সংগ্রামী বন্ধুগণ,
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ৪র্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে বিপ্লবী অভিবাদন গ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত প্রণীত কোনো শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার স্বীকৃত হয়নি। লর্ড মেকলের কেরানি তৈরির শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছিলেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে ‘টাকা যার শিক্ষা তার’ এই নীতির বিরোধিতা করেছিল ছাত্র-জনতা। কিন্তু সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার অপূরিত থেকেছে। বরং ’৯০ পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসারের কারণে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সেবাখাতসমূহের ব্যাপক বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। বাংলাদেশেও এর অংশ।
শিক্ষার সর্বজনীন অধিকারকে সমুন্নত রাখতে অতীত যুগের বড় মানুষের উত্তরসূরী হিসেবে ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে। সেই থেকে শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষার সংগ্রামে আমাদের সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সে লড়াই যেন গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সংস্কৃতি-মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। পুঁজিবাদসৃষ্ট ভোগবাদ মানুষকে ক্রমাগত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও বিচ্ছিন্ন করছে, সবকিছুকে লাভ-লোকসানের সাথে সম্পর্কিত করছে। একদিন নজরুল বলেছিলেন, “দাসত্ব গোলামী ছাড়িয়া দিলে খাইব কি করিয়া? কি নীচ প্রশ্ন! যেন আমাদের শুধু কুকুর বিড়ালের উদর পূর্ত্তির জন্যই জন্ম।” তাই নজরুলের মতো মনীষীদের ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ দেশ সূর্য সেনের দেশ, যে সূয সেন মৃত্যুর আগে তরুণদের আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশের কাজে ব্রতী হবার। কিন্তু আজ তরুণরা সূর্য সেনকে চেনে না। চিনতে দেয়া হয় না। যে সব চরিত্র মানুষকে সামাজিক করে, বড় মানুষ হবার প্রেরণা জোগায়, শিক্ষাব্যবস্থায় তাঁদের তুলে ধরা হয় না। বরং স্কুল থেকেই নানাভাবে ছাঁচে ঢালা মানুষ বানানোর চেষ্টা করা হয়।
আজ অবস্থা এমন, রাজনীতির কথা শুনলে ছাত্ররা পিছিয়ে যায়। বুর্জোয়া সংগঠনের আদর্শবর্জিত রাজনীতিই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সত্য-ন্যায়ের ঝান্ডাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সারাদেশের ছাত্র-জনতার সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সম্মেলনেও শিক্ষক-অভিভাবক-শ্রমজীবী জনসাধারণের ব্যাপক নৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। এটাই আমাদের শক্তির জায়গা।
আজ যারা আমাদের এই সম্মেলনে এসেছেন তাদের সবাইকে আহ্বান করছি, শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষার আন্দোলন গড়ে তুলতে আপনারা সাহসের সাথে এগিয়ে আসুন। সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, একই পদ্ধতির, গণতান্ত্রিক শিক্ষার যে লড়াই আমরা করছি তাতে শামিল হোন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এই নিস্তরঙ্গ সময়ে জনগণের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে লড়ছে। একে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।
সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা।
নাঈমা খালেদ মনিকা, আহ্বায়ক, চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি