Monday, November 25, 2024
Homeফিচারআন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে শুরু হলো ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডমার্চ

আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে শুরু হলো ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডমার্চ

fullsizerender-1-copy

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)- এর উদ্যোগে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদ, বাংলাদেশ সরকারের নতজানু নীতি এবং ভারতের আগ্রাসী পানি নীতির বিরুদ্ধে আজ আজ ২ অক্টোবর সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডমার্চ শুরু হয়েছে। রোডমার্চ শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পানি ও নদী বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক, দৈনিক সমকালের সহ-সম্পাদক এবং পানি বিশেষজ্ঞ শেখ রোকন, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মজহারুল ইসলাম বাবলা।

কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদী দিয়ে গঠিত। ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রকৃতি এবং তার সাথে যুক্ত দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নদী প্রবাহের উপর। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার নদী নিয়ে, দেশের পানি সম্পদ নিয়ে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের আগ্রাসী পানি নীতি বহাল রেখেছে স্বাধীনতা পূর্ব এবং তার পরবর্তীতে। ভারত থেকে আসা সবগুলো নদীতেই তারা বাঁধ দিয়েছে। এর আগে পরীক্ষার কথা বলে ফারাক্কা নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছিল। ফারাক্কা নদীতে দেয়া বাঁধের কুফল আজও বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে। এ বছরে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে এই সর্বনাশা বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে। এবার ভারত সরকার তাদের দেশের পুঁজিপতিদের স্বার্থে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পানির যোগানদাতা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা যদি তারা সম্পন্ন করতে পারে তবে তা আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। উত্তরবঙ্গ ক্রমাগত মরুকরণের দিকে যাবে। আমাদের কৃষিজমি-প্রকৃতি-প্রাণ ধ্বংস হয়ে যাবে। বন্ধুত্বের কথা বলে ভারত অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্ত ক্ষেত্রগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অথচ পানিসম্পদের ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার ন্যূনতম দায়িত্ববোধেরও পরিচয় দিতে পারেনি। যেখানে খোদ ভারতেরই বড় বড় পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে অথচ বাংলাদেশের সরকার তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারতের সাথে যুক্তিসঙ্গত পানি বন্টন নীতিমালার ভিত্তিতে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছে না। তাই দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে এই সর্বনাশা মহাপরিকল্পনার বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ম. ইনামুল হক বলেন, ‘ভারত যে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী। একইসাথে এটি ভারতেরও ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থকে ক্ষুণœ করবে। নদীকে এভাবে শাসন করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। কেননা প্রকৃতিও প্রতিশোধ নেয়।’

শেখ রোকন বলেন, ‘নদী নিয়ে ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং বাংলাদেশ সরকারের অবহেলার প্রতিবাদে যে আন্দোলন এই রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তা আগামী দিনে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ঘটাতে পারে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ভারত সরকার কেবল পরিকল্পনাই করেনি, তা সম্পাদনের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে। এই প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয় তবে তা বাংলাদেশের জন্য ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিণতি। সময় থাকতেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এই আন্দোলন হলো সর্বব্যাপক, তাই দেশপ্রেমিক-প্রগতিশীল সকল মানুষ ও সংগঠনকে এই লড়াইয়ে শামিল হতে হবে।’

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান পর্যন্ত যাবার পরিকল্পনা থাকলেও প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে হাইকোর্টের সামনে কদম ফোয়ারার এসে শেষ হয়। এরপর রোডমার্চের নেতা-কর্মীরা বাসযোগে যাত্রা শুরু করেন। আজ বিকেলে রোডমার্চ বগুড়ার শেরপুরে পথসভা এবং সাতমাথায় সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে। এরপর রোডমার্চ আগামী ৩, ৪, ৫ অক্টোবর যথাক্রমে গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রামে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে মিলিত হবে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments