শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ-বেসরকারিকরণ-সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ও সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর শিক্ষা কনভেনশন দিন ব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে শেষ হলো। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ অনুষ্ঠিত কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবত্তর্ী রিন্টু।
কনভেনশনের প্রথম অধিবেশনে ‘শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার ও শিক্ষার বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ’ এর কার্যপত্র উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার ও দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘শিক্ষার দর্শন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব’ এর কার্যপত্র উপস্থাপন করেন সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা।
প্রথম অধিবেশন শেষে দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড-ফেস্টুন-সংগঠনের পতাকা সহকারে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
প্রথম অধিবেশনে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আজম, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আসিফ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন কবির আতিক। দ্বিতীয় অধিবেশনে আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. তানজিম উদ্দিন খান, জয়পুর হাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক কৃষ্ণ কমল প্রমূখ ।
উভয় অধিবেশনেই মূল আলোচকদের সাথে সারা দেশ থেকে আগত স্কুল-কলেজ-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের স্ব-প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ এর চিত্র ও আন্দোলন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং আগামী দিনে শিক্ষা আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী তাঁর আলোচনায় বলেন, মানুষের সামাজিক সংগ্রামেই শিক্ষা তৈরি হয়েছে। ফলে শিক্ষার উপর মানুষের সামাজিক অধিকার। বুর্জোয়া ব্যবস্থার পত্তনের সময়ে শিক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে দেওয়ার কথা তারাই বলেছিলেন। আজ পুজিঁবাদ প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ায়, শিক্ষাকেও মুনাফা লুটের পণ্যে পরিণত করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা আর কারিগরি শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে। এতে তাদের শাসন ব্যাবস্থার সুবিধা হয়। ইতিহাস-দর্শন-অর্থনীতির মতো মৌলিক বিষয়ের জ্ঞান ছাড়া এসব শিক্ষা মানুষকে খণ্ডিত মানুষ করছে। এর ফলে শাসকশ্রেণীর ফ্যাসিবাদী শাসনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়। সমাজের ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সঠিক যুক্তিবাদী মন তৈরি হচ্ছে না। সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি হচ্ছে না। ছাত্র সমাজকেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
অধ্যাপক কাশেম ফজলুল হক বলেন, ব্রিটিশরা শিক্ষা দিতে চায় নি, পাকিস্তানীরাও চায়নি । স্বাধীন দেশের শাষক শ্রেণীও শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন দরকার।
অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, ইউজিসি’র ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্রের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর সাধারণ মানুষের সন্তানদের জন্য থাকছে না। মুক্তবাজার আর উদারিকরণের নামে শিক্ষাকেও মুনাফা অর্জনের পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে।