Sunday, April 28, 2024
Homeসাম্যবাদস্মরণ ঃ ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস - শিবদাস ঘোষ

স্মরণ ঃ ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস – শিবদাস ঘোষ

গত ৫ আগস্ট ছিল সর্বহারার মহান নেতা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস (২৮ নভেম্বর ১৮২০ – ৫ আগস্ট ১৮৯৫) এবং কমরেড শিবদাস ঘোষ (৫ আগস্ট ১৯২৩ – ৫ আগস্ট ১৯৭৬)-এর মৃত্যুবার্ষিকী।

ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস

Engels 4“শ্রেণী-সংগ্রামই ইতিহাসের আশু চালিকাশক্তি এবং বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের মধ্যকার শ্রেণী-সংগ্রাম আধুনিক সমাজবিপ্লবের বিশাল চালক-দ-স্বরূপ। অতএব যারা আন্দোলন থেকে এ শ্রেণী-সংগ্রামকে বর্জন করতে চান তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। … শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তিসাধন হওয়া চাই শ্রমিকশ্রেণীর নিজের কাজ। অতএব, যারা খোলাখুলিই বলেন, নিজেদের মুক্ত করার শিক্ষাদীক্ষা শ্রমিকদের নেই, উপর থেকে, মানবদরদী বড় বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়াদের সাহায্যে তাদের মুক্ত করতে হবে, তাদের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করতে পারি না।” [আ. বেবেল, ভ. লিবক্লেখত, ভ. ব্রাকের প্রতি পত্র; ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৭৯]
“ঐক্যের চিৎকারে নিজেকে ভুলালে চলবে না। যাদের মুখে এ কথাটি লেগেই আছে প্রধানত তারাই বিভেদের বীজ বপন করে। সব বিভেদগুলি তারাই উসকিয়ে তুলেছে, অথচ ঐক্যের জন্য চিৎকার করছে তারাই সবচেয়ে বেশী। এই ঐক্যপাগলদের হয় বুদ্ধি কম, যারা সবকিছু মিশিয়ে ঘুঁটে ঘুঁটে এমন এক অদ্ভুত খিচুড়ি বানাতে চাইছে যা ঠা-া হতে দেওয়া মাত্রই পার্থক্যগুলো আবার ভেসে উঠবে এবং একপাত্রে রয়েছে বলে সেগুলি ভেসে উঠবে আরো স্পষ্ট ও তীব্র হয়ে অথবা সচেতনভাবেই আন্দোলনকে কলুষিত করতে চাইছে। … ঐক্য-চিৎকারকদের জন্য আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ও সবচেয়ে বেশি বেঈমানী সইতে হয়েছে।” [আ. বেলেলে নিকট চিঠি, ২০ জুন ১৮৭৩]
“… সমাজের একটি অংশের অর্থাৎ বুর্জোয়া শ্রেণীর আকাক্সক্ষা পূরণের উদ্দেশ্যে, তাদেরই সক্রিয় উদ্যোগে, সমাজের অন্যান্য অংশের পরোক্ষ স্বীকৃতির ভিত্তিতে রচিত এই আইন ও শৃঙ্খলার পরম পবিত্র ধারণা, বুর্জোয়া শ্রেণীর সামাজিক অবস্থানের স্বপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষাকবচ। কিন্তু জীবনের একটার পর একটা আঘাতের অভিজ্ঞতা থেকে সে নিঃসংশয়ে বুঝেছে যে, আইন হলো একটা চাবুক যা বুর্জোয়ারা শ্রমজীবী মানুষের জন্য তৈরী করেছে। তাই একান্ত বাধ্য না হলে শ্রমিক কখনো ন্যায় বিচারের আশায় আইনের দুয়ারে গিয়ে হাত পাতে না। … … বুর্জোয়াদের চাই একটা সরকার; যে শ্রমিকশ্রেণীকে না হলে তার চলে না, তাকে দমন করার জন্যই এটা তাদের কাছে অবশ্য প্রয়োজন। বুর্জোয়ারা সর্বহারাশ্রেণীর বিরুদ্ধে এই সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদের বিক্ষোভকে যতদূর সম্ভব ঠেকিয়ে রাখে। বাণিজ্যিক সংকট চলতেই থাকবে এবং শিল্প-কারখানার বিস্তার এবং শ্রমিকের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধির সাথে সাথে সংকট আরও তীব্র, আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। … ধনী ও দরিদ্রের রক্তাক্ত সংগ্রাম অতীতের সকল ভয়াবহ সংগ্রামের নজিরকে ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি বুর্জোয়াদের একাংশ সর্বহারাশ্রেণীর সঙ্গে সমঝোতা করে বা ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেও পরিস্থিতির কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। দৈনন্দিন খুঁটিনাটি বহু বিষয়কে কেন্দ্র করে ধনীর বিরুদ্ধে গরিবের যে নিরন্তর সংগ্রাম আজ পরোক্ষে চলছে, তা প্রত্যক্ষ এবং সর্বাত্মক সংঘর্ষের রূপে দেখা দেবে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের সম্ভাবনা আর নেই। শ্রেণীবিভাজন ক্রমশ আরও স্পষ্ট হচ্ছে, শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিরোধের মানসিকতার জন্ম হচ্ছে, তিক্ত বিরোধিতা দিনে দিনে বাড়ছে। ছোট ছোট লড়াই বৃহত্তর সংগ্রামের জমি তৈরি করছে এবং অবস্থা এমন রূপ নিচ্ছে যে, শ্রীঘ্রই একটা সামান্য উত্তেজনা বিশাল একটা ধস নামিয়ে দিতে পারে।” [কন্ডিশন অফ ওয়ার্কিং ক্লাস ইন ইংল্যান্ড (১৮৪৫)]

শিবদাস ঘোষ

S G portrait“সাম্যবাদী হতে হলে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী, পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গী, ব্যক্তিগত স্বার্থবোধ এগুলো সম্পূর্ণ বিসর্জন দিতে হবে। বুর্জোয়া মানবতাবাদীদের সঙ্গে এই জায়গায় সাম্যবাদী চিন্তাধারার মূল পার্থক্য। যথার্থ সাম্যবাদী সেই হতে পারে যার মানবতাবোধ ব্যক্তিস্বার্থ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত – খাদ হয়ে মিশে নেই, যে নির্দ্বিধায় ব্যক্তিস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে শিখেছে, যে হাসিমুখে সেসব জলাঞ্জলি দিতে পারে। এটা সকলে পারে না, যে পারে সেই কমিউনিস্ট হওয়ার যোগ্য। বাকিরা কমিউনিস্ট বলে মিথ্যা অহংকার করে মাত্র।”
“…একদল নেতা আছেন যাঁরা, কর্মীদের চেতনার মান যেহেতু খুব উঁচু স্তরে, খুব সূক্ষè বিচারের ক্ষমতা অর্জনের স্তরে উঠতে সময় লাগে, সেহেতু তাঁদের চেতনার নিম্নমানের সুযোগে লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সে তুঙ-এর দোহাই পেড়ে এবং মোটামুটিভাবে বিপ্লবের তত্ত্ব এবং গরম গরম বুলি আউড়ে এবং সময়ে সময়ে কিছু মারমুখী লড়াই পরিচালনা করে কর্মী ও জনসাধারণকে বোঝাতে চান, পার্টির রণনীতিটা এবং বিপ্লবের স্তর সম্বন্ধে বিশ্লেষণটা ঠিক হলেই নাকি পার্টিটা ঠিক হয়ে যাবে। তারপর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে নেতাদের আচরণ যাই হোক্ না কেন; শিল্প, সাহিত্য, রুচি, নৈতিকতা, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক সম্বন্ধে যাই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থাকুক না কেন এবং প্রাত্যহিক আচরণের ক্ষেত্রে যত নিম্নতম সাংস্কৃতিক ও রুচিগত মানই তাঁরা প্রতিফলিত করুন না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না! তাঁদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায়, তা হচ্ছে, বিপ্লবের তত্ত্ব সম্পর্কে অর্থাৎ রাজনীতি সম্পর্কে ধারণাটা শুধুমাত্র মার্কসবাদসম্মত হলেই চলবে আর ব্যক্তিগত জীবনে সংস্কৃতিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের ক্ষেত্রে যদি নেতা ও কর্মীরা বুর্জোয়া সংস্কৃতির দাসই থেকে যান, তা নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই। … একদল নেতা এই বিপ্লবী তত্ত্বটা ঠিক হলেই, বিপ্লবের স্তর নির্ধারণ ঠিক হলেই পার্টিটা ঠিক হয়ে গেল এবং তার দ্বারাই বিপ্লব হয়ে যাবে Ñ এই কথা বলে কর্মী ও নেতাদের সর্বব্যাপক সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যা সব বিপ্লবের আগে সেই বিশেষ বিপ্লবের পরিপূরক অর্থে প্রথমে করা প্রয়োজন, সেই গুরুদায়িত্বকে এড়িয়ে যান এবং নিজেরাও সেই অনুযায়ী মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের অভ্যাস, আচরণ ও সংস্কৃতিগত দিকটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন না। অথচ লেনিন আমাদের শিখিয়েছেন, পঁষঃঁৎধষ ৎবাড়ষঁঃরড়হ ঢ়ৎবপবফবং ঃবপযহরপধষ ৎবাড়ষঁঃরড়হ, অর্থাৎ সংস্কৃতিগত বিপ্লব শুরু হবার পরই রাষ্ট্র দখলের বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে। তাই যে কোন সত্যিকারের মার্কসবাদী-লেনিনবাদীই জানেন যে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ‘ইন্টিগ্রেশন’ (সংযোজন) ছাড়া কোন দেশের বিপ্লব সফল করা সম্ভব নয়।” [কেন ভারতবর্ষের মাটিতে এস ইউ সি আই একমাত্র সাম্যবাদী দল]

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments