Tuesday, December 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদরোকেয়া দিবসের ডাক — অবমাননা-কূপমণ্ডুকতা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগঠিত হোন

রোকেয়া দিবসের ডাক — অবমাননা-কূপমণ্ডুকতা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগঠিত হোন

IMG_2973[dropcap]৯[/dropcap] ডিসেম্বর ২০১৪ ছিল নারী জাগৃতির পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার ১৩৪ তম জন্মবার্ষিকী ও ৮২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ওই দিন সকাল ৮টায় শোভাযাত্রা সহ রোকেয়া হল প্রাঙ্গনে রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তাবক অর্পন করা হয়। পুষ্পার্পন শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুলতানা আক্তার রুবী ও সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আগামী ১৩ ডিসেম্বর বিকাল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর এই দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ নারীমুক্তির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে এক প্রচার পত্র।

প্রচার পত্রে রোকেয়ার পরিচিতি তুলে ধরে বলা হয়, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ নারী জাগৃতির পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার ১৩৪ তম জন্মবার্ষিকী ও ৮২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৮০ সালে রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় পর্দা-অবরোধের ঘেরাটোপে নারী জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। রোকেয়ার ছেলেবেলা কেটেছে আত্মীয়-অনাত্মীয় মহিলাদের সামনে বোরকা পড়ে। রোকেয়ার বড় বোন বাংলা শিখেছে বলে তাকে দ্রুত পাত্রস্ত করা হয়েছিল। বোনের এই দুর্দশার যন্ত্রণা অনুভব করে বড় ভাই ইব্রাহিম; ঘরের সবাই যখন ঘুমাতে যায় রোকেয়াকে তিনি পড়াতে শুরু করেন। সে যুগে এ এক অভাবনীয় লড়াই। নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আজ তিনি নারী জাগৃতির পথিকৃৎ।

IMG_2978আজও রোকেয়া কেন প্রাসঙ্গিক শিরোনামে প্রচার পত্রে বলা হয়, একটা সময় ছিল যখন নারী স্বামীর সাথে চিতায় উঠতে বাধ্য হত। পিতা নিজে মেয়েকে সহমরণে বাধ্য করত, নাহলে ধর্ম বাঁচে না! ধর্ম-কূল রক্ষার্থে শিশু কন্যাকে ৮০/৯০ বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে দিত। ফলে অকাল বৈধব্য বরণ করত কন্যা শিশুরা। সমাজের এ মর্মস্পর্শী যন্ত্রণা ধারণ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এদের সংগ্রামে সমাজের অচলায়তন ভাঙে। এই সংগ্রামের ধারায় রোকেয়ার আবির্ভাব। রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে পুরুষের সমকক্ষ হবে, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলুপ্ত হবে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতেও নারীরা শৃঙ্খলমুক্ত হয়নি। সমাজ শ্রেণীবিভক্ত ও বৈষম্যমূলক হওয়ার ফলেই নারীকে অধস্তন করার দৃষ্টিভঙ্গির অবসান হয়নি। রোকেয়া শিক্ষাকে নারীমুক্তির ঢাল হিসেবে ভেবেছিলেন। তিনি বলেছিলেন সমাজের এক অংশকে বন্দী রেখে সমাজের মুক্তি সম্ভব না। তাই নারী মুক্তির সাথে সমাজ মুক্তির প্রশ্ন যুক্ত। এখানেই রোকেয়া এখনও প্রাসঙ্গিক।

নারীমুক্তির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুঁজিবাদ নারীকে বাইরে এনেছে দুটো উদ্দেশ্যে। একদিকে ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীকে ভোগের বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ধর্মের নামে রক্তস্নাত সংবিধান ও নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কূপমণ্ডুক-কূসংস্কারাচ্ছন্ন মৌলবাদী শক্তি নারীকে অবদমিত করে রাখতে চায়। আর মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা নারীকে বিজ্ঞাপন-নাটক-চলচ্চিত্রে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করছে। উপরন্ত এ সমাজে সব কিছু পণ্য, বিপনণের বিষয়। তার ভয়াবহ শিকার হচ্ছে নারীরা। তাই এই ভোগবাদিতার বিরুদ্ধে নারী সমাজকে তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে।

পুঁজিবাদ নারীকে বাইরে আনার অপর একটি উদ্দেশ্য হল পুঁজিবাদী বাজারে নারীর সস্তাশ্রম। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম। মালিক ভাবে নারীশ্রমিকরা প্রতিবাদ করবে না। তাই গার্মেন্টেস সেক্টরে নারী কর্মীই প্রধান। সংসার-সমাজ-কারখানার চাকা ঘুরিয়েও এই নারীরা কি পায়? পরিসংখ্যান বলে নারী উপর নির্যাতনের বিভৎসতা দিন দিন বাড়ছে। ৮৭% নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র মনে করে এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম দরকার। এ সংগ্রাম গড়ে তুলতে মানুষের চিন্তাকে পাল্টাতে হবে। এর জন্য চাই সমাজে মূল্যবোধের জাগরণ। যুগে যুগে যে সব চরিত্র সময়ের প্রয়োজনকে ধারণ করে আমাদের পথ দেখিয়েছেন তাদের জীবন কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা জেগে উঠব।

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের সমস্ত অংশের মানুষকে নারীর প্রতি অবমাননা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান করছে। তাই রোকেয়া দিবসে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments