সমাজতন্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ২৮মে ২০১৫ জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে অর্থমন্ত্রী বারাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।। দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্র সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে অর্থমন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয় ।
স্মারকলিপি প্রদানপূর্বক সমাবেশে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু, দপ্তর সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মলয় সরকার, কেন্দ্রীয় সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ রানা। সমাবেশ শেষে একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমাদের সংগঠনসহ অন্যান্য বাম সংগঠনগুলো শুরু থেকেই ইউনেস্কো কর্তৃক প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ২৫% শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি করে এসেছে। কিন্তু আজও সে দাবির প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। বরং স্বাধীনতার পর ক্রমাগত এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমেছে। ১৯৭২ সালে ৭৮৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ২৩.১ ভাগ । সর্বশেষ ২০১৪-’১৫ তে মোট বাজেটের পরিমাণ ছিল প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা কিন্তু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১১ ভাগ। ফলে এই ৪৪ বছরে শিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আপনি জানেন, স্কুলশিক্ষার প্রধান ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি স্কুল। মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে মাত্র ৩১৯টি। ফলে শহরে তো বটেই গ্রাম-গঞ্জেও প্রাইভেট স্কুল-কলেজ গড়ে উঠেছে। পিইসি, জেএসসি নামে দু’টি বাড়তি পাবলিক পরীক্ষা অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যয় ও মানসিক চাপই কেবল বৃদ্ধি করেছে।
বাধ্যতামূলক কোচিং, গাইডবই নির্ভরশীলতা আর প্রশ্নপত্র ফাঁস – এগুলো বিষফোঁড়ার মতো শিক্ষার কাঠামোগত ও নৈতিক ভিত্তিকে সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করলেও এর প্রাথমিক আয়োজন- পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, দক্ষ শিক্ষক, উন্নত লাইব্রেরি, আনুষঙ্গিক সাংস্কৃতিক আয়োজন নিশ্চিত করা হয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড়সম সমস্যা-সংকটের আবর্তে অথর্ব – অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গ্রেডিং পদ্ধতির নিয়মে ২১০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাসরুম-শিক্ষক সংকটের কারণে ৬০-৭০ দিনের বেশি ক্লাস হয়না। সিলেবাস শেষ না করেই সেশনজট নিরসনের টোটকা ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’র নামে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ফলে নেমে যাচ্ছে শিক্ষার মান। লাইব্রেরি-সেমিনারে রেফারেন্সের বই পাওয়াই দায়।
আবাসন-পরিবহন আর গবেষণার অবস্থাও তথৈবচ! এর সমাধান হিসেবে ঐতিহ্যবাহী কলেজসমূহকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং তার অধীনে জেলার অন্যান্য কলেজকে অধীভুক্ত করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। এই দাবি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ না দিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান এসব সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান হবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি-র ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র বাস্তবায়নের ১ম পর্যায়ের দশ বছরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ আয়ের নামে বাড়ানো হচ্ছে ছাত্র বেতন-ফি, ভাড়া দেয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা। বিভাগগুলোতে চালু করা হচ্ছে বাণিজ্যিক নাইটকোর্স, নানা সার্টিফিকেট কোর্স। বিভাগগুলোকেও আর্থিক লেনদেনের একটা কেন্দ্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে। চালু করা হচ্ছে শিক্ষাধ্বংসকারী পিপিপি-হেক্যাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাণ’ গবেষণা খাতে বরাদ্দ ১ শতাংশেরও কম। ১/২টি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই আবাসন-পরিবহনসহ অবকাঠামোগত আয়োজন অপ্রতুল। উপর্যুক্ত শিক্ষার সামগ্রিক সমস্যা-সংকটের কার্যকর সমাধানে শিক্ষায় বিশেষ বর্ধিত বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রেক্ষাপটে স্মারকলিপিতে আসছে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ২৫% বরাদ্দের জোর দাবি জানানো হয়েছে।