তনু হত্যাসহ সারাদেশে নারী ও শিশু হত্যার বিচারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকা আগামী ২৫ এপ্রিল’১৬ এর হরতাল কর্মসূচী সফল করার আহ্বান জানিয়ে ২৩ এপ্রিল বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাব চত্বরে মিছিল সমাবেশ করেছে ৬টি নারী সংগঠন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, নারী সংহতি, বিপ্লবী নারী ফোরাম, শ্রমজীবী নারী মৈত্রী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন (পূর্ণ শাসনের লড়াইয়ে আপোষহীন) ও বিপ্লবী নারীমুক্তি। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রর সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল, বিপ্লবী নারী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক আমেনা আক্তার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও বিপ্লবী নারীমুক্তির আহ্বায়ক নাসিমা নাজনিন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০ মার্চ ২০১৬ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের এক মাস পার হলো। তদন্তরত সিআইডি কর্মকর্তারা ক্যান্টমেন্ট’র মত সুরক্ষিত এলাকায় ঘটে যাওয়া তনু হত্যার প্রতিবেদনে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এখনও অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর নববর্ষে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার হয়নি। এর আগে এবং পরে আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে কল্পনা চাকমা অপহরণের পর আজ ২০ বছর পার হয়ে গেল, কোন বিচার হয়নি। বরং অপরাধীকে কাজে বহাল রেখে পুরষ্কৃত করা হল। কারণ সেই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল সেনাবাহিনী। নববর্ষে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এভাবে প্রতিটি ঘটনায় দেখা গেছে অপরাধীরা কোন না কোনভাবে সরকারি দলের সাথে যুক্ত অথবা তাদের কাজে লাগিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার পথকে শক্তিশালী করছে। সৃষ্টি হয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
আজ যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তখন প্রধানমন্ত্রী তার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। একদিকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে আর একদিকে পর্নোগ্রাফী, নাটক-সিনেমা-যাত্রা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসাবে উপস্থাপন করে তাঁর সম্ভ্রম নষ্ট করা হচ্ছে। মাদক- জুয়াসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য ছেলে মেয়েদের সামনে সুলভ করে দিয়ে তাদের চরিত্র ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিদিন ঘরে বাইরে শুধু তনু নয়, আড়াই বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধ নারী যৌন হয়রানি, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার। এমনকি প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও শিক্ষকদের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এমনি এক পরিস্থিতিতে পুলিশ সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে দিন দিন মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার কাজে নিযুক্ত আছে। সারা দেশে যারা প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের বাইরে কাজ করে না। রাষ্ট্রের এমনই বৈরী পরিস্থিতিতে আজ সাধারণ জনগণের ঘরে বসে থাকার কোনো উপায় নেই। তাদেরকে পথে নামতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে অপরাধীরা অবশ্যই এই সমাজ থেকে বিতাড়িত হবে।
নেতৃবৃন্দ তনুসহ সারা দেশে নারী শিশু নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ২৫ এপ্রিল প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকা হরতালকে সকল দিক থেকে সফল করে তোলার আহ্বান জানান।