্রেড পয়েন্ট পেয়েও আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সেশনজটে জীবন আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। শাওন পরিবারের বড় ছেলে। শিক্ষাজীবন দ্রুত শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে হবে তাকে। তাই শেষ সম্বলটুকু দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আর এখন পড়ার খরচ চালাতে চারটা টিউশন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে বা সনদ বাতিল হলে সে কোথায় যাবে? গল্পটা হয়তো কাল্পনিক। কিন্তু খুঁজলে এরকম ঘটনা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর জীবনেই পাওয়া যাবে।

১৯৯২ সালে একটি আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২২ বছর পর আজ বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯টি। আরও অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে বিস্তৃত  ক্যাম্পাস, উন্নত গবেষণাগার, লাইব্রেরি-সেমিনার, আবাসিক হল, পর্যাপ্ত শিক্ষক, ক্লাসরুম, খেলার মাঠ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, জিমনেসিয়াম, গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থীকে দেহ-মনে বিকশিত করতে এই আয়োজনগুলোর প্রয়োজন হয়। এগুলো না থাকলে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বীকৃত হতে পারে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই এই আয়োজনগুলো নেই। এরকম ভয়াবহ গলদ নিয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে। অথচ প্রতিবছরই এখানে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ কি?

Pic 4-2পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সীমিত আসন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটসহ শিক্ষা আয়োজনের ভয়াবহ পরিস্থিতি – এই দুই সংকটে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় সোয়া তিন লক্ষ। শিক্ষার্থীরা লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এখানে পড়াশুনা করতে বাধ্য হয়। যদিও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়, অস্থায়ী ক্যাম্পাস, অস্থায়ী শিক্ষক, উপাচার্য-উপ উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষবিহীন প্রশাসন, নিয়মনীতিহীন শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা লাগামহীনভাবে চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং করার কথা University Grants Commission (UGC), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাইভেট  ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। সম্প্রতি টিআইবির গবেষণায়  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৪ ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এগুলো উঠে এসেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ বলা আছে, অনুমোদন লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ীভাবে ন্যূনতম এক একর পরিমাণ নিষ্কণ্টক অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামোয় ক্যাম্পাস স্থাপন করতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠার পাঁচবছর হয়ে যাওয়ার পরও ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে মাত্র ১৫টি। ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় ১২ বছর অতিক্রম করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এই ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত পূরণ করে এখন স্থায়ী সনদ নেয়ার কথা ছিল কিন্তু স্থায়ী সনদ নিতে পেরেছে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। (প্রথম আলো, ৯ আগস্ট’১৪)

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো বলতে কিছু নেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিএনজি স্টেশন, ডির্পাটমেন্টাল স্টোর ও হোটেল রেস্টুরেন্ট এর উপর ভাড়া করা একটি বিল্ডিং। অলি-গলিতে যত্র তত্রই এর ক্যাম্পাস। শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস খোলার নিয়ম নেই। অথচ দারুল ইহসান নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস আছে ১৪০টি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই কেবল ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে আইন অমান্য করে শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়মের অন্যতম জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয় মালিকানার শেয়ার নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন কারণে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের পাল্টাপাল্টি মামলা। এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত এমন ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের এডভোকেটশীপ পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে আইন বিভাগের সার্টিফিকেট নিয়ে পড়েছে বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রসমাজের অজ্ঞাতসারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনিয়ম-দুর্নীতি করে অবৈধভাবে ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবসার পসরা সাজিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। শিক্ষামন্ত্রী এসব সমস্যা স্বীকার করলেও কার্যত আলটিমেটামের মধ্যেই তার দায়িত্বের দৌঁড়। নানা অনিয়ম আর দ্বন্দ্বের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় যখন বন্ধ ঘোষণা করা হয় তখন এই শিক্ষার্থীদের কি পরিস্থিতি হয় – সরকার বাহাদুর কি একবার ভেবে দেখেছেন? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? শুধু মাত্র বন্ধ ঘোষণা করে এর দায় এড়ানো যাবে না।

একটা সময় ছিল যখন এদেশে শিক্ষানুরাগীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামাজিক কল্যাণে স্কুল কলেজ গড়ে উঠেছিল। লক্ষ্য ছিল শিক্ষা বিস্তার। যুগের পরিবর্তনে উদ্দেশ্যের ভিন্নতায় বর্তমানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানেই হাজার কোটি টাকার মুনাফা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে এ সত্য কথাটি বলে বোঝানোর দরকার নেই। কি পরিমাণ শিক্ষা ব্যবসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয় তা বোঝা যায় একটা হিসেবে থেকে – গত ২০১২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ব্যবসার উদ্দেশ্যে পরিচালিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মৌলিক বিষয়সমূহ যেমন- বাংলা, দর্শন, ইতিহাস, পদার্থ, রসায়ন ইত্যাদি প্রায় পড়ানোই হয় না। ইউজিসি’র সর্বশেষ বার্ষিক রির্পোট বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পড়ছে ব্যবসা প্রশাসনে। নিরাপদ বাণিজ্যের অন্যতম ক্ষেত্র বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। দেশে এখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৫৭টি। ভর্তি ফি গড়ে ১৫ লাখ টাকা। বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে গড়ে ভর্তি ফি সাড়ে চার লাখ টাকা। এছাড়া দেখা গেছে, কলেজগুলো ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা ও শর্তাবলী পূরণ না করায় শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। যেমন গত ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে আইএএইচএসে ভর্তি করা ১৭৭ জন শিক্ষার্থীকে বিএমডিসি থেকে ছাত্র রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষেও ছাত্র রেজিস্ট্রেশন দেয়নি। কিন্তু ছাত্রদের অজ্ঞাতসারে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও বন্ধ করেনি প্রশাসন। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন না থাকায় দুই শিক্ষাবর্ষের প্রায় আটশতাধিক শিক্ষার্থী বেকাদায় পড়লেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যাথা নেই। এই হলো বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা!  সরকারি নিয়মে আছে, একটি মেডিকেল কলেজের অনুমতি পেতে হলে কলেজ ক্যাম্পাসের পর্যাপ্ত জায়গা, নিজস্ব হাসপাতাল, একাডেমিক ভবনে লেকচার থিয়েটার, টিউটোরিয়াল কক্ষ, অডিটোরিয়াম, পরীক্ষার হল, লাইব্রেরি, কমন রুম এবং খেলার মাঠ থাকতে হবে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেলসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা থাকতে হয়। এসব তো দূরে থাক ন্যূনতম শর্ত পূরণ ছাড়াই অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে নাম সর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “যতটুকু অত্যাবশ্যক কেবল তাহারই মধ্যে কারারুদ্ধ হইয়া থাকা মানবজীবনের ধর্ম নহে। আমরা কিয়ৎপরিমাণে আব্যশক- শৃঙ্খলে বন্ধ হইয়া থাকি এবং কিয়ৎপরিমাণে স্বাধীন। আমাদের দেহ সাড়ে তিনহাতের মধ্যে বদ্ধ, কিন্তু তাই বলিয়া ঠিক সাড়ে তিন হাত পরিমাণ গৃহ নির্মাণ করিলে চলে না। স্বাধীন চলাফেরার জন্য অনেকখানি স্থান রাখা আবশ্যক, নতুবা আমাদের স্বাস্থ্য এবং আনন্দের ব্যাঘাত হয়। শিক্ষা সম্বন্ধে এই কথা খাটে। হাওয়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে; কিন্তু আহারটি রীতিমত হজম করিবার জন্য হাওয়া খাওয়া দরকার।” কিন্তু সেই হাওয়া চলাচলের দরজা জানালা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে নেই। উপরন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ছাত্রদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক কর্মকা-, ছাত্ররাজনীতি করার অধিকার হরণ করেছে। শুধুমাত্র পরীক্ষা আর ক্লাসে বন্দি জীবন মানবিক বিকাশের অন্তরায়। চাকুরীমুখী পড়া, উচ্চমূল্যের আর্থিক চাপ আবার শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছাত্রজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক সর্ম্পক ক্রেতা-বিক্রেতার সর্ম্পকে পরিণত হয়েছে। সার্টিফিকেট বা কেবল পাশ করার লক্ষ্যে অর্জিত শিক্ষা মানবিক গুণাবলী বিকাশের পরিবর্তে আতœকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদী মানসিকতা বাড়িয়ে তুলছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণনীতির রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে একটা সত্যিকার শিক্ষা রক্ষার আন্দোলন গড়ে তোলা এবং গোটা সমাজব্যাপী মনুষ্যত্ব ধ্বংসের সকল আয়োজনের বিরুদ্ধে এদেশের প্রগতিশীল, সমাজ সচেতন ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে মতামত তৈরি করার মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

অনুশীলন : অক্টোবর ২০১৪ || সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments