Saturday, November 23, 2024
Homeফিচারলাগামহীন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিধান রেখে আইন পাশের প্রতিবাদ

লাগামহীন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিধান রেখে আইন পাশের প্রতিবাদ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বছরে যতবার খুশি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২০’ জাতীয় সংসদে পাশ করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং জনস্বার্থে অবিলম্বে এই সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’ এর পূর্বের আইন অনুযায়ী বছরে একবারের বেশি গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সুযোগ ছিল না। সে আইন সংশোধন করে বছরে যতবার খুশি দাম বাড়ানোর আইন করা আওয়ামীলীগ সরকারের চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারী ও জনবিরোধী পদক্ষেপ। দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিগোষ্ঠীর মুনাফার স্বার্থে সরকারের জ্বালানী নীতি পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে। আমরা দেখছি, সরকার ব্যয়বহুল রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। চাহিদা না থাকায় উৎপাদন বন্ধ অবস্থায়ও তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়া পরিশোধের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। গত ৬ বছরে অলস কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গ্যাস সংকটের কথা বলে সরকার আমদানিকৃত তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে, ব্যয়বহুল এলএনজি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা আমদানি করছে, সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প, বিরাট ঝুঁকি ও ঋণের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অথচ, দীর্ঘদিন দেশের গ্যাস অনুসন্ধান স্থগিত করে রেখেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে বিদেশী কোম্পানীকে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেওয়া হচ্ছে, তাদের থেকে উচ্চদামে গ্যাস কেনা হচ্ছে। সাগরের গ্যাসসম্পদ রপ্তানির বিধান রেখে বিদেশী কোম্পানির সাথে উৎপাদন-বন্টন চুক্তি করা হচ্ছে। দেশে সুলভ মূল্যে পরিবেশবান্ধব সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও সেদিকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির দায় আওয়ামী লীগ সরকারের, জনগণের নয়। গত ১০ বছরে সরকার সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এখন জনগণের উপর আরো মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপাতে স্বেচ্ছাচারীভাবে এ গণবিরোধী বিল অনির্বাচিত ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাহীন সংসদে পাস করা হয়েছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “করোনা মহামারীতে জনগণ অর্থনৈতিকভাবে চরম দুর্দশায় নিপতিত। বাজারে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। এর উপর দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল। আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত ও রিক্ত জনসাধারণের ঘাড়ের উপর উপর্যুপরি মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানোর অবাধ লাইসেন্স দেওয়া হলো এ বিল পাশের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ-রেল-শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সমস্ত সেবাখাতকে বেসরকারিকরণ করে পুঁজিপতিদের মুনাফা লোটার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চায়। এই জন্যই সরকার জ্বালানিসহ সকল সেবা পণ্যের মূল্য ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়ে বাণিজ্যিকীকরণ করতে চায়। সেই অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে বছরে একাধিকবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিধান চালু করা হয়েছে।”

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারের এই গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়া ও ভবিষ্যতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যেকোনো সরকারি অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান‌।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments