শিক্ষব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলুন
শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ৯নং জোনের (সিলেট বিভাগ) উদ্যোগে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ৩:৩০টায় বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং পরিচালনা করেন সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা।
ছাত্র সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গত ১ মাস ধরে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সিলেট বিভাগের প্রায় সকল অঞ্চলে প্রচার-প্রচারনা ছাত্র সংযোগ করেন, এতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সমাবেশ সফল করার জন্যে নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও করেন। ছাত্র সমাবেশের ঘোষিত সময়ের পূর্ব থেকেই শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অঞ্চল থেকেই শুধু নয়, একে একে মিছিল সহকারে সমাবেশে জড়ো হতে থাকেন হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীরা। বিভাগীয় ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দী, সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াৎ আহমেদ, শাবিপ্রবি শাখার কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অপু কুমার দাস, হবিগঞ্জ জেলার সংগঠক এনামুল হক ,সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলার রানা বাউড়ি সংগঠক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে শত শত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সুশৃঙ্খল এবং সুসজ্জিত মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। আজ থেকে ৫৪ বছর পূর্বে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহী এই সত্যকে ভূলিয়ে দিতে চেয়েছিল। ‘শিক্ষা সস্তায় পাওয়া যাবে না’ এই নীতির বিরুদ্ধে সেদিন ছাত্ররা রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লার রক্তের বিনিময়ে শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার এই দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ স্বাধীন দেশের ৪৪ বছর অতিক্রান্ত প্রায়, দেশের ঠাট-বাট অনেক কিছুর পরির্বতন হলেও শাসকদের শিক্ষা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয়নি। আবার বিশ্বব্যাপী মরণাপন্ন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তার ঠিকে থাকার স্বার্থে শিক্ষাসহ পরিসেবা খাতকে বাণিজ্যিকীকরণের আওতাধীন করছে। এদেশের শাসক গোষ্ঠিও এই নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। ফলে একদিন জনগনের বহু আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে যে সরকারি বা পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তাকেও সুকৌশলে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে আবার ক্রমাগত উৎসাহিত করা হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। অন্যদিকে এই আয়োজন শুধুমাত্র কিছু আইন করেই বাস্তবায়ন করা যায না, তাই তার পরিপূরক মনন কাঠামোও গড়ে তুলতে হয়। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি থেকে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলও সেরকম করে গড়ে তুলা হচ্ছে। সিলেটের শিক্ষা চিত্র এ থেকে ভিন্ন নয়। সিলেট বিভাগের স্কুল পর্যায়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই প্রধান ধারা, এই বিভাগের কয়েক কোটি মানুষের জন্যে সরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে মাত্র ১৫৮টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এদিকে শতাব্দী প্রাচীন এম.সি কলেজে এখনও চালু হয়নি বাণিজ্য অনুষদ, সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ সরকারিকরণ হলেও ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন কলেজকে সরকারিকরণ করা হয় নি। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে এখনও সব বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়নি। শাবিপ্রবিকে পিপিপি’র মডেল করে দিয়ে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ নামিয়ে আনা হয়েছে শূন্যের কোঠায়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণারই বিরোধী। শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ চিত্রটি ফুটে ওঠে চা শ্রমিকদের দেখে। ১০ লক্ষাধিক জন্যে মাত্র ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে। সম্প্রতি সময়ে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন এ কথাই প্রমাণ করলো যে আন্দোলন ছাড়া শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়নের কোন বিকল্প পথ নেই।
বক্তারা শিক্ষার অধিকার আদায়ে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি সারাদেশে দ্রবমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ আমাদের দেশের তেল-গ্যাস নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের জনগনকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।