ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পর্নো পত্রিকা-সিডি-বই বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা-মাদক-জুয়া বন্ধ করতে হবে
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ১৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পর্নো পত্রিকা-সিডি-বই বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা-মাদক-জুয়া রোধসহ নাটক-সিনেমা-যাত্রায়-বিজ্ঞাপনে নারী দেহের অশ্লীল উপস্থাপনা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের জন্য স্মারকলিপি প্রদান কর্মসুচির পূর্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবি, অর্থ সম্পাদক তসলিমা আক্তার, সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা ও ঢাকা নগর কমিটির সদস্য ইভা মজুমদার।
তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই তিনটি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান পূর্বে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট, পর্নোগ্রাফি ও মাদকের বিস্তার নারী নির্যাতনের হার বাড়াচ্ছে। ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বিপরীতে একটি ভোগবাদী সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ করে দিয়েছে। স্কুলগামী ছেলে-মেয়ে-তরুণ-যুবকরাই এই পর্নো ওয়েবসাইট দেখছে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে ১৮ বছরের নিচে ৭৭% স্কুলগামী ছেলে- মেয়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখে।
শুধু তাই নয়, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-হেরোইন ইত্যাদি নানা নামের মাদক আজ কিশোর বয়সী স্কুল ছাত্র থেকে শুরু করে তরুণ-যুবকদের মধ্যে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে শিশু থেকে বৃদ্ধ কোন নারীই আজ যৌননিপীড়ন-নির্যাতন-সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না । তাই তনু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের পর আফসানা, রিশার পাশে ঠাঁই পেয়েছে নিতু মন্ডল, ডালিয়া, মরিয়ম, শেলী, কনিকা ও খাদিজা নামের আরো অসংখ্য কিশোরী-তরুণী-যুবতী নারীর নাম।
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রা-পালা-জারী গান আজ ধ্বংসের মুখে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার নামে সমাজের মধ্যে অবক্ষয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর শীতকালে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায়-গ্রামাঞ্চলে যাত্রা গানের আয়োজন করা হয়। সেই আয়োজনে যাত্রার নামে নারীর দেহের অশ্লীল উপস্থাপনার পাশাপাশি মাদক সেবন ও জুয়ার আসর বসানো হয়।
আবার নারীকে পণ্য বানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, নাটক, সিনেমা ও যাত্রা তৈরি করা হয়। সেসব বিজ্ঞাপন-নাটক-সিনেমা ও যাত্রা দেখার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা করার মনন সৃষ্টি হয় না। এর মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ব-বিবেককে ধ্বংস করা হয়। ফলে কিশোর বয়স থেকে সিনেমার পেশী বহুল হিরোদের মত করে নিজেদের ভাবমানস তৈরি করে কিন্তু মনুষ্যত্ব-বিবেক সৃষ্টি করতে মহাপ্রাণ মানুষ হিসেবে বিদ্যাসাগর, নজরুল, শরৎচন্দ্রের মত মানুষকে শাসকশ্রেণী কিশোর-তরুণ-যুবসমাজের সামনে আনে না। সেকারণে আমরা মনে করি, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার জন্য যাত্রা-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, নারীসহ সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, শিশু-কিশোর তরুণদের রক্ষা করতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলিকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। সমাবেশে বক্তারা সকল নাগরিককে একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ নির্মানে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।