ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে ২-৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত রোডমার্চ আজ (৫ অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় কুড়িগ্রাম শহরে পৌছেছে। এর আগে সকালে রংপুর থেকে যাত্রা শুরু করে কাউনিয়া, তিস্তা, সিংগের ডাবরি, রাজারহাটে পথসভা করে। কুড়িগ্রামে কলেজ মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে দাদা মোড়, জিয়া বাজার ঘুরে কুড়িগ্রাম শহীদ মিনারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। বাসদ ( মার্কসবাদী) কুড়িগ্রাম জেলার সংগঠক মহিরউদ্দিন মহিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, কমরেড মানস নন্দী, সাইফুজ্জামান সাকন, গাইবান্ধা জেলা শাখার সমন্বয়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা। সমাবেশ পরিচালনা করেন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী আজ মৃতপ্রায়। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তাপারের হাজার হাজার মানুষ হাহাকার করছে। ফারাক্কা বাধের কারণে পদ্মা অববাহিকায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। এখন আর এক বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে, যার নাম আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এদেশের প্রধান নদী ব্রক্ষ্রপুত্র কালক্রমে শুকিয়ে মরবে, বাংলাদেশ এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নদীকে কেন্দ্র করেই এখানকার অর্থনীতি, সংস্কৃতি তথা জীবনযাত্রা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ভারত সরকার তাদের দেশের সাধারণ জনগন ও এদেশের মানুষ তথা জীব বৈচিত্রের কথা বিবেচনা না করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১২০০ নদীর দেশে এখন দুই ’শতর বেশী নদীও জীবিত নেই। এখন যদি আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অন্যতম প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র কালক্রমে শুকিয়ে মরবে। শুধু তাই নয় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১ কোটি ৩০ লক্ষরও বেশী মানুষ গৃহহীন হবে। নদীর উপর নির্ভশীল ১০ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। তাই এটা দুই দেশের মানুষের উপর পারমানবিক বোমা হামলার চেয়েও ভয়ংকর চিরস্থায়ী বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। ফলে নদী, কৃষক তথা দেশ বাঁচাতে হলে এর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের সোচ্চার হওয়া জরুরী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এদেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী তাদের সেই দায়িত্বে অবহেলা করে আসছে। বর্তমান সরকার ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে জিগির তুলছে অথচ এদেশের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে না। বরং সাম্রাজ্যবাদী ভারত রাষ্ট্রের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তাই দেশের স্বার্থ এবং মানুষকে রক্ষার জন্য জনগণেরই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য, রোডমার্চটি গত ২ অক্টোবর ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আজ ৫ অক্টোবর কুড়িগ্রামে এসে সমাপ্ত হয়। সমাপনী সমাবেশ শুরুর পূর্বে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি টিম আন্ত:নদী সংযোগ নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করে উপস্থিত জনতাকে উদ্দীপ্ত করে।