ভিক্ষা দাও! পুরবাসী ভিক্ষা দাও। তোমাদের একটি সোনার ছেলে ভিক্ষা দাও। আমাদের এমন একটি ছেলে দাও, যে বলবে আমি ঘরের নই, আমি দেশের।
ওগো তোমরা চেয়ে দেখ সর্বনাশ আমাদের বুকের উপর চেপে বসে আছে। কোটি কোটি লোক দুমুঠো ভাতের জন্য হা হা করে ছুটছে। ওগো ঐ দেখো কোটি কোটি ভাই আধপেটা খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। তোমাদের বুকে হাত দিয়ে দেখ সেখানে আর প্রাণ নাই, তোমাদের হৃদয়ে অনুভব করে দেখ সেখানে আর বল নাই। ওগো বলি চাই। বলি চাই। তোমাদের একটি ছেলে বলি চাই।
ওগো সংসারী। কোথা যাও। তুমি কি সুখ পেয়েছ? পদে পদে অভাব আর অধীনতায় আহত হয়ে তুমি এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পেয়েছ? ওগো! তুমি ত শান্তি পাবে না। তুমি তো যুদ্ধে তোমার ছেলে দাও নাই। ওগো ভিক্ষা দাও, একটি সোনার ছেলে ভিক্ষা দাও।
ওগো পূজারী কোথায় অর্ঘ্য দিতে চলেছ? বুকে বুকে দেবতার তপ্ত শ্বাস হু হু করে বয়ে যায় – তুমি কার কাছে ডালি নিয়ে যাও। ও কী নিয়ে যাচ্ছ তুমি! ফুল আর পাতায় তোমার দেবতা কি তুষ্ট হবেন? বুকে তার তীব্র জ্বালা চোখে তার হিংস্র বহ্নি। ওগো সে তো ফুল পাতা চায় না, সে চায় কাঁচা তাজা প্রাণ। ওগো বলি দাও – বলি দাও।
ওরে তরুণের দল! একবার ফিরে দাঁড়াও।
কোথা যাও অন্ধের মত, কোথায় চলেছ তোমরা? ঐ যে চাষীর শত শত রক্ত-প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে তাদের দলিত করে কোন উন্নতির দিকে ছুটে চলেছ? তোমার বুকের ভিতর যে দেবতা গুমরে গুমরে কেঁদে উঠছে তার কণ্ঠরোধ করে কোন মায়াবীপুরের দিকে চলেছ? কান পেতে শোন কাদের কান্নার ধ্বনি আকাশে পাতালে ধ্বনিত হচ্ছে। তোমরা কি তোমাদের অলস বাঁশি দূর করে দেবে না? চোখ মেলে দেখ, সব গেল, সব গেল। তিল তিল করে সব যে শেষ হয়ে গেল। ওগো তরুণের দল, তোমাদের ভিতর কি এমন লক্ষ্মীছাড়া কেউ নেই – যে বলে, আমি তিল তিল করে বাঁচবো না। আমি ঘরের মায়ায় ভুলব না, ঘর আমার স্থান নয়, ঐ কাঁটাবন আমার ঘর, দুঃখ দারিদ্র আমার সম্পত্তি, মৃত্যু আমার পুরষ্কার। তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন নেই – যে এই ভীষণ আঁধারে নিজের বুকের আগুন জ্বেলে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়? তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই – যে বলতে পারে আমি আছি, সব মরে গেলেও আমি বেঁচে আছি, যতক্ষণ আমার প্রাণে ক্ষীণ রক্তধারা বয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তা দেশের জন্য পাত করব। ওগো তরুণ, ভিক্ষা দাও, তোমার কাঁচা প্রাণ ভিক্ষা দাও।
ওরে তরুণের দল! একবার বুকে হাত দিয়ে বল দেখি একবারও কি এ নাগপাশ ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়নি? একবারও কি এই জগদ্দল পাথর ঠেলে ফেলতে ইচ্ছা হয়নি? ওরে ওঠ, ওরে তোরা ওঠ, দূর করে দে জড়তা, ছিঁড়ে ফেলে দে বন্ধন। হৃদয় থেকে কোমলতা দূর করে দে। শয়তানের হিংসা নিয়ে শত্রুর পানে একবার ছুটে চল। বিশ্বের গরল প্রাণে ঢেলে দে। তোরা বিশ্বময় বিষ ছড়িয়ে দে, সুখের সংসার পুড়ে ছাই হয়ে যাক। অত্যাচার ! অত্যাচার ঐ দেখ অত্যাচার কী ভীষণ মূর্তি ধরে বসেছে। ধনী তার ধন নিয়ে, বলবান তার লাঠি নিয়ে, কাজী আর প-িত তার শাস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা করার কী ভীষণ চেষ্টা করছে। ঐ শোন তাদের তা-ব চিৎকার। ঐ দেখ কী বিকট মূর্তি।
কে আছ বীর, তার টুঁটি ধরে মারতে পারো। কে আছ, দুঃসাহসী, তার সহস্র ফণা নিয়ে খেলতে পারো। কে আছ নাস্তিক, কে আছ হিংসুক, কে আছ বিদ্রোহী, এসো। কে আছ তরুণ, কে আছ পাগল, ভিক্ষা দাও, তোমার মাতাল প্রাণটি ভিক্ষা দাও।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্মরণিকা