Sunday, November 24, 2024
Homeফিচার২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিক্ষোভ সমাবেশ

২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিক্ষোভ সমাবেশ

আফসানা ও তনু হত্যার বিচার, বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ এবং নারী ও শিশু হত্যাকারী-নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; ঘরে-বাইরে নারী ও শিশুসহ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে সারাদেশ থেকে সংগৃহিত ৪৫ হাজার স্বাক্ষরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ

IMG_5653

২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। এই দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র দেশব্যাপী ‘আফসানা ও তনু হত্যার বিচার, বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ এবং নারী ও শিশু হত্যাকারী-নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; ঘরে-বাইরে নারী ও শিশুসহ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’ সহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবি, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার বিউটি।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, একটা ভয়াবহ দুঃসহ অবস্থা অতিক্রম করছে সারাদেশের মানুষ। নারী-শিশুর জীবনে এই দুঃসহতা যেন আরো বেশী। কারন শিশু থেকে বৃদ্ধ কোন নারীই আজ নিরাপদ নেই। একের পর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে কোন ঘটনা আলোড়ন তুলে, কোনটি আবার হারিয়ে যায় অচিরেই। ১৯৯৫ সালে এমনি একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার জন্ম দিয়েছিল দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন। বহুদিন একটানা ঢাকায় গৃহ শ্রমিকের কাজ করে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অভিপ্রায়ে বাড়ি ফেরার পথে দিনাজপুরের দশমাইল নামক স্থানে পুলিশের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে ইয়াসমিন। এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে দিনাজপুরবাসী। এই আন্দোলনে সাত জন ভাই শহীদি আত্মদান করে । সারাদেশের বিবেকবান সচেতন মানুষের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন আইনি লড়াইয়ের পথেও সফল হয়। জড়িত পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এরপর থেকেই ২৪ আগস্ট পালিত হয়ে আসছে “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে।

IMG_5711নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ইয়াসমিনের পরও নারী নির্যাতন থেমে থাকেনি। নির্যাতিতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। অসংখ্য নাম যুক্ত হয়েছে এ তালিকায়। সর্বশেষ স্মরণযোগ্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু, ঢাকার সাইক পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্রী ফেরদৌস আফসানা। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অনায়াসেই জানান দেয় এ তালিকায় আরো বহু নাম যুক্ত হবে, অকাতরে নিঃশেষ হবে বহু মূল্যবান প্রাণ। মুনাফাকেন্দ্রিক এ সমাজ একদিকে নারীকে পণ্য বানায় অপরদিকে তার শ্রম লুন্ঠন করে তাকে সর্বস্বান্ত করে। আবার এই নারীদের উপরই চাপিয়ে দেয় ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো হাজার একটা নিপীড়ণ। ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পেশী শক্তি আর অর্থশক্তির বলে বলীয়ান অন্যায়কারীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। যে কারণে আমরা দেখেছি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা। ক্যান্টনমেন্টে খুন হওয়া মেধাবী ছাত্রী তনুর ময়না তদন্তের রির্পোট আলোর মুখ দেখেনি এতদিনেও। বরং বিচার চাওয়ার কারণে হুমকির শিকার হতে হচ্ছে তার পরিবারকে। আফসানা হত্যায় জড়িত তেজগাঁ কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। অশ্লীলতা অপসংস্কৃতির প্রভাবে, মাদক, জুয়ার সহজলভ্যতায় স্কুল-কলেজের ছাত্র, যুবক-তরুণদের চরিত্র ধ্বংস করে প্রতিবাদ বিমুখ করে দেয়ার চক্রান্ত চলছে গোটা সমাজজুড়ে। এই যখন সার্বিক পরিস্থিতি তখন একটি বিপ্লবী নারী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এই অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ করে চলেছে। গত চার মাস ধরে নারী শিশু হত্যাকারী নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবীতে সারাদেশে ৪৫ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, অবস্থান কর্মসূচী, পথ সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা সংগৃহিত ৪৫ হাজার স্বাক্ষরসহ ৫দফা দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি পেশের কর্মসূচী পালন করছি এবং আগামীদিনেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সমাবেশ শেষে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে স্বারকলিপি প্রদান করেন।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments