Saturday, November 23, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টহৃদয়ে শিক্ষা চাই - সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

হৃদয়ে শিক্ষা চাই – সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

chhatra front_Shirajul Islam Chow_39দেশের স্বাধীনতার জন্য যে-অসামান্য মূল্য দিতে হয়েছে তার প্রকৃত অর্থ খুঁজব কোথায়? খুঁজতে যদি হয় তবে খুঁজতে হবে স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে নতুন জীবনের পথে অগ্রসর হবার যে-সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সেই সম্ভাবনার মধ্যে। অগ্রসর হওয়ার পথে অন্তরায় আছে অনেক, দুস্তর অন্তরায় আছে দারিদ্র্যে ও শোষণে, কিন্তু তার চেয়েও নিকটবর্তী অন্তরায় বোধ করি যথার্থ শিক্ষার অভাব।

শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে তিনটি; চাকুরিজীবী সৃষ্টি করা; সংস্কৃতিবান ভদ্রলোক সৃষ্টি করা এবং বিবেকবান ও সৃজনশীল মানুষ সৃষ্টি করা! দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাটি পত্তন করা হয়েছিল চাকুরিজীবী সৃষ্টির উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই সঙ্গে উপরিপাওনা হিসেবে সংস্কৃতিবান ভদ্রলোকও পাওয়া গেছে কিছু কিছু – চাকরি এলে ভদ্রতাও আসে, না- এসে পারে না। কিন্তু শিক্ষার তৃতীয় প্রয়োজনীয়তা কতটা মিটবে; বিবেকবান ও সৃজনশীল মানুষ এই ব্যবস্থায় তৈরি হয়েছে কিনা, হলে কয়জন হয়েছে, জিজ্ঞাসা সেটাই।

চাকুরে নয়, ভদ্রলোকও নয়, মানুষ সৃষ্টি করাই যে শিক্ষার মূল কথা হওয়া উচিত এই সত্যটা সকলেই মান্য করেন, কিন্তু ওই সত্য মান্য করা আর সত্যিকার মানুষ সৃষ্টি করা এক কথা নয়। দারিদ্র্যের যে-হৃদয়হীন বন্ধনে আমরা আটকা পড়েছি তা থেকে মুক্ত হবার জন্য আজ ভীষণভাবে দরকার কারিগরি কৌশলের; দরকার দক্ষ, কর্মনিপুণ, বুদ্ধিমান মানুষের। এই প্রয়োজনের সত্যটিকে আমাদের চোখের সামনে রাখতে হবে অবশ্যই; কিন্তু রাখতে গিয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক হবে যাতে মুহূর্তের জন্যও চোখ ফিরিয়ে না নিই অন্য একটি সত্য থেকে। সেটি হলো এই যে, কৌশলজ্ঞান, দক্ষতা, কর্মনিপুণতা এ সকল ব্যাপার চালু রাখার ব্যাপার, সৃষ্টিশীলতার ব্যাপার নয়।

…কিন্তু শুধু সৃষ্টি নয়, হৃদয়ের চর্চার মধ্য দিয়ে একাকিত্বের বোধ কেটে যায় মানুষের। এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের মমত্ব যখন গড়ে ওঠে তখন আর আমরা ক্ষুদ্র থাকি না, সামান্য থাকি না – তখন ব্যাপ্ত, বিস্তৃত, বৃহৎ হয়ে পড়ি। তখন শুধু মানুষ নয়, যুক্ত হই প্রতিপার্শ্বের সঙ্গেও। যখন বুঝি আমরা একা নই তখন হতাশা আসে না সহজে, বিষণœতা আসে না স্বল্পসুযোগে। মানুষ স্বার্থপর প্রাণী তদুপরি শিক্ষিত মানুষ মানেই বিচ্ছিন্ন মানুষ, কেননা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ। বুদ্ধি যত সূক্ষ্ম হয় মানুষে মানুষে দূরত্বটাও তত প্রবল হয়ে ওঠে। (আমরা যখন অসন্তুষ্ট হই কারো ভাবগতিক দেখে তখন দেখা যায় ঠিক চিনেছি বুদ্ধির কাজকে। আমরা বলি ‘কে বুদ্ধি দিয়েছে শুনি?’ বলে চেপে ধরতে চাই বুদ্ধির কুটিলতাকে।) এই বাংলাদেশে মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টির কাজে যত কায়দাকৌশল চালু আছে, অন্য কোনো কিছু সৃষ্টির ক্ষেত্রে তেমন আছে বলে মনে হয় না। বিচ্ছিন্নতার জায়গা মিলনকে প্রতিষ্ঠার জন্য হৃদয়ের পরিচর্যা করা খুব বেশি করে প্রয়োজন।

যাকে আমরা বিবেক বলি তা অশরীরী কোনো বস্তু নয়। শোপেনহাওয়ারের কথাটা বার বার স্মরণযোগ্য, ‘মানব-হৃদয়ে গভীররূপে প্রোথিত করুণাই হচ্ছে নৈতিকতার একমাত্র যথার্থ ভিত্তিভূমি।’ বিবেকের সত্যিকারের আশ্রয়কে পাওয়া যাবে না আধিদৈবিক অনুশাসনে অথবা নীতিজ্ঞানের হট্টগোলে, পাওয়া যাবে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধে। ওয়েগনার ও হিটলার উভয়েই জার্মান ছিলেন, ছিলেন উভয়ে নিরামিশভোজী, কিন্তু একজন যে শিল্পী হলেন অন্যজন নিপীড়নকারী তার কারণ তাঁদের একজনের হৃদয়ে মমতা ছিল, অন্যজনের হৃদয়ে তা ছিল না। সমাজের মধ্যে যদি সাম্যের প্রতিষ্ঠা চাই আমরা তবে সে-সাম্য আনতে পারব না পুলিশের লাঠির সাহায্যে, তাকে আনতে হবে বিবেকের নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল বিবেকের নিয়ন্ত্রণকে সমাজের সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। এই নিয়ন্ত্রণকে কার্যকর করবার ব্যাপারে উদ্যমশীল হওয়া প্রয়োজন আজ ভীষণভাবে। বিদ্বেষ ও ঈর্ষার সাহায্যে মানুষকে উত্তেজিত করা কঠিন নয়, হিংসা থেকে হিংস্র হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা; কিন্তু শুধু উত্তেজনা ও হিংসার মধ্য দিয়ে মহৎ কাজ সংগঠিত করা সহজ নয়, সমাজবিপ্লবও নয়। সমাজবিপ্লব কেন চাই? চাই মানুষকে ভালোবাসি বলে। ভালোবাসার কারণে, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে এমন বিপ্লব চাই আমরা যার প্লাবনে সব রকমের শোষণ ও অত্যাচার অপসারিত হতে পারে সমাজ থেকে।

…বাংলা নাটকে বাস্তবতা সৃষ্টির সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মধুসূদন মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা বাস্তবকে ভুলিয়া পরীর স্বপ্নে বিভোর।’ বাস্তবে এই অবজ্ঞা এই স্বপ্নে এই বিভোরতা শুধু আমাদের সাহিত্যের নাটকে নয়, জীবনের নাটকেও সত্য। এই অর্থে আমরা হৃদয়বান বটে। কিন্তু এ হৃদয় কোন হৃদয়? নিশ্চয়ই শিক্ষিত, মার্জিত, পরিশীলিত হৃদয় নয়। অকারণ ভাবাবেগ, অতিরিক্ত অন্যমনস্কতা বা উদাসীনতা – এটা হৃদয়ের অশিক্ষার লক্ষণ, অন্য কিছুর নয়। প্লীহা রোগীর আতিকায় প্লীহা যেমন স্বাস্থ্যের প্রমাণ দেয় না, অকারণে উত্তেজিত বা অহেতুক অস্থির হৃদয় তেমনি দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু বোঝায় না। বিবেকবান ও সৃজনশীল মানুষ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন মানুষকে তার পুরাতন বন্ধন থেকে মুক্ত করা। যে-হৃদয় পুষ্ট নয়, সে হৃদয় পুষ্ট করে শুধু বন্ধনকে। বন্ধন কিসের? বন্ধন কুসংস্কারের, অন্ধবিশ্বাসের, বন্ধন ভয়ের। আবদ্ধ হৃদয় পঙ্গু হয়ে পড়ে আপনা থেকেই। আশঙ্কা থাকে আবদ্ধ অবস্থাতেই তার স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে হঠাৎ একদিন। অশিক্ষিত হৃদয় অতিসহজে উত্তেজিত হয় -প্রচন্ডরূপে। তার অশ্রুপাতে সৃজনের উপাদানেরা ভিজে ভিজে ওঠে, ফলে বিঘœ ঘটে সৃষ্টিতে। অশিক্ষিত হৃদয় ক্রীড়নক হয়ে পড়ে অন্যের হাতের, প্রবল কোনো বায়ুপ্রবাহের আয়োজন ঘটলে সে মাথা নুইয়ে দেয়, এপাশে-ওপাশে। পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকাই যদি, পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাসের দিকেওÑদেখব কত সহজে প্রতারিত হয়েছে আমাদের হৃদয়, স্বীয়স্বার্থসিদ্ধকারী মানুষের হাতে। হৃদয়কে তাই শক্ত হতে জানতে হবে, কোমল হতে জানার সঙ্গে সঙ্গে। ভাগ্য পরিবর্তনের দুর্বার ইচ্ছাশক্তির উৎসমুখ একটাই, শিক্ষিত হৃদয়। অশিক্ষার কদর্যে ক্ষতি আছে, লাভ নেই।

অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি চাই, ভাগ্য পরিবর্তনের বিপুল-প্রবল উদ্যম, আর সেই জন্যই হৃদয়ের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে চাই বুদ্ধির শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে, যাতে করে অনুভব ও ধারণা, আবেগ ও জ্ঞান, কল্পনা, বুদ্ধি একত্রে কাজ করতে পারে, যাতে করে হৃদয় ও মস্তিষ্কের সুবর্ণসংযোগে আমরা নতুন জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারি সবল ও সমর্থ পদক্ষেপে। পানির প্রবল স্রোতকে বশ করে যেমন আমরা বিদ্যুৎশক্তি এনেছি, তেমনি করে আবেগ থেকে অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা আনতে হবে, নইলে বন্যা আসবে দুর্গতিকে মাথায় নিয়ে।

…তথাকথিত আদর্শবাদের আমরা বিস্তর প্রশংসা করি, কিন্তু এই আদর্শবাদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার যদি থাকে তবে সেই আদর্শবাদে হৃদয়ের উপকার হয় না, অপকার ভিন্ন। আমাদের দেশে হৃদয়কে অবজ্ঞা করবার অভ্যাস অতিশয় পুরাতন। শুধু অবজ্ঞা নয়, শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই ব্যবস্থা আছে অতিশৈশবে আমাদের হৃদয়কে ক্ষীণপ্রাণ করবার। শিশুকে আমরা প্রায় কখনোই শিশু হিসেবে বিবেচনা করি না। শিশু যাতে শৈশবে শিশু থাকে তার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দার্শনিক রুশো দিয়েছেন, পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ সেই পরামর্শ মেনে নিয়েছে, আমরা পারিনি। শিশুর জগত কাঁচের চেয়েও ভঙ্গুর। এই অতিভঙ্গুর জগতের উপর সমাজ ও সংসারের দোর্দ- প্রতাপেরা এমন বিক্রমে ও নিষ্ঠুরতায় ঘা দিতে থাকে যে জগতটা ভেঙে খান খান হয়ে যায় অচিরে, আনন্দ ও কল্পনার মূল্যবান উপকরণগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে এখানে সেখানে। শত বছরের বঞ্চনা ও দুর্গতির বোঝা শিশুর দুর্বল হৃদয়ের উপর চেপে বসে – দয়ামায়া না করে। পিতামাতার দুর্বহ দুঃখ, সংসারের দুঃসহ বীভৎসতা, চারপাশের মর্মভেদী ক্রন্দন – এইসবের শক্ত বোঝা বইতে গিয়ে সামান্য শিশুর ছোট্ট হৃদয়টি একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়ে। হৃদয়ের বাকি জীবনটা কাটে পঙ্গুত্বের ভেতরই। জীবন মানে তখন ক্ষয়রোগীর মতো ধুঁকতে থাকা, ধুঁকতে ধুঁকতে অকালমৃত্যুর দিকে এগুতে থাকা, যতটা পারা যায় বিলম্বিত করা অন্তিম মুহূর্তের আগমনকে। হৃদয়হীন সংসার হৃদরোগের খোঁজও করে না। অথচ হৃদরোগই আসল রোগ, ব্যক্তির জীবনে যেমন সমাজের জীবনেও তেমনি। সংসারে যাদের অনেক আছে তাদের সন্তানেরা আদর-যতœ যথেষ্ট পায়, দেহের খাদ্য পায় প্রচুর পরিমাণে, কিন্তু সেখানেও শিশুর শৈশব মারা যায় শৈশবেই। দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কদের ঈর্ষা, বিদ্বেষ ও ঘৃণার চাপে সেখানেও শিশু তার সারল্যকে রক্ষা করতে পারছে না কোনোমতেই। বাস্তুহারা শিশু আশ্রয় খুঁজছে বয়স্কদের স্বাস্থ্যহীন জগতে।
ফলে প্রায় কোনো শিশুই শিশু থাকে না শৈশবে; বয়স্ক মানুষের অপ্রাপ্তবয়স্ক সংস্করণ হয়ে ওঠে, প্রাপ্তবয়স্কদের দুঃখ ও দুশ্চিন্তা, ঘৃণা ও ভয় তার ভেতরটাকে লোলচর্ম বৃদ্ধে পরিণত করে। বয়স যখন বাড়ে তখন এই নিরীহ ও অপমানিত শৈশব স্বভাবই বড় রকমের প্রতিশোধ নেয় প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনের নানান জায়গায় হানা দিয়ে সে যখন তখন, যা তা উৎপাত উপদ্রবের সৃষ্টি করে। এই জন্যই বয়স্ক শিশুর এত বেশি প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে। যতই চেষ্টা করুক শিক্ষাব্যবস্থা কিছুতেই পরিণত, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তৈরি করে উঠতে পারে না। গলদ থেকে যায় একেবারে গোড়াতেই। নাজুক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত্তির উপর উচ্চশিক্ষার যে নিতান্ত নড়বড়ে ব্যবস্থাটি আমরা গড়ে তুলেছি তা খুব একটা কাজে লাগে না; তার চেয়েও বড় কথা সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থার সব মহল ঘুরে এসেও প্রাণের খোঁজ পাওয়া যায় না।
…শিক্ষা তো শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার নয়, ব্যাপার পরিবার ও সমাজেরও। সমাজই শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত করে সবকিছুকে। শিক্ষক যখন পড়াতে বাধ্য হন যে, রাজনীতি মহাপাপ, তখন দেখা যায় যে সমাজে কল্যাণকর পরিবর্তন যা আসছে তা ঐ মহাপাপের পথ ধরেই। শিক্ষা ও সমাজের মাঝখানে এই রকমের ফাঁক থাকলে সেই ফাঁকে শিক্ষাদানের সমুদ্দেশ্য তলিয়ে যেতে বাধ্য। অন্যদিকে আবার এও সত্য যে, বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ফলপ্রসু করার জন্য সমাজের শিক্ষাকে ভুলে যাওয়া আবশ্যক। সমাজ যদি মানুষে মানুষে অসাম্য শেখায় তাহলে বিদ্যালয়ে সাম্যের শিক্ষা পত্তনের আগে প্রয়োজন হবে সামাজিক কুশিক্ষার দুষ্ট চারা উপড়ে ফেলা। এটা একটা অতিরিক্ত কর্তব্য। চারুকলা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে একবার তাঁর দায়িত্বের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ছাত্রদের আঁকতে শেখানোর আগে তাঁর কাজ হয় যেÑভুল আঁকা তারা বাইরে থেকে শিখেছে সেটা ভুলতে শেখানো। এই দায়িত্বটা সকল শিক্ষকেরই। সমাজ প্রতিনিয়ত ভুল শিক্ষা দিচ্ছে, বিশেষ করে হৃদয়কে-শিক্ষা দিচ্ছে স্বার্থপরতা, সঙ্কীর্ণতা, ঈর্ষা, ভীতি।
আমরা বলি শিক্ষকরা আদর্শ নাগরিক তৈরি করবেন। কথাটার তাৎপর্য বিবেচনা করে দেখবার মতো। আদর্শ নাগরিক বলতে আমরা বুঝি যোগ্য, দক্ষ, প্রশংসাভাজন মানুষ। অর্থাৎ কিনা এমন মানুষ যার সঙ্গে সমাজের কোনো বিরোধ বাধবে না, সমাজের ব্যবস্থাটাকে যে মেনে নেবে, মেনে নিয়ে খারাপ স্কুলের ভালো ছাত্রের মতো দেদীপ্যমান হয়ে উঠবে। তাই এ কথা বলা দরকার যে এটা পর্যাপ্ত নয়। আমরা শুধু আদর্শ নাগরিক চাই না, চাই উপযুক্ত মানুষও। …মানুষের অভাব বলেই কেবল নাগরিকদের দিয়ে কাজ হবে না। এমন মানুষ চাই যার বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে সুশিক্ষা ঘটেছে হৃদয়ের, যার জ্ঞান আছে আর আছে প্রয়োজন হলে সাহস-একা দাঁড়াবার।
মস্তিষ্কের কথা, বুদ্ধির কথা অনেক শোনা গেছে, আরো শোনা যাবে, যাবেই; সেই জন্যই অবহেলিত ও অশিক্ষায় জর্জরিত হৃদয়ের কথা বলতে হবে জোর দিয়ে।
[ রচনাটি সিরাজুল ইসলাম চৌধরীর শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ (কথা প্রকাশ প্রকাশিত) থেকে সংকলিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে ছাপানো হলো ]

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের স্মরণিকা

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments