Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদশ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম ও সংহতির প্রতীক মহান মে দিবস পালন করুন

শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রাম ও সংহতির প্রতীক মহান মে দিবস পালন করুন

ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন চাই

—— শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন

May-Dayলড়াইয়ের আহ্বান নিয়ে আবার এলো মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা কাজের সময় নির্দিষ্ট করা, মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশ উন্নত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। সেদিন পুলিশ ও মালিকের গুন্ডাবাহিনীর গুলিতে ১০ জন শ্রমিক শহীদ হয়। পরবর্তীতে মিথ্যা অভিযোগে শ্রমিক নেতা পার্সনস, স্পাইজ, ফিশার, এন্জেলকে ফাঁসির দন্ডে হত্যা করা হয়। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের ১৮৮৯ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা দুনিয়ায় এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মে দিবস নিছক আনন্দ-উদযাপন করার দিন নয়। সকল ধরণের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন।

শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে-জীবনের বিনিময়ে আসে মালিকের মুনাফা। গার্মেন্টস ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এ দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। অথচ, বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ সকল সেক্টরের শ্রমিক-কর্মচারীরা সীমাহীন সংকটে নিপতিত। শ্রমিকরা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা কাজ করে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মজুরি পায় না। যে বেতন দেয়া হয় তাতে শ্রমিক বাড়িভাড়া দিলে দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারে না, দোকানের বাকি পরিশোধ করলে বাড়িভাড়া দিতে পারে না। নিজের এবং পরিবারের শিক্ষা-চিকিৎসার সংস্থান করতে পারে না। এমনকি ঈদে-পূজায়-উৎসবে ছেলে-মেয়েকে একটা নতুন জামা পর্যন্ত কিনে দিতে পারে না। এমন কোনো দিন নেই যে কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে না। ঈদে-রোজায়-উৎসবে তো ব্যবসায়ীদের আরো রমরমা। শ্রমিকরা বাজার থেকে সবচেয়ে কমদামি, পঁচা, খাদ্যমানহীন খাবার কিনে খায়। তারা যেসব ঘরে থাকে, সেগুলো বস্তির একটু উন্নত সংস্করণ। এক ঘরে চার-পাঁচজন গাদাগাদি করে বসবাস সাধারণ চিত্র। এসব খুপরি ঘরের ভাড়াও বছরে দুই-তিনবার বাড়ে। এত কষ্ট করে থেকেও ধার-কর্জ না করলে অধিকাংশ শ্রমিকের জীবন চলে না। মালিকের মুনাফার লোভের আগুনে পুড়ে, বিল্ডিং ধসে মরতে হয় শ্রমিককেই। অনেক কারখানায় দিনের পর দিন বোনাস-ওভারটাইমের টাকা, এমনকি বেতনের টাকাও আটকে রাখে। অথচ তার প্রতিবাদ করা যায় না। প্রতিবাদ করলে চাকুরি থাকে না। মালিকের সন্ত্রাসী এসে নির্যাতন করে, পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়। মালিকদের উন্নতি হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না কেন?

images-6গত ৪৩ বছরের পুঁজিবাদী ‘উন্নয়নের জোয়ার’-এ দেশের অর্থনীতির তথাকথিত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মহাজোট সরকার তাদের ঘোষিত ‘মধ্য আয়ের দেশ’ বানানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু শ্রমিক-কৃষক গরিব-মধ্যবিত্ত বিপুল জনসাধারণ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অভাব-অনটনে হাঁসফাঁস করছে। এদেশের সম্পদ সৃষ্টিতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই শ্রমিক হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও মানুষের মতো বাঁচার উপযোগী মজুরি পায় না, কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, প্রবাসী শ্রমিকরা প্রায় দাসের মত জীবনযাপন করে, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রমশক্তি অনিশ্চয়তাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, ছিন্নমূল বস্তিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মুষ্টিমেয় ধনকুবের গোষ্ঠী এদেশের জমি-কারখানা-উৎপাদন যন্ত্রসহ সবকিছুর মালিক, তাদের স্বার্থেই অর্থনীতি-রাজনীতি-সমাজ পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামাত এসব দল এই ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রেখে তার সুবিধা ভোগ করতে চায়। ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও গরিবের দুর্দশা কাটে না, অন্যদিকে মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে।

এই অবস্থা পাল্টাতে হলে চাই শ্রমিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই — এটাই মে দিবসের শিক্ষা। যতদিন রাষ্ট্র মালিকশ্রেণীর হাতে থাকবে শ্রমিকশ্রেণীর দুর্দশা কাটবে না। তাই অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। মে দিবসে আমাদের আহ্বান — কাজের নিশ্চয়তা, ন্যায্য মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমাদের সংগঠনের মে দিবসের কর্মসূচিতে আপনাদের অংশগ্রহণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

মে দিবসের কর্মসূচি

শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল
১ মে, সকাল ১০টা
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গন, ঢাকা

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments