বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বুধবার সকাল ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গৃহীত অনগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর গেইটে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড বোধি সত্ব চাকমার। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বনরূপার পেট্রোল পাম্প চত্বর প্রদক্ষিণ করে। অন্যান্যের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড কলিন চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক জয় কুমার চাকমা ও রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আশাধন চাকমা, বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের সংগঠক নয়ন বিকাশ দেওয়ান প্রমুখ।
সমাবেশে বাক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি গৃহীত ১১টি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান এবং এই সব অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানান। বক্তারা বলেন, এই সিদ্ধান্তসমূহ প্রমাণ করে যে এক দেশে দুই নীতি চলছে। সবক্ষেত্রেই যেমন বুর্জোয়া শাকসকরা মালিক শ্রেণীর জন্য এক নীতি আর শ্রমিক শ্রেণীর জন্য আরেক নীতি অনুসরণ করছে, ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য এক নীতি আর অপরাপর অংশের জন্য আরেক নীতি প্রয়োগ ঘটাচেছ। একটা গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্র কোন বিষয়ে দুই নীতি প্রয়োগ করতে পারে না, চেহারা দেখে ভিন্ন ভিন্ন আইন বা বিধি-বিধান প্রণয় করতে পারে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তবলী পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র পাহাড়ীদেরকে উদ্দেশ্য করে গৃহীত হয়েছে। তাই এসব সিদ্ধান্ত চরম অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ৫ নং সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে “… পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয়দের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি এর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।” এই বিধান দেশের অন্য অঞ্চলের কোথাও প্রয়োগ হচ্ছে না। শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা সম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক। তাছাড়া সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিককে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী/বিজিবি এর উপস্থিতিতে কোন বিদেশীর সাথে সাক্ষাৎ এই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিভাবে রক্ষিত হবে? ফলে এটি সংবিধানেরও পরিপন্থী। চেহারা, ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায় দেখে কোন গণতান্ত্রিক দেশে আইন প্রণয়ন হতে পারে না। সিদ্ধান্তে আরও রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাথে সমন্বয় করে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বহিনীসমূহের দায়িত্ব পালন করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ পথে বিদ্যমান চেকপোষ্টকে আরও সক্রিয় করা, পার্বত্য জেলাসমূহে পুলিশ/আনসার বাহিনীতে কর্মরত প্রাক্তন শান্তি বাহিনী সদস্যদের পর্যায়ক্রমে অন্য জেলায় বদলী ইত্যাদি। এই সব সিদ্ধান্তসমূহ চরম বৈষম্যমূলক ও অগণতান্ত্রিক। শাসকগোষ্ঠীর এই সব অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া নিরবে সহ্য করা হবে না বলে বক্তারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বক্তারা আরও বলেন, বিগত ৪ দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান নিপীড়ন ও বৈষম্যের পরিস্থিতি অবসানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীসহ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি যখন সোচ্চার তখন একে উপেক্ষা করে এ ধরণের পদক্ষেপ সরকারের চুড়ান্ত অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এটা পাহাড়ী বাঙ্গালী নির্বিশেষে দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। এর উদ্দেশ্য জুম্ম জনগণকে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে সাম্প্রদায়িক প্রচারণার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে দমনমূলক সেনাশাসন আরো সুদৃঢ় করা।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার সমাধান, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, সকল হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের দাবী আদায়ে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।