বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ১১ আগস্ট এক বিবৃতিতে মহাজোট সরকারের ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’-কে সরকারের ফ্যাসিস্ট মনোভাবের প্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের পর একই পন্থায় মুষ্টিমেয় কর্পোরেট সংস্থাগুলোর স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক নিপীড়ন আড়াল করার লক্ষ্যে সমস্ত প্রচারমাধ্যমকে শৃঙ্খলিত করার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, একদিকে সরকার জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ, অন্যদিকে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-দলীয়করণ-সন্ত্রাসে জনজীবন ওষ্ঠাগত। গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ নানা ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডে আইনের শাসন পদদলিত। শাসকদের এই অপশাসন ও দুঃশাসনের সংবাদ যাতে বৃহত্তর জনগণের কাছে পৌঁছাতে না পারে, অপরাধীরা যাতে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে বিনা বাধায় পার পেতে পারে, যাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিচ্ছিন্ন রাখা যায় – সে লক্ষ্যেই গণমাধ্যমের ওপর সমস্ত দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা শাসকশ্রেণী করছে। এই নীতিমালা প্রণয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হল সরকার এবং শাসকশ্রেণী বিরোধী যে-কোনো আন্দোলন এবং জনগণের সংগ্রাম যাতে প্রচারিত না হতে পারে সে ব্যবস্থা করা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণমাধ্যমগুলোর মালিক বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি গোষ্ঠী, যারা শাসকশ্রেণীরই অংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবাদকর্মীদের ভূমিকার ফলে এবং শাসকগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে বহু সংবাদ জনগণের সামনে চলে আসছে। এখন সেটাকেও নিয়ন্ত্রিত করার পথ বের করতে চাইছে।
তিনি দেশের সকল গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ, রাজনৈতিক দল ও শক্তি এবং সংবাদকর্মীদের সরকারের এ অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট নীতিমালার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের অসৎ উদ্দেশ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলÑবাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ১৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার বিধান সম্বলিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারবিভাগের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়বে, সরকারী দল তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে আরো বেশি ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটবে, চলমান ফ্যাসিবাদী শাসন আরো তীব্রতা পাবে। গণতান্ত্রিক দেশে এরকম একটা আইন থাকতেও পারতো, যদি পার্লামেন্ট প্রকৃত অর্থেই জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতো। কিন্তু আজ কোনো পুঁজিবাদী দেশেই পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়। আর এখানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে এমন এক সংসদের হাতে যা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। একতরফা, নামকাওয়াস্তে নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে সে ক্ষমতায় এসেছে। এই সংসদে সত্যিকার অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই, সরকারি দলেরই একাধিপত্য চলছে। এখন এই অবৈধ সংসদ তার সুবিধার জন্য এই আইন করতে যাচ্ছে। এর ফলে সরকার চাইলেই সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে অপছন্দের যেকোনো বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারবে।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থায় আইনবিভাগ পুরোপুরি নিরপেক্ষ থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে Ñ এটা এ যুগে সম্ভব নয়। তারপরও এ ব্যবস্থার মধ্যেই স্বাধীনচেতা কোনো বিচারকের নিজের বিবেক ও বিচার-বুদ্ধি অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তার যতটুকু সুরক্ষা ছিল, এই আইনের মাধ্যমে সে পথও রুদ্ধ করে দেয়া হলো। ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা’ শব্দের অর্থেও টিকে থাকার আর কোনো উপায় নেই। তিনি সকল গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।