নতুন অর্থবছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আমরা জানতে পেলাম, বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ। এ খবরটি আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশটি যে ‘মধ্য আয়ের’ দেশে পরিণত হয়েছে সেটা দেশের বেশিরভাগ মানুষ টেরই পেল না। শুধু এক ময়মনসিংহ শহরে যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে শিশু-নারীসহ ২৭ জন মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করল। আর এর আগে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে পাচার হয়ে যাওয়া হাজার হাজার মানুষের করুণ পরিণতির খবরও তো আমাদের স্মৃতিতে এখনো তাজা। তারপরও বাংলাদেশ আর গরিব দেশ নেই!
অবশ্য প্রতিদিন চোখের সামনে অল্প কিছু মানুষের বিলাস-ব্যসন আর চাকচিক্য, হিমালয় সমান বিত্ত-বৈভব দেখে গরিব মানুষদের মনেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়, এ দেশটা আর গরিব মানুষের দেশ নেই। নিজেদের পেটে ভাত, পরনের কাপড় না থাক, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা-চিকিৎসা না থাক, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাক, চারদিকেই তো শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন! সবেধন নীলমণি বিটিভি’র পরিবর্তে এখন ২৪-২৫টি নানা নামের টেলিভিশন চ্যানেল, ঢাকা শহরের এখানে ওখানে গজিয়ে ওঠা শত শত হাইরাইজ ভবন, বিরাট বিরাট শপিং মল, রাস্তায় কোটি কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি — এমনি আরো কত কি! মধ্য আয়ের কেন, এ দেশটাকে তো বড়লোকের দেশই বলা উচিত!
মধ্য আয়ের দেশ কথাটার মানে কি?
যদিও দেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের সুবিধার জন্য সদস্য দেশগুলোকে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ — এই চার ভাগে ভাগ করেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে। এখন বিশ্বে নিম্নআয়ের দেশ আছে ৩১টি, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ ৫১টি, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ৫৩টি এবং উচ্চ আয়ের দেশ ৮০টি। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘ আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ। জাতিসংঘের তালিকার এরপরের ধাপ উন্নয়নশীল দেশ, শেষ ধাপ উন্নত দেশ। জাতিসংঘ তাদের হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক সূচক ব্যবহার করে থাকে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নাগরিক সুবিধা। আর বিশ্বব্যাংকের তালিকাটি শুধু আয়ভিত্তিক। ফলে এখানে কোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্রটি বোঝা যায় না।
বিশ্ব ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে পর পর তিন বছরের বিনিময় হারভিত্তিক গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় যদি ১ হাজার ৪৫ ডলারের বেশি হয় তাহলে সেই দেশটিকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এ আয় যদি ৪ হাজার ১২৫ ডলার অতিক্রম করে তাহলে সেই দেশটিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আর এই জাতীয় আয় যদি ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পেরিয়ে যায় তাহলে সেটিকে চিহ্নিত করা হয় উচ্চ আয়ের দেশ হিসাবে।
ধাপ্পাবাজির ‘মাথাপিছু আয়’
‘মাথাপিছু আয়’ কথাটির মধ্যে অনেক ফাঁকি থেকে যায়। কথিত বিলিয়নিয়ার মুসা বিন শমসেরের নাম অনেকেই জানেন। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে তার টাকা জব্দ হওয়ার ঘটনায় তিনি আলোচনায় এসেছেন। তো এই মুসা বিন শমসের যে কলমে সই করেন তার দাম ৭৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণে তৈরি কলমটিতে রয়েছে ৭৫০০টি হীরকখ-। হীরকখচিত যে জুতা তিনি পায়ে দেন তার প্রতি জোড়ার মূল্য ১ লাখ ডলার। তার ঘড়ির দাম মিলিয়ন ডলার। তো এই মুসার আয়ের সাথে বাংলাদেশের একজন দরিদ্র শ্রমিক বা কৃষক, যার নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তার আয় যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলে ওই কৃষক বা শ্রমিকও কোটি পতি হিসাবে গণ্য হবেন। অথচ ওই শ্রমিক/কৃষক যে হতদরিদ্র দশায় ছিলেন সে দশাতেই থাকবেন।
আসলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির নিয়মে দেশে একজন কোটিপতি তৈরি হলে, তাঁর জন্য এক হাজার মানুষকে গরিব হয়ে যেতে হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের জাতীয় পর্যায়ের পরিবারভিত্তিক আয় বণ্টন চিত্রে দেখা যায়, ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ এবং এর ওপরের ডিসাইল এক এবং ডিসাইল দুই অর্থাৎ দরিদ্রতম ২৫ শতাংশের আয় কমে গেছে। আয় বেড়েছে ধনী ৫০ শতাংশের। এ প্রক্রিয়াতেই স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বেশিরভাগ মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করে, লুণ্ঠন করে, কোটি কোটি শ্রমজীবী শ্রমিক-কৃষককে শোষণ করে তৈরি হয়েছে কোটিপতি শ্রেণী। আর স্বাধীনতার পর থেকে মানুষের নিঃস্ব হওয়ার হার বাড়ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে, অভাব বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে।
বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরিব মানুষের সংখ্যা
সরকারি হিসাবে, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়াঁয় ৪৭ জন। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৫৪। অর্থাৎ ব্যাংকে আমানত টাকার হিসাবে দেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ হাজার। আর বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ এবং অবৈধ সম্পদ ও বিদেশে পাচার করা টাকার পরিমাণ ধরলে বাস্তবে এ দেশে কোটিপতির সংখ্যা লক্ষাধিক হওয়ায় সম্ভাবনা। এসব হিসাব থেকে আরো দেখা যাচ্ছে গত পাঁচ বছরে (২০১০-’১৪) ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।
এর বিপরীতে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হিসাবে বাংলাদেশ এখনও কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। এদের আয় দৈনিক ২ ডলারেরও কম অর্থাৎ ১৫০ টাকা। গত কয়েক বছরে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার ফলে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। সুতরাং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৪৮-এ উঠে গেছে। প্রকৃত হার কিন্তু আরো বেশি, প্রায় ৫০ শতাংশ। যার অর্থ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। অর্থাৎ স্বাধীন হওয়ার সময় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা যা ছিল এখন সে পরিমাণ মানুষ দরিদ্র।
সীমাহীন লুটপাটের ফসল বিপুল কালোটাকা
আইনগত ও বৈধ পন্থার বাইরে যে টাকা উপার্জন করা হয়, সেটাকেই কালো টাকা বলা হয়। বাংলাদেশ এখন বিপুল কালোটাকা ও অবৈধ টাকার দেশ। এই চিত্রটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দেশের বাস্তব চিত্রটি কি। এই সংখ্যা দেখিয়ে দেয় যে এদেশে পুঁজিবাদী পন্থায় বৈধ ও আইনগত শোষণের পাশাপাশি কি ভয়াবহ লুণ্ঠন-দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশে কালোটাকার পরিমাণ নিয়ে বহু দিন ধরেই অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কালো টাকা জন্ম নেয়ার পথ বন্ধ করা দূরে থাক, কালো টাকার মালিকদের শাস্তি দেয়া, কালো টাকা জব্দ করার কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। অথচ অর্থনীতিবিদদের দেয়া ২০১৪ সালের এক হিসাবে গত ৪২ বছরে দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪২ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রতিবছর এর পরিমাণ বাড়ছে, দেশের ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ বা ছায়া অর্থনীতিতে বছরে ৭০ হাজার কোটি কালো টাকা যুক্ত হচ্ছে।
এই কালো টাকার একটি অংশ পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১২টি দেশ চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এন্টি মানি লন্ডারিং টাস্কফোর্স। এর আগে মালয়েশিয়ান সরকারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে চীন। এগুলো সবই হয়েছে টাকা পাচারের মাধ্যমে।
দেশ থেকে টাকা পাচারের আরো একটি নমুনা হল সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ। সারা দুনিয়া থেকে যখন সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় মোট গচ্ছিত অর্থ কমেছে, তখন বাংলাদেশ থেকে তা বেড়েই চলেছে। সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের আমানত ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে বাংলাদেশীদের জমার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে তা ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। কোনো বাংলাদেশী তার নাগরিকত্ব গোপন করে টাকা জমা রাখলে সেসব তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই।
ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক যুগে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৬টা পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। আলোচ্য সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৯০৩ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ এফডিআই দেশে এসেছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
লুটেরাদের উল্লাস আম জনতার গলায় ফাঁস
বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা করেছে সেই সময় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করে। এই পানিতে আর্সেনিক এবং ই. কোলাই (মলের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া) সংক্রমণ আছে। শুধু সুপেয় পানির দিক থেকেই কি ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসছে! এমন অবস্থা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-কর্মসংস্থানসহ অপরাপর সকল ক্ষেত্রেই।
২০১৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, কমনওয়েলথসহ একাধিক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান মতে, এই হার বজায় থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ কোটিতে। পরিসংখ্যান বলছে, বেকারত্বের হার শিক্ষিত জনসাধারণের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্ব বাড়ার হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ২৭ লাখ আর চাকরি পাচ্ছে মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার। অপরদিকে যে বিশ্বব্যাংকের সার্টিফিকেট নিয়ে এত হৈচৈ, সেই বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর এখন প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছেন।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে শাসক দল আওয়ামী লীগ বলেছিল, তারা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের একটি দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বিএনপি পাল্টাপাল্টি বলেছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তারা উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ বানাবে। একতরফা নির্বাচনে গায়ের জোরে আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন। আর তাদের আমলেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার ঢক্কনিনাদ দিকবিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যে পুঁজিবাদী শোষণ-লুটপাটের প্রক্রিয়ায় দেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সম্পদ বাড়ছে, যা দেখিয়ে এদেশকে একটি নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে চালানো হচ্ছে তার আসল চেহারা কত বর্বর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, লুটেরাদের এই উল্লাসের আড়লে আছে ফ্যাসিবাদী শাসনের আড়ালে গলায় ফাঁস পরানো লক্ষ কোটি সাধারণ মানুষ।