Saturday, November 23, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদঅনির্বাচিত সরকারের বৈধতা সৃষ্টির নির্বাচনে বাম মোর্চার বেশিরভাগ দল অংশগ্রহণ করবে না

অনির্বাচিত সরকারের বৈধতা সৃষ্টির নির্বাচনে বাম মোর্চার বেশিরভাগ দল অংশগ্রহণ করবে না

DLA-2 copy

তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ৪ এপ্রিল বেলা ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলন করে। বাম মোর্চার অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোর্চার সমন্বয়কারী ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এড. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, বাসদ (মাহাবুব)-এর মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য –

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

শুভেচ্ছা নেবেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বক্তব্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। আপনারা জানেন, আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে।

গত আড়াই মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা, গুম-ক্রসফায়ার-পেট্রোলবোমা সৃষ্ট নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে হঠাৎ করে যেভাবে নির্বাচন ঘোষণা করা হল তা অস্বাভাবিক। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন গত ৭ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থীরা জিততে পারবে না, এমন আশংকা থেকেই নানা অজুহাতে নির্বাচন করা হয়নি বলে জনমনে ধারণা। আমরা দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন। সে অনুসারে তৎপর হয়ে নির্বাচন কমিশন জুন মাস নাগাদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হল। এর মধ্যে পুলিশের আইজি বললেন, এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনও সেভাবেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন। এইসব ঘটনা প্রমাণ করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলে এবং মহাজোট সরকারের দলীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এসময় নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এই নির্বাচন ঘোষণার লক্ষ্য নয়।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেশে নেই। ৫ জানুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি ও ভোট ছাড়াই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশ চালাচ্ছে মহাজোট সরকার। জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। আর তা করতে গিয়ে মহাজোট সরকার নিপীড়নমূলক, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন চালাচ্ছে। দেশে আজ জান-মালের নিরাপত্তা নেই, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা ও যে কাউকে গুম করে ফেলার লাইসেন্স তুলে দেয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। মত প্রকাশের অধিকার, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অধিকার ও প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে। জনগণের প্রতিনিধিত্ববিহীন সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিচারবিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার পাঁয়তারা চলছে। এই অগণতান্ত্রিক শাসনকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার লক্ষ্যে এবং বিরোধীদের কোণঠাসা করে নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার উদ্দেশ্যে মহাজোট সরকার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় তড়িঘড়ি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশে বিরাজমান সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখে যেভাবে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য যে সরকার দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা তা স্পষ্ট। এধরণের কূটকৌশল গণতন্ত্র ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কোনটাকেই শক্তিশালী করবে না, বরং রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের বিপক্ষে যাওয়ায় পরের প্রতি দফায় ওই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তির জোরে প্রভাবিত করেছে, নিজেদের ইচ্ছেমতো ফলাফল নির্ধারণ করেছে। এমনকি জামাতের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় আঁতাত ও সমঝোতা পর্যন্ত করেছে। উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দূরে থাক, এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আপাত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শুধু জবরদস্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি ক্ষমতাসীন সরকার, স্থানীয় সরকারের সমস্ত স্তরের সকল পদও দখল করার জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পৌরসভা-উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদের বিরোধী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত বা সরিয়ে দিয়ে স্থানীয় সরকারও তার দখলে নিয়ে এসেছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এই বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সম্পূর্ণভাবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে ঘোষণা করছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের কোন সুষ্ঠু পরিবেশ উপস্থিত নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় বামমোর্চাভুক্ত বেশিরভাগ দল অনির্বাচিত সরকারের বৈধতা সৃষ্টির এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের মুখোশ উন্মোচন ও ঢাকা নগরীর পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জনগণের কাছে নিয়ে যেতে আগ্রহী। কিন্তু গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে, বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বিরুদ্ধে বাম মোর্চা সর্বদাই সজাগ থেকে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা বলতে চাই, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার সাথে জনগণের স্বার্থের কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপি আন্দোলনের নামে জনবিচ্ছিন্ন সহিংসতার পথে ক্ষমতাকেন্দ্রিক হানাহানিতে লিপ্ত থেকেছে। এখন আবার জনমনে সরকারবিরোধী ক্ষোভকে ভোটের বাক্সে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলা তাদের লক্ষ্য নয়।

বন্ধুগণ,
আরেকটি বিষয় আমরা বলতে চাই, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে নির্বাচন কমিশন ‘ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার’ বাধ্যতামূলক করেছে, জামানতের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা এবং নির্বাচনী ব্যয়সীমা সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রার্থী হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ধনিক শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নির্বাচনে টাকার খেলাকে উৎসাহিত করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বহুল উচ্চারিত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ধারণার সাথে বিরোধাত্মক। ইতোমধ্যে নির্বাচন শুরু হবার আগেই আওয়ামী লিগের এবং মহাজোটের কোন কোন প্রার্থী নিজেদের বিশালাকৃতির বিলবোর্ড দিয়ে, টেলিভিশন-পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন। অথচ এই সবই বেআইনী, এদের প্রত্যেকের প্রার্থীতা আইন লঙ্ঘনের দায়ে বাতিল হবার কথা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পাড়ায় পাড়ায় অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেমন ভোটারদের তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তেমনি যে কোন প্রকারে নির্বাচনে জয়ী হবার আওয়াজ দিয়ে সামনের দিনে মাস্তানি শক্তির প্র্রয়োগ এবং আইনী হয়রানিরও ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা দলীয় প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্য আপনাদের সবাইকে আবারও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করছি আপনাদের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments