Friday, November 22, 2024
Homeফিচারসংগঠিত, সচেতন, দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনই বর্তমানে প্রয়োজন

সংগঠিত, সচেতন, দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনই বর্তমানে প্রয়োজন

“ … আমরা যে বিপ্লবের কথা বলি, যে যুদ্ধ আমরা গড়ে তুলতে চাইছি, তা হচ্ছে শ্রেণিযুদ্ধ অর্থাৎ জনযুদ্ধ। সমস্ত জনতার এক বিরাট অংশকে সংগঠিত করে বিপ্লবী রাজনৈতিক চেতনায় ও বিপ্লবের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই একমাত্র সেই ‘প্রোট্রাকটেড’ বা দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধ সম্ভব। হঠাৎ কোন একটা বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মানুষের যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, যে আন্দোলনের মধ্যে বিপ্লবী মতাদর্শের বা বিপ্লবী তত্ত্বের কোন ‘কনভিকশন’ (ভিত্তি) নেই, সেই ধরনের ‘স্পোরাডিক’ বা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন থেকে এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধ কখনোই জন্ম নিতে পারে না।

 

মানুষের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনগুলো গড়ে ওঠছে সেই আন্দোলনগুলোকে নেতৃত্ব দিতে দিতে তার মাধ্যমে জনতাকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে যদি আমরা জনগণের সংগ্রামের হাতিয়ারগুলো একদিন গড়ে তুলতে পারি তবেই একমাত্র এ জিনিস সম্ভব। অথচ, আমাদের দেশের আন্দোলনগুলোর চরিত্র কি সেই রকম? এখানে কী ধরনের আন্দোলন হচ্ছে? যেমন, খাদ্যের দাবিতে দেশের অভ্যন্তরে একটা আন্দোলন এসে গলে, লড়াই এসে গলে, তাতে হাজার-হাজার লোক সামিল হ’ল, লড়ালড়ি হ’ল, তারপর সেই লোকগুলো আবার হারিয়ে গেল। কেন হারিয়ে গেল? কারণ, যে হাজার হাজার মানুষ এই আন্দোলনের মধ্যে এসে গলে সেই মানুষগুলো বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসেনি–বিপ্লব করবার জন্য, বিপ্লবী পার্টি গড়ার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করার মতন ধৈর্য, চেতনা, ডেডিকেশন, মানসিকতা তাদের মধ্যে গড়ি ওঠেনি। অথচ এ কথাও সত্য যে, তারা হাজারে হাজারে ঝাঁকে ঝাঁকে সেই লড়াইয়ের ময়দানে এসেছিল। একটা ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনের যে আবহাওয়া গড়ে উঠেছিল, সেই আবহাওয়ায় তারা এসে জড়ো হয়েছিল। এই ধরনের হাজার হাজার মানুষের আন্দোলন প্রতিদিন দেশে গড়ে ওঠে না। মানুষের মধ্যে বিক্ষোভ জমতে জমতে একদিন যে-কোনো একটা ইস্যুকে ভিত্তি করে, নেতৃত্ব থাক আর না থাক, সেটা ফেটে পড়ে। এই ফেটে পড়া স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনটার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা না থাকার ফলে, জনগণের বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতৃত্ব তার ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে না পারার ফলে, কয়েকদিনের মধ্যেই তা স্তিমিত হয়ে যায়, হারিয়ে যায়। ফলে আবার চলে একটা ফ্রাস্ট্রেশনের পিরিয়ড। আবার মানুষগুলো মার খেতে থাকে আর ধুঁকতে থাকে। এইভাবে মার খেতে খেতে আবার একটা সময় ঐরকম স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনে তারা ফেটে পড়ে।

আমাদের দেশের নানান আন্দোলন আজ পর্যন্ত যা হচ্ছে–একটি-দুটি-চারটি ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আন্দালনগুলোর চরিত্র হচ্ছে এই ধরনের। স্বাভাবিক অবস্থায় মার খেতে খেতে ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গিয়ে বানের জোয়ারের মতন একটা ‘আপহিভল’ অভ্যুত্থান হ’ল, যার মধ্যে বিপ্লবী রাজনৈতিক চেতনা বা যার ওপর বিপ্লবী নেতৃত্বের আদর্শগত প্রতিষ্ঠা–এসব কিছুই নেই। ফলে আমরা, যেসব পার্টি ওপর থেকে একটা কমিটি করে সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিই তারা আন্দোলনের মধ্যে হাজার হাজার লোক কোথা থেকে এল এবং তারপর কোথায় হারিয়ে গেল তার খবরই রাখি না। যারা ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্ত ফ্রন্ট গড়ে তুলে ওপর থেকে এই আন্দোনগুলোতে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সেই সমস্ত পার্টির কাছে আমরা বারবার বলেছি যে, ওপর থেকে একটা আন্দোলনের ডাক দিয়ে নেতারা জেলে গিয়ে বসে থাকেন, সেনাপতিদের মতন তারা কাজটা করেন না। তাদের উচিত এই আন্দোলনের ডাক দেওয়ার সাথে সাথে যে মানুষগুলো আন্দোলনে আসতে চাইছে বিভিন্ন গণকমিটিতে তাদের যুক্ত করে সেই গণকমিটিগুলিকে নেতৃত্বকারী কমিটিতে রূপান্তরিত করা এবং তাদের মাধ্যমেই আন্দোলন চালাবার চেষ্টা করা, অন্যদিকে আন্দোলন চালাতে চালাতেই বিভিন্ন দলের মধ্যে পরস্পর রাজনৈতিক মতাদর্শগত সংগ্রাম চালানো। এই মতদর্শগত সংঘর্ষ ছাড়া জনগণের রাজনৈতিক চেতনা পরিষ্কার হতে পারে না। কারণ, যে দলগুলি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে আন্দোলন সম্পর্কে তাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি এক থাকে না। একেকটা পার্টি ‘এজিটেশন’কে (বিক্ষোভ) সামনে রেখে একটু ‘বাংগলিং’ করে। আন্দেলনের মধ্যে জনসাধারণ মরে, লাঠি খায়, গুলি খায়–আর তারা তার বিরুদ্ধে প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। তারপর নির্বাচন এলে তাকেই পুঁজি করে জিতে গিয়ে মালাটালা পরে রাজা-উজির-মন্ত্রী হয়ে বসে। ব্যস। এই হচ্ছে বেশিরভাগ দলেরই আন্দোলন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি। …

 

… অন্যদিকে সত্যিকারের একটা বিপ্লবী দল চায়, এই যে এজিটেশনাল মুভমেন্ট, এর মধ্য দিয়ে যেন অন্তত জনগণের খানিকটা রাজনৈতিক চেতনা, খানিকটা জনগণের বিপ্লবী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে এবং জনগণের ক্ষমতা গড়ে তোলবার হাতিয়ার গণকমিটিগুলি রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে গড়ে উঠতে পারে। এই গণকমিটিগুলি স্থায়ী কমিটি হবে না। এগুলি প্রতিটি আন্দোলনে খানিকটা চেতনা নিয়ে গড়ে উঠবে, আবার আন্দোলনের পর ভেঙে যাবে। এইরকম প্রত্যেকটা আন্দোলনে যদি এই গণকমিটিগুলি খানিকটা খানিকটা রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে গড়ে উঠতে থাকে তাহলে জনগণ নিজেরাই আন্দোলন পরিচালনা করতে শিখবে এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিখবে। জনগণ যখন লড়াইয়ের মধ্যে থাকে তখন তার মধ্যে ‘উইস্ডম’টা (প্রজ্ঞা) না থাকতে পারে, কিন্তু লড়াইয়ে ‘ফারভার’টা (উত্তাপ) খুব সুন্দর থাকে, লড়াইয়ের মনটা খুব পরিষ্কার থাকে। নেতাদের মধেথ্য সহজে যে ‘ভাইসেস’গুলো দোষ) ঢোকে, পার্টির মধ্যে যেগুলো ঢোকে জনসাধারণের মধ্যে সেইটা থাকে না। লড়াইয়ের এই ফারভারের সাথে যদি জনগণের রাজনৈতিক চেতনা এবং উইস্ডমটা গড়ে ওঠে তাহলে জনসাধারণ নিজেরাই বুঝতে পারবে, কখন আন্দোলন কতদূর নিয়ে যাওয়া চলতে পারে এবং কীভাবে আন্দোলনকে চালানো যায়। যখন এইটা জনসাধঅরণ করতে পারবে তখন নেতৃত্বকারী দলগুলি মধ্যে কোন্ দল তাদের সত্যিকারের সেই লড়াইতে ভাবের দিক থেকে, আদর্শের দিক থেকে যথার্থ নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের সেই পরিকল্পনায় মদত দিচ্ছে সেটা তারা দেখতে পাবে। আর জনসাধারণের এই দেখতে পাওয়ার মধ্য দিয়ে অবিপ্লবী দলগুলি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যবে। গণআন্দোলনগুলোকে আমাদের দল এইভাবে অ্যাপ্রোচ করে।

 

কিন্তু এই ধরনের গণআন্দোলন আমরা চাইলেই তো প্রতিদিন গড়ে ওঠে না। কোনো বিপ্লবী দল চাইলেই গড়ে ওঠে না। যে সমস্ত নকশালপন্থী বন্ধুরা ‘বন্দুকের নলই শক্তির উৎস’, ‘লড়তে হবে’, ‘কৃষকরা গ্রামে গ্রামে এলাকা দখল করে মুক্তাঞ্চল সৃষ্টি কর’ বলে স্লোগান তুলছেন আর মনে করছেন বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে, তাদের আমি ভেবে দেখতে বলব, সত্যিই কি বিপ্লব শুরু হয়েছে, না এইভাবে বিপ্লব সম্ভব?

 

… কলেজ ইউনিয়নের মারদাঙ্গার মধ্যে কৃষিবিপ্লব ফেটে পড়ছে। বাস্তবে কৃষিবিপ্লবের দেখা নেই। কারণ এত সহজে এ জিনিস হয় না। তাঁরা যে কৃষিবিপ্লবের কথা বলছেন, তার সাথে আমাদের মতপার্থক্য আছে। আমরা মনে করি, ভারতবর্ষের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, যে কৃষিবিপ্লবের কথা তাঁরা বলছেন তাও যদি তাঁদের করতে হয় তাহলে দীর্ঘদিন ধরে কর্মীরা যাকে বলছেন রুটিন ওয়ার্ক এবং বিরক্তিকর কাজ–এই বিরক্তিকর কঠিন পরিশ্রমের মধ দিয়েই তাঁদের এগোতে হবে। যত রকমের বুজোর্য়া মতবাদ, কুসংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, চাষী আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে আন্দোলনগুলোকে বিপথগামী করছে, ক্রমাগত তীব্র আদর্শগত সংগ্রাম চালিয়ে তার পর্দা খুলে দিতে হবে। ভাসাভাসা নয়, আদর্শের একটা পরিষ্কার ছবি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আপনাদের মনে রাখা দরকার ‘বিপ্লব চাই’,–এটা কোনো ‘কন্সেপশন’ই ধারণাই নয়। ‘লড়াই করতে হবে’, ‘লড়াইয়ের থেকেই নেতৃত্ব জন্ম নেবে’–এটাও কোনো কন্সেপশন নয়। কী সেই লড়াই, লড়াইয়ের শত্রু কে, মিত্র কারা, কতরকমের তার জটিল প্রক্রিয়া–কখনও সে প্রত্যক্ষ রাস্তায় সংগ্রামের রূপ নেয়, কখনও সে ‘রিট্রিট’ (পশ্চাদপসরণ) করে–অর্থাৎ কোন্ সময় লড়াই কী রকমের রূপ নেয়–এসব বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা গড়ে তুলতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, এই লড়াই কখনও প্রচারধমীর্ হয়– তখন সে একইসঙ্গে ‘ক্যাডার রিক্রুট’ করে, প্রচার করে, কাগজ চালায়, সংগঠন গড়ে তোলে। এ হ’ল সংগঠনের একটা স্তর। আবার এইগুলো করতে করতেই আন্দোলনের ইস্যুকে ভিত্তি করে যখন খানিকটা সংগঠন গড়ে ওঠে তখন প্রচার চালাবার সাথে সাথে আন্দোলনকে সে মাঠে-ময়দানে নিয়ে যায় শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়তে। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রশক্তি, তার দমনমূলক যন্ত্র এবং শোষকশক্তির চেহারাটা জনসাধারণকে দেখায়, সাথে সাথে অন্যান্য দল যারা বিপ্লবের নরম-গরম বুকনি দেয়, সমাজতন্ত্রের কথা বলে তারা এই লড়াইয়ের সামনে কী ‘অ্যাটিট্যুড’ (মনোভাব) নেয় তা দেখায়। কারণ মতাদর্শগত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে যতক্ষণ কোন্ মতটা সঠিক জনসাধারণ না ধরতে পারছে ততক্ষণ বিপ্লবের রাস্তা পরিষ্কার হতে পারে না।

 

যেমন, আমরা সমাজতন্ত্রের কথা বলি। বাংলা কংগ্রেসও সমাজতন্ত্রের কথা বলে। ফরোয়ার্ড ব্লকও সমাজতন্ত্রের কথা বলে। খোদ জহরলাল নেহেরুও সমাজতন্ত্রের কথা বলে গেছেন। আবার সিপিআই(এম) যে ‘পিপল্স ডেমোক্রেটিক রেভোলিউশনে’র কথা বলছেন, পিপল্স ডেমোক্রেটিক রেভোলিউশন। অথচ, তাদের এই তিন পিপল্স ডেমোক্রেটিক রেভোলিউশনের নাকি কোনো মিল নেই। মানে রেভোলিউশন এক কিন্তু তিনটে তিনরকম। যদি ধরে নিই পিপল্স ডেমোক্রেটিক রেভোলিউশনই ভারতবর্ষের বিপ্লবের সঠিক লাইন, তাহলেও এই তিনটির মধ্যে কোন্টা ঠিক? এই ঠিক-বেঠিকের লড়াইটা জমে যায়, মানুষ তা নিয়ে মাথা ঘামাতে থাকে, বুঝতে থাকে ঠিক-বেঠিকের লড়াইটা তবেই বিপ্লবের রাস্তা পরিষ্কার হবে।

 

এই আদর্শগত-মতবাদগত সংঘর্ষ এড়িয়ে গিয়ে দেশে কিছুই হবে না। জনসাধারণ যে বলেন, ‘যা হয় একটা কিছু করুন, আমরা আছি’–এ মনোভাব থেকে দেশে কিছুই হতে পারে না। এরকম মনোভাব থেকে মাঝে মাঝে যে ধরনের লড়াইগুলো দেশে হচ্ছে তাই হয়। সেই লড়াই কি শুধু আজ হচ্ছে? ১৯১৯ সাল থেকে মজুররা মারিকদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করে প্রাণ দিয়ে আসছে। কত লোক ফাঁসিকাঠে গেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতায় কত ‘ব্যারিকেড ফাইট’ হয়েছে, কত গণআন্দোলন হয়েছে, কতবার পুলিশ-মিলিটারি সেই গণআন্দোলনে কলকাতাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু তার ফল কী হয়েছে? দেশের মানুষের অবস্থা দিনের পর দিন আরও খারাপ হয়েছে। এক পা-ও আমরা এগোতে পারিনি। আবার অনেকে আজ ভাবছেন, কিছুই হচ্ছে না। এই যে এত লড়াই হ’ল, ট্যাঙ্ক নামল, কলকাতা কতবার ব্ল্যাক আউট (যুদ্ধকালীন নিষ্প্রদীপ অবস্থা) হ’ল, পুলিশের সঙ্গে কত বোমা-পাটকেল নিয়ে লড়াই হ’ল–সেই লড়াইয়ের পরেও কেন আবার আজ মানুষ ভাবছে, কিছুই হচ্ছে না, লড়াই হচ্ছে না। কারণ, এই লড়াইগুলোর চরিত্র সেই ‘স্পোরেডিক’ (ইতস্তত বিক্ষিপ্ত), ‘স্পন্টেনিয়াস’ (স্বতঃস্ফূর্ত)–যেটা মার খেতে খেতে মানুষের মধ্যে ফেটে পড়ে মাঝে মাঝে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, বুঝুক না বুঝুক হঠাৎ একসময় সে আন্দোলনে ফেটে পড়ে। কিন্তু যেহেতু সঠিক নেতৃত্ব নেই যেহেতু বোঝবার ধৈর্য নেই, সংগঠন নেই, সেহেতু আন্দোলনগুলোকে স্পন্টেনিটি থেকে কখনোই মুক্ত করা যাচ্ছে না। এক একটা আন্দোলনের পর ফ্রাসট্রেশন মানুষকে ছেয়ে ফেলছে। অন্যদিকে যে দল সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে, আন্দোলনে সেই দলের নেতৃত্ব আজও সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, সেই কারণ সে ইচ্ছে করলেও আন্দোলনকে কন্ট্রোল করতে পারছে না, সঠিক রাস্তায় পরিচালিত করতে পারছে না। যদি পারত তাহলে লড়াইয়ের কৌশল এবং মূল লক্ষ্য মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পারত, মানুষকে ফ্রাসট্রেশন থেকে মুক্ত করতে পারত এবং জনতার নিজস্ব সংগ্রামের হাতিয়ারগুলো ধীরে ধীরে ধীরে গড়ে তুলে পুঁজিবাদবিরোধী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারত। … [শিবদাস ঘোষ নির্বাচিত রচনাবলি থেকে সংগৃহীত]

সাম্যবাদ জুন ২০২২

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments