‘স্পেশাল ইকনোমিক জোন’ এর নামে হবিগঞ্জের চান্দপুরের চা শ্রমিকদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখা ১৩ ডিসেম্বর’১৫ বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে। চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার সংগঠক লাংকাট লোহারের সভাপতিত্বে এবং অজিত রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সভাপতি সুশান্ত সিনহা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, চা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। আর এই চা তৈরি হয় চা শ্রমিকদের রক্তে-ঘামে। সীমাহীন দারিদ্র ও পুষ্টিহীনতার শিকার এই অবহেলিত জনগোষ্ঠি। তার উপরে নেই ভূমির উপর কোন অধিকার। চা বাগানের জমি অন্য কোন প্রজেক্টে বা কাজে ব্যবহার করার কোন আইনি ভিত্তি নেই। অথচ মালিক শ্রেণী এই চুক্তি অমান্য করে চা বাগানের জমিতে দেশি – বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে একের পর এক নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শুধু তাই নয় চা শ্রমিকদের রক্তে ঘামে সৃষ্ট চা বাগানের সৌন্দর্য্যকে ভিত্তি করে ‘টি-ট্যুরিজম’ কিংবা দেশি-বিদেশী পুজিঁকে চা বাগানে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। যা চা শ্রমিকদের জীবনকেই শুধু বিষিয়ে তুলছে না, বরং পুরো চা শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে। এর অংশ হিসেবেই ‘স্পোশাল ইকনিমক জোন’ এর নামে হবিগঞ্জের চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিকদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিকরা ধারাবাহিক ভাবে অন্দোলন পরিচালনা করছেন। শ্রমিকদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই গত ১২ ডিসেম্বর’১৫ প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে যায়, শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হন। কিন্তু নানা ধরণের ষড়যন্ত অভ্যাহত আছে। এর প্রতিবাদে আজও শতশত চা শ্রমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। বক্তারা সরকারকে এই সর্বনাশা প্রকল্প থেকে সরে আসতে এবং শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।
চানপুর ও বেগমখান চা বাগানের জমি অধিগ্রহনের চক্রান্ত
প্রতিহত করার আহ্বান
বাংলদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড আ ক ম জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড উজ্জল রায় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘হবিগঞ্জের চানপুর ও বেগমখান চা বাগান ডানকান ব্রাদার্স এর অধিনে। ডানকান ব্রাদার্স এর অধিনে থাকা চা বাগান দুটি থেকে সেখানকার শ্রমিকদের উচ্ছেদ করতে চায়। নেতৃবৃন্দ এধরনের হীন চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান এবং সরকারকে এর বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে অধিগ্রহন বন্ধ করার জোর দাবি জানান।’ যদি এধরনের চক্রান্ত বন্ধ করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন শ্রমিকদের সংগঠিত করে এ হীন চক্রান্ত প্রতিহত করবে। বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার। চা বাগানে নেই কোন ন্যূনতম চিকিৎসা সেবার আয়োজন নেই কোন সংগঠিত হওয়ার কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ। নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে তাদের সন্তানরা শিক্ষা পেতে পারে। চা শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায় চা বাগানে কাজ করে জীবন নির্বাহ করে। এখান থেকে বের হওয়ার কোন আয়োজন নেই। মধ্যযুগীয় কায়দায় এখানে শ্রমিকদের দাস ব্যাবস্থার মতো পরিশ্রম করানো হয়। এখন চলছে তাদের ভিটা ছাড়া করে উচ্ছেদের চক্রান্ত যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।