বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ২৮ জানুয়ারী বুধবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জেলায় জেলায় বিক্ষোভের কর্মসূচী দিয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, বীজ-সার-ডিজেল-কীটনাশকের দাম কমানো এবং ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজের নিশ্চয়তার দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।
২৮ জানুয়ারীর বিক্ষোভ কর্মসূচী সফল করে তোলার জন্য বাসদ (মার্কসবাদী)’র পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে এক প্রচারপত্র। প্রচারপত্রে জনজীবনের নিত্যদিনের সংকট সমূহ তুলে ধরে বলা হয়েছে,
সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু ক্রমাগত ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাল-ডাল-তৈল ঔষধ কাপড়সহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। শুধু তাই নয় শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যয় এমন পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারণ মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বর্তমান মহাজোট সরকার গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্য নতুন করে বৃদ্ধি করার ষড়যন্ত্র করছে । যার প্রভাব জনজীবন আরো বিপর্যস্ত করে তুলবে।
প্রচারপত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতার কারণে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষক হুমকীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে বলা হয়েছে, ধান, আলু, সবজিসহ সকল কৃষি পন্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াটাই যেন কৃষকদের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল সার বীজ কীটনাশকে বাজার ভর্তি হয়ে আছে, তার উপর সার ডিজেল, বিদ্যুৎ, বীজ, কীটনাশকের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি কৃষকদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। সাময়িক লাভের জন্য বন্ধা বীজের ব্যবহার এমন মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, হাড়িয়ে যাচ্ছে দেশী বীজ। ফলে আগামী দিনের কৃষি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী গুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ক্ষেতমুজরদের সারা বছর কাজ নেই। বছরে ৩ মাস কাজ থাকে বাকী ৯ মাস কর্মহীন, ফলে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে বছরের বেশীর ভাগ সময়। শিক্ষা চিকিৎসা সুবিধা এদের জন্য সোনার হরিণ। ক্ষেতমজুরের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী সাহায্য টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজন প্রকল্প ক্ষমতাসীনরা লুটপাট করছে।
দেশে বেকার সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা টাকা ছাড়া চাকুরী হয়না। ফলে গরীব নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে চাকুরী পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। নূ্যনতম মজুরী ৮০০০ টাকা নির্ধারণের দাবী দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত, বিশেষ করে বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে নূ্যনতম মুজরী নির্ধারণ তো দুরের কথা ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পর্যন্ত নেই।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষা এখন জ্ঞান অর্জন, মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা বিকাশ এবং যথার্থ মানুষ হওয়ার মাধ্যম নয়। শাসক গোষ্ঠী শিক্ষাকে পন্যে পরিণত করেছে। টাকা যার শিক্ষা তার এই নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিবছর বেতন ফি বৃদ্ধি করাটাই যেন নিয়ম। প্রত্যেক ক্লাসে পুন: ভর্তির বিধান চালু করে আরো বেশি ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেজন্যই দুর্নীতির শিরোমনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের চলে অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা।
প্রচারপত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, সব চাইতে গরীব সাধারণ মানুষগুলো বাস কর গ্রামে, আর সেই গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই ডাক্তার, নেই ঔষধ, নেই প্রসূতি মায়েদের সেবার কোন ব্যবস্থা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এমন কি জেলার সরকারী হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার ঔষধ নেই। পরীক্ষা নিরিক্ষার আয়োজন সহ অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নানা অজুহাতে তা বন্ধ থাকে সারা বছর। পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিকও হাসপাতাল, যেখানে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রচারপত্রে বলা হয়, ঘুষ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দেশ। অফিস আদালত, ব্যাংক, বীমা, থানা পুলিশ, স্কুল কলেজ সর্বত্রই ব্যাপক হারে চলছে ঘুষ দুর্নীতি। ঘুষ দুর্নীতি লুটপাটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটের পাশাপাশি সমানতালে চলেছে বিবেক, মনুষ্যত্ব এবং চরিত্র লুটের আয়োজন। সেই আয়োজনের অংশ হিসেবেই সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন ও যাত্রাগান অশ্লিলতায় ভরিয়ে দিচ্ছে। পর্ণো ছবি ও পত্রিকায় ছয়লাভ হয়েছে গোটা দেশ। নানা ধরণের মাদক এবং নানান কৌশলে জুয়ার আয়োজন করে যুব সমাজকে অধ:পতিত করছে। নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।
প্রচারপত্রে সমাজ পরিবর্তনের শক্তি শোষিত সাধারণ মানুষের পক্ষের রাজনৈতিক দল বাসদ (মার্কসবাদী) -র নেতৃত্বে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, শে্রণী বিভক্ত রাষ্ট্রে লুটপাটকারী শোষক বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো যারা জোট মহাজোটে অন্তর্ভূক্ত, এরা জনজীবনের সংকট সমাধাণের কোন ক্ষমতা রাখে না। দেশ স্বাধীনের পর ৪৩ বছর ধরে এরাই পালাক্রমে কখনো একক ভাবে কখনো জোটবদ্ধ ভাবে দেশ শাসন করেছে। কিন্তু জনজীবনের সমস্যা সমাধাণ দুরের কথা ক্রামগত বাড়িয়ে তুলেছে।
- ২৮ জানুয়ারী ২০১৫ বুধবার জেলায় জেলায় নিম্নোক্ত দাবীসমূহের বিক্ষোভ কর্মসূচী সফল করে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
- গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল, চাল ডাল তেল কাপড় ঔষধ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো।
- সার বীজ ডিজেল কীটনাশকের দাম কমানো, ভেজালমুক্ত করা, বিএডিসি কে সচল করা।
- ধান, আলু, সবজি, ভুট্ট সহ সকল কৃষি ফসলের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করা, এনজিও এবং মহাজনী সুদী কারবার বন্ধ করা, সহজশর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করা।
- ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজের নিশ্চয়তার জন্য বছরে নুন্যতম ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু। পর্যাপ্ত টিআর কাবিখা চালু করা, দুনীর্তি লুটপাট বন্ধ করা।
- শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী ৮০০ টাকা নির্ধারন, নিয়োগ পত্র, পেনশন প্রদানসহ অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা।
- প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ, পুনঃ ভর্তির বিধান বাতিলসহ দফায় দফায় বেতন ফি বৃদ্ধি বন্ধ করা। প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা।
- অপসংস্কৃতি অশ্লিলতা, মাদক-জুয়া-নারী- শিশু নির্যাতন বন্ধ করা।
- কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ, প্রসুতি মায়েদের সেবা নিশ্চিত করা। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার নিয়মিত চালু রাখা।
- ঘুষ দূর্নীতি লুটপাট বন্ধ করা।