বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও বিদেশিদের টার্গেট করে পরিচালিত ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত ৩২৬ জন নিরপরাধ সাধারণ মানুষের নিহত হওয়া ও ৫০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা, গভীর শোক ও আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আইএস নামধারী যে মুসলিম জঙ্গীরা নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে বলে দাবি করেছে, তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ব্যক্ত করেন এবং এই ধর্মান্ধদের প্রত্যাখ্যান ও রুখে দাঁড়াতে মুসলিম সম্প্রদায়সহ সকলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “হামলাকারীরা জনগণের মধ্যে ভীতি, বিভেদ ও ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য বাড়ানোই এর যথার্থ জবাব। গভীর উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, আমাদের দেশসহ দুনিয়াজুড়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও ঘৃণার চর্চা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও মতান্ধতার বিপরীতে যুক্তিবাদী-সহনশীল ও সেক্যুলার চিন্তার প্রসার ঘটানোর আন্দোলনকে জোরদার করার তাগিদ সকলের কাছে তুলে ধরছে। দেশে দেশে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়-জাতিগত বিরোধ ও ঘৃণার রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, শোষিত জনগণকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের নামে বিভক্ত করা।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান হামলার জন্য দায় স্বীকারকারী আইএস-এর উত্থান সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে আদর্শগতভাবে কাবু করতে ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষত ইসলামী মৌলবাদীদের ব্যবহার করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীরা। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সেখানকার মৌলবাদীদের অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষণ দেয় মার্কিন-পাকিস্তান-সৌদি জোট। এভাবে মার্কিন প্রত্যক্ষ মদতেই জন্ম জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার। তারাই পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। একইভাবে আমেরিকার ইরাক দখলের পর সুন্নী মুসলিম অবমাননাবোধকে কাজে লাগিয়ে সেখানে জন্ম নেয় আইএস জঙ্গী গোষ্ঠী। পরবর্তীতে লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে শাসক পরিবর্তন করতে সাম্রাজ্যবাদীরা আইএস সহ ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে। এভাবে শক্তিসঞ্চয় করে আইএস ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এই সবকিছুই আবার মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে যুদ্ধোন্মাদনা, অস্ত্র ব্যবসা ও দেশে দেশে হস্তক্ষেপ-এর অজুহাত তুলে দিচ্ছে। তাই আজ মৌলবাদ-জাতিদম্ভ-বর্ণবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে সামিল হতে হবে এবং এ আন্দোলনকে পুঁজিবাদী শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনবিরোধী সামগ্রিক লড়াইয়ের সাথে যুক্ত করতে হবে।”