…কমরেডস, সারা ভারত ডি এস ও-র উদ্যোগে আয়োজিত এই সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলন এমন একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আমাদের দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। বিশেষ করে সমাজজীবনে রুচি-সংস্কৃতি ও নীতিনৈতিকতার ক্ষেত্রে এই সংকট আরও গভীরে দেখা দিয়েছে। এটা নিশ্চয়ই আপনারা লক্ষ করছেন এবং আমার ধারণা দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও গভীর বেদনা ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছেন যে, আমাদের রুচি-নীতিনৈতিকতার মান ক্রমাগত দ্রুত নেমে যাচ্ছে।
… আমাদের দেশের প্রতিটি সৎ, চিন্তাশীল ব্যক্তিকে যে ভাবনা প্রতি মুহূর্তে আলোড়িত করে তুলছে, তা হল, কেন এই শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি? কী করে আমাদের সমাজে এই অসহনীয় এবং হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির ফেনোমেনন সৃষ্টি হল? সমস্যাটির গভীরে গিয়ে আপনাদের তা অনুধাবন করতে হবে। কারণ, আমি মনে করি, এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এমন গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি বিষয়টা আমরা ঠিকমতো ধরতে এবং ঠিকমতো বুঝে তার সঠিক উত্তরটা বার করতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামগুলোকে সঠিক পথে নেতৃত্ব দিয়ে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে, অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব কিনা, সে সম্পর্কে যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ রয়েছে। কারণ, আপনারা সকলেই জানেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সমস্ত সামাজিক সমস্যাই সবসময়েই কতকগুলো নির্দিষ্ট প্রশ্নের সাথে, কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সাথে এমন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকে যেগুলির সমাধান ছাড়া এইসব সমস্যার কোনওটারই সুরাহা করা সম্ভব নয়। এই প্রশ্নগুলি দেশের রাষ্ট্রকাঠামোর সাথে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার বিশেষ চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের সাথে – যাকে আমরা পুঁজিবাদ বা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলি – তার সাথে যুক্ত। প্রতিটি সামাজিক ব্যাধি, যা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে তা এই বস্তুগত ভিত্তি থেকে, অর্থাৎ রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র এবং পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা – এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র যা শোষক পুঁজিপতিশ্রেণীর নিয়ন্ত্রণাধীন, যা ভারতবর্ষের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী, দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে রাষ্ট্র শোষক পুঁজিপতিশ্রেণী তাদের শ্রেণীস্বার্থ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যপূরণ ও শ্রেণীশাসনকে অব্যাহত রাখার জন্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আরও সংহত ও পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালনা করে।
কমরেডস, আপনারা সর্বদা মনে রাখবেন, শাসন পুঁজিপতিশ্রেণী এবং তাদের দলগুলো যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, বাস্তবে জনসাধারণের স্বার্থ নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। এমনকী যখন তারা জাতি ও জাতীয় স্বার্থের কথা বলে তখনও তাদের একমাত্র লক্ষ্য হল, জনসাধারণের দেশাত্মবোধকে কাজে লাগিয়ে বুর্জোয়াশ্রেণীর শ্রেণী উদ্দেশ্যকে হাসিল করা। ফলে যে জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে খানিকটা প্রগতিশীল ছিল এবং ততটুকু অর্থে সেদিন জনগণের স্বার্থ পূরণ করেছিল, আজ তা শাসক বুর্জোয়াশ্রেণীর হাতে পুরোপুরি সুবিধায় পর্যবসিত হয়েছে এবং জনসাধারণকে প্রতারণা করে ও ধাপ্পা দিয়ে তাদের দৃষ্টিকে প্রকৃত সমস্যা থেকে সরিয়ে বিপথে চালিত করার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। জনসাধারণকে বিপ্লবী আন্দোলনের মূল ধারা থেকে দূরে সরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে শাসক বুর্জোয়াশ্রেণী এবং পেটিবুর্জোয়া পার্টিগুলো প্রায়ই এই প্রতারণামূলক হাতিয়ারটিকে ব্যবহার করে থাকে।
বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়া পার্টিগুলোর এই কৌশলে জনসাধারণ যাতে প্রতারিত না হন তার জন্য তাঁদের শিক্ষিত করে তোলার কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হলে আপনাদের সবসময়ে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সমাজ একটা শ্রেণীবিভক্ত সমাজ। আমাদের জাতি একটা অবিভাজ্য জাতি নয়। আমরা চাই বা না চাই, আমাদের ভাল লাগুক বা না লাগুক, কোনও সচেতন মানুষই এই কঠোর বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করতে পারেন না যে, আমাদের সমাজ একটা শ্রেণীবিভক্ত সমাজ।
কমরেডস মনে রাখবেন, ইতিহাসে উৎপাদনের বিকাশের একটা বিশেষ স্তরে এসে সমাজে পরস্পরবিরোধী শ্রেণীগুলি ও শ্রেণীসংগ্রামগুলির জন্ম হয়েছে এবং যখন থেকে এগুলির জন্ম হয়েছে তখন থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী ও শ্রেণীসংগ্রামগুলি আমাদের চেতনা নিরপেক্ষ সত্তা হিসেবেই সমাজে অবস্থান করে চলেছে। একই সাথে একথাও আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবসমাজের অগ্রগতির প্রক্রিয়ায় এই শ্রেণীসংগ্রামই মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে এবং শ্রেণীসংগ্রামের বিকাশের পথে মানব ইতিহাস থেকে যতদিন শ্রেণী, শ্রেণীশোষণ, শ্রেণীসংগ্রাম এবং শ্রেণীর হাতে দমন পীড়নের যন্ত্র হিসাবে রাষ্ট্র অবলুপ্ত না হচ্ছে ততদিন সমাজে তীব্র শ্রেণীসংগ্রাম থাকবে। সুতরাং এরকম একটি পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় ঐক্য, শিক্ষা এবং শিক্ষা সংস্কার সম্পর্কে একটিমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারেনা। এই সমস্ত সমস্যা সম্পর্কে যে কোনও দৃষ্টিভঙ্গি, তা প্রগতিশীল অথবা প্রতিক্রিয়াশীল কিনা, তা বুর্জোয়াশ্রেণীর স্বার্থকে প্রত্যক্ষভাবে হোক অথবা পরোক্ষে হোক রক্ষা করছে কিনা, নাকি মেহনতি মানুষের ও তাদের বিপ্লবী আন্দোলনের স্বার্থকে রক্ষা করছে — তা শ্রেণীসংগ্রাম এবং শ্রেণীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কষ্টিপাথরে বিচার করতে হবে। সংগ্রামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে অন্য সমস্ত পথ শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বিপজ্জনকও বটে। যে কোনও সৎ, চিন্তাশীল মানুষ, যাঁরা বিপ্লবের কথা বলেন, তাঁদের একথাটা বুঝতেই হবে। কারণ, যদি তাঁরা সত্যিসত্যিই সমাজের পরিবর্তন আনতে চান এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে চান তাহলে যে বিশেষ নিয়মগুলো শ্রেণীসংগ্রাম গড়ে ওঠার পথে সমস্ত ঘটনাবলীকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেই সমস্ত নিয়মগুলোকে তাঁদের জানতেই হবে। আর তা না জানা পর্যন্ত কোনওমতেই আমরা সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারব না, সমাজ পরিবর্তন ও বিপ্লবের আকাক্সক্ষা আমাদের যতই থাকুক না কেন, পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কোনও প্রভাবই আমরা ফেলতে পারব না। এমতাবস্থায় আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও আমাদের সমস্ত তত্ত্ব হয়ে পড়বে বন্ধ্যা এবং সমস্ত ক্রিয়া অন্ধ ক্রিয়ায় পর্যবসিত হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তাই শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বাস করে নির্দিষ্ট শ্রেণী এবং শ্রেণীস্বার্থের কথা উল্লেখ না করে যদি কেউ সাধারণভাবে শুধু ‘জাতি’, জাতীয় স্বার্থ’, ‘সামাজিক অগ্রগতি’, ‘সামাজিক স্বার্থ’, ‘শিক্ষার সংস্কার’ প্রভৃতির কথা বলেন তাহলে বলতে হয় তিনি একজন অজ্ঞ, মূর্খ, আর না হয়, কি বলব, তিনি একজন ভন্ড। এই প্রসঙ্গে সি পি আই এবং সি পি আই (এম)- এর কথা উদাহরণ হিসাবে ধরা যেতে পারে। তারা উভয়েই নিজেদের আজও মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বলে দাবি করে। এই দু’টি দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন এ আই এস এফ এবং এস এফ আই শাসক বুর্জোয়াশ্রেণীর সাথে সুর মিলিয়েই ‘চাকরিমুখী’, ‘কর্মমুখী’ বা ‘উৎপাদনমুখী’ শিক্ষাপ্রবর্তনের কথা বলছে। অথচ, তারা কি এটা আদৌ বোঝে না যে, উৎপাদনবৃদ্ধির অজুহাত খাড়া করে চাকরিমুখী বা কর্মমুখী শিক্ষা প্রবর্তনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশের ছাত্রসমাজের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিবর্তে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিছক কারিগরি ও নিতান্তই তথ্যসর্বস্ব শিক্ষার দিকে ঠেলে দেওয়ার বুর্জোয়াশ্রেণীর চক্রান্ত মাত্র? প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী হলে তো এটা তাদের না বোঝার কথা নয়। শিক্ষাসংস্কারের নাম করে বুর্জোয়াশ্রেণী ও তাদের দলগুলো এহেন একটি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কেন যে ওকালতি করে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু আমার অবাক লাগে যখন দেখি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বলে দাবি করে যে সি পি আই, সি পি আই(এম), সেই দলগুলোও শিক্ষা সংস্কারের নাম করে বুর্জোয়াশ্রেণীর স্বার্থে রচিত এইরকম একটা হীন পরিকল্পনাকে সমর্থন করে এবং এইসব প্রশ্নে প্রায় একই সুরে কথা বলে। এ অবস্থায় এদের কী বলব – অজ্ঞ, নির্বোধ, নাকি ভন্ড?
…কমরেডস, আপনাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, একটি শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শিক্ষা সংস্কার এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যাকে কেবলমাত্র দু’টি দৃষ্টিকোণ, দু’টি বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা যেতে পারে। এর একটা হল ক্ষমতাসীন শোষক বুর্জোয়াশ্রেণীর বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন সুরে, এমন ধাঁচে এবং এমন ব্যক্তিদের পরিচালনায় গড়ে তোলা যার ফলে কর্তব্যকর্মে অবহেলা, পেশাগত অহংবোধ, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনীহা প্রভৃতি কতকগুলি সমাজপ্রগতিবিরোধী মানসিক ধাঁচা গড়ে ওঠে, যা স্বভাবতই বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে অন্ধ বিশ্বাস, ধর্মীয় কুসংস্কার ও সকলপ্রকার পুরনো ভাবনাচিন্তার উপর নির্ভরশীল এবং শেষপর্যন্ত সমস্ত সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ও দায়দায়িত্বের প্রতি বীতস্পৃহ মনোভাব গড়ে তোলে। আর একটা হল বুর্জোয়াশ্রেণীকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের গোটা উৎপাদন ব্যবস্থা, তথা দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, নীতিনৈতিকতা, রুচি, মূল্যবোধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাদী শোষণের শৃঙ্খল ও নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে যে বিপ্লবী আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য আজ অত্যন্ত প্রয়োজন ও জরুরি, সেই আন্দোলনের পরিপূরক বৈজ্ঞানিক বিচারধারা ও মানসিকতাকে সুনিশ্চিতভাবে গড়ে তোলবার জন্য যুক্তির চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারকে উন্মুক্ত করার উদ্দেশ্যে সকল প্রশ্নকে বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থাৎ সর্বহারাশ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা। সুতরাং একথা পরিষ্কার যে, শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শিক্ষাসমস্যা এবং শিক্ষাসংস্কার সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি একটি নয়, দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি থাকাটাই স্বাভাবিক এবং থাকতে বাধ্য।
…কমরেডস, মনে রাখবেন, শুধুমাত্র আদর্শের জন্য শুরুতেই যাঁরা জীবন দিতে এগিয়ে আসেন তাঁরা কোনওদিনই সংখ্যায় বেশী থাকেন না। তাঁরা সবসময়েই মুষ্টিমেয়। তাঁরা প্রাণবন্ত ছাত্র-যুবক। প্রতিটি দেশেই সমাজবিকাশের প্রতিটি স্তরে এই ছাত্র-যুবরাই বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসেন, পরিপূর্ণ নিষ্ঠা নিয়ে জনগণের কাছে যান, হাজার হাজার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন, সংগঠিত করেন, জনগণের রাজনৈতিক শক্তির জন্ম দিতে সাহায্য করেন। এরপরই সময় আসে গণঅভ্যুত্থানের, আর তাকেই আমরা বলি বিপ্লব। তার আগে আপনাদের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবেÑ যা কঠোর, কঠিন, কষ্টকর, কিন্তু আনন্দময়। আমি বলি, এটাই সবচেয়ে আনন্দের এবং মর্যাদার পথ। হ্যাঁ, সংগ্রামের এই পথ অত্যন্ত বেদনাময় হতে পারে, কখনও কখনও তা খুবই কষ্টসাধ্যও হতে পারে, তবুও এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, মর্যাদাময় জীবনযাপনের এটাই একমাত্র পথ। এই সংগ্রামে আপনাদের মৃত্যুবরণ করতে হতে পারে, কিন্তু আপনারা মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে মৃত্যুকে বরণ করবেন। অবমাননা এবং গ্লানি নিয়ে কুকুর বেড়ালের মত রাস্তায় পচে মরবেন না। মনে রাখবেন, মানুষ মাত্রই মরণশীল। তাই মরতে যখন হবেই তখন নিজেকে করুণার পাত্র করে, অবমানিত করে, ভিক্ষুকের মত মরবেন না। মৃত্যু যখন অবধারিত তখন মর্যাদার সাথে মৃত্যুকে বরণ করুন। আর মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা বা মৃত্যুকে বরণ করার একটাই মাত্র নিশ্চিত পথ রয়েছে। তা হল, সমাজের আমূল পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের যে বিপ্লবী সংগ্রাম তাতে নিজেকে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রাখা। বলাবাহুল্য, এর জন্য অতি অবশ্যই হাজারে হাজারে আপনাদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
…আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আপনাদের সকলকে বিপ্লবী অভিনন্দন জানিয়ে আমার বক্তব্য আমি এখানেই শেষ করছি।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ জিন্দাবাদ
[ ১৯৭৪ সালের ১৩ ই জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে বারবাটি স্টেডিয়ামে সারাভারত ডি এস ও-র উদ্যোগে সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনে প্রদত্ত ইংরেজি ভাষণ। ১৯৭৪ সালের ১৫ই মার্চ এসইউসিআই(সি)-র ইংরেজি মুখপত্র প্রলেটারিয়ান এরা-তে প্রথম প্রকাশিত। এখানে কিছুটা সংক্ষেপিত করে ছাপা হলো ]
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের স্মরণিকা