বাসদ-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা
৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং রাশিয়ায় মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৭তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষেএক আলোচনা সভা ৮ নভেম্বর শনিবার বিকাল ৪টায় ২২/১ তোপখানা রোডস্থ বাসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং মূল আলোচনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমরেডস মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায়, ফখরুদ্দিন কবির আতিক।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথম শ্রমিকশ্রেণীর রাষ্ট্র ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যক্তি মালিকানার অবসান ঘটিয়ে সম্পত্তির সামাজিকীকরণ এবং ব্যক্তি মালিকের মুনাফার পরিবর্তে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে পরিচালিত পরিকল্পিত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার ফলে মাত্র ২০ বছরের মধ্যে পশ্চাদপদ রাশিয়া অগ্রসর শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছিল। কৃষিতে যৌথীকরণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা হয়েছিল, সকলের জন্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভিক্ষাবৃত্তি-পতিতাবৃত্তি-বেকারত্বের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করা হয়েছিল। সামাজিক অপরাধ বহুলাংশে কমে এসেছিল, রাশিয়ায় দীর্ঘকালব্যাপী চলে আসা জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে সকল জাতি-সম্প্রদায়-ভাষার গণতান্ত্রিক অধিকার ও বিকাশ নিশ্চিত করা হয়েছিল, জনসাধারণের সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নের জন্য শিল্প-সাহিত্য-খেলাধুলার চর্চাকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিল। এসব দেখে রবীন্দ্রনাথের মতো মানবতাবাদী সাহিত্যিক বলেছিলেন, ‘রাশিয়ায় না এলে আমার এ জন্মের তীর্থ দর্শন অসমাপ্ত থাকতো’।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরো বলেন, “সমাজতন্ত্র মানব সভ্যতাকে এক নতুন উচ্চতায় তুলেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে সংশোধনবাদী নেতৃত্বের দ্বার দিকভ্রান্ত হয়ে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। কমরেড স্ট্যালিন এবং কমরেড মাও সেতুঙ-এর জীবদ্দশাতেই কমরেড শিবদাস ঘোষ বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের অভ্যন্তরে যান্ত্রিক চিন্তাপদ্ধতি ও তত্ত্বগত মানের দুর্বলতার দিকে বারং বার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর সংশোধনবাদী ক্রুশ্চেভ-চক্রের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম পরিচালনার মধ্য দিয়ে কমরেড শিবদাস ঘোষ আধুনিক সংশোধবাদকে মোকাবেলা করার আদর্শগত হাতিয়ার বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের সামনে রেখে গিয়েছেন। কমরেড শিবদাস ঘোষের রেখে যাওয়া এই শিক্ষাকে পাথেয় করেই জাসদের অভ্যন্তরে মতাদর্শিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে ১৯৮০ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী দল হিসেবে বাসদ আত্মপ্রকাশ করে।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং আগামী ২০-২৩ নভেম্বর দলের বিশেষ কনভেনশন সফল করার জন্য সকলের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
রংপুর
মহান রুশ বিপ্লবের ৯৭ তম বার্ষিকী ও বাসদের ৩৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ৭ নভেম্বর বিকেল ৫ টায় সাম্যবাদ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বতৃতা করেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ , লেখক ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান নাসিম, শামছুল আলম বাদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, কামমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি আবু রায়হান বকসি।
নেতৃবৃন্দ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ-দুঃশাসন, সাম্প্রদায়িকতা, দূর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলার সংগ্রামে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সর্মথক ও দরদীদের ব্রতী হওয়ার আহবান জানান।
একই সাথে ২০-২৩ নভেম্বর’ ১৪ মহানগর নাট্যমঞ্চ ঢাকায় পার্টির কেন্দ্রীয় বিশেষ কনভেনশন সফল করার জন্য সর্বস্তরের জনগনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
চট্টগ্রাম
মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৭তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি চট্টগ্রাম জেলা শাখা নগরীতে মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করে। বটতলী পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সচিব কমরেড অপু দাশ গুপ্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য শফিউদ্দীন কবির আবিদ, জেলা সহযোগী ফোরাম সদস্য কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদাউস পপি। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা নিজাম উদ্দীন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার মধ্যদিয়ে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যতটুকু অবশেষ দেশে ছিল তাও ধ্বংস করেছে। ৪৩ বছরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পাটর্ি-জামায়েতের দুঃশাসনে জনগণ অতীষ্ঠ। এ দেশে শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না। কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, যুবকদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, ছিন্নমূল বস্তিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে মালিক শ্রেণীর মুনাফার পাহাড় দিন দিন বিশাল হচ্ছে। এই সবই পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থার ফলাফল। তাই নীতিনিষ্ঠ বামপন্থীদের নেতৃত্বে জনগণের অধিকার আদায়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে এই সমাজব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করতে হবে। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ার শ্রমিকশ্রণীর বিপ্লব এই লড়াইয়ে আমাদের পথ দেখাবে।
সিলেট
৭ নভেম্বর মহান রুশ বিপ্লবের ৯৭তম বার্ষিকী ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষ্যে ৮নভেম্বর ২০১৪ শনিবার বিকাল ৩:০০টায় কোর্ট পয়েন্টে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি সিলেট জেলার উদ্যোগে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পূর্বে একটি মিছিল সিলেটের শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে সমাবেশে মিলিত হয়।
বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি সিলেট জেলার সদস্য এ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েবের সভাপতিত্বে এবং সুশান্ত সিনহার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি সিলেট জেলার সদস্য মুখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সংগঠক মহীতোষ দেব মলয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা, শাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক অনীক ধর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহাজোট সরকার তাদের ভাষায় একের পর এক ‘সাফল্য’ ও ‘কৃতিত্ব’ প্রদর্শন করে চলেছেন এবং এই সাফল্যের সার্টিফিকেট তারা বিদেশীদের কাছ থেকে নিয়ে আসতে ব্যস্ত। কিন্তু সরকারের এ উন্নয়নে জনগনের জীবন বিপর্যস্ত। মহাজোট সরকার আবারো আবাসিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি, সিদ্ধন্ত নিচ্ছে ডিজেল-কেরোসিন ও বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ গাড়িভাড়া -বাড়িভাড়া সমস্ত কিছুরই দাম বাড়বে। দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘটেছে চরম অবনতি। খুন-অপরাধ-অপহরণ, নারী নির্যাতন- ধর্ষণ বাড়ছে ব্যাপক মাত্রায়। আবার এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধনী- গরিব বৈষম্য, কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে সমস্থ সম্পদ। আর এর বিরুদ্ধে যাতে কোন আন্দোলন গড়ে না উঠে তার জন্যে সম্প্রচার নীতিমালার নামে মিডিয়ার কন্ঠরোধ করা হচ্ছে, বিচারপতিদের আপসারণের ক্ষমতা তুলে দেয়া হয়েছে সংসদের হাতে যা চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদের নামান্তর। বক্তারা বলেন, পুঁজিবাদী সমাজের এই আনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে আজ থেকে ৯৭বছর আগে মহান লেনিনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া। যা গোটা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের সামনে এই উজ্জ্বল শিক্ষা। তাই মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষাকে পাথেয় করে আমাদের দেশেও পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শোষন লুন্ঠনের বিরুদ্ধে কার্যকর গণআন্দোলন গড়ে তুলার আহ্বান জানান বক্তারা।