গত ১৩ জুন ২০১৫ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিনেটের ১৭তম বার্ষিক অধিবেশন সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সাথে আগামী বছর হতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি পদ্ধতির ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “উচ্চশিক্ষা কিংবা শিক্ষার্থীদের কি প্রয়োজনের বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। পূর্বাপর কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়া এমন নিত্য নতুন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ছাত্রদের গিনিপিগ বানানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে । এতে জটিলতা আরো বাড়বে। সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমন কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়গুলো যেখানে ভর্তি পরীক্ষাকেই এখনো ছাত্র ভর্তির স্ট্যান্ডান্ড পদ্ধতি হিসেবে চালু রেখেছে, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাত্র শিক্ষক শিক্ষাবিদ অভিভাবক কোন মহলেই স্পষ্ট নয়।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শুধু রেজাল্টের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হবে না। এতে প্রকৃত মেধাবীরা ভালো কলেজগুলোতে পড়ার সুযোগ হারাবে । বিগত বছরগুলোতে পাবলিক পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঢালাওভাবে ‘এ প্লাস’ বাড়ানো হয়েছে, তাতে দু’পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা একেবারে অসম্ভব। তাছাড়া মাদ্রাসার দাখিল, আলীম ও কারিগরি শিক্ষার পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর বন্টন এবং পাসের হারে ব্যাপক পার্থক্য হয়ে থাকে। শুধু রেজাল্টের ভিত্তিতে কলেজ নির্ধারিত হলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের তুলনায় মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীরাই এক্ষেত্রে অযৌক্তিক অগ্রাধিকার পাবে । দারিদ্রের কারণে শহরের চেয়ে গ্রামের স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞানের ছাত্ররা ভালো ফল করতে পারে না; আয়োজনও থাকে অপ্রতুল। বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে গ্রাম, মফস্বলের অনেক ছেলেমেয়েরা বিভাগীয় ভালো কলেজগুলোতে পড়তে পারছে। শুধু রেজাল্টের ভিত্তিতে ভর্তি করালে সেটকুও আর থাকবে না। উচ্চ শিক্ষায় গ্রাম শহরের বৈষম্য আরও বাড়বে। ফলে এসব অসামঞ্জস্য বজায় রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হলে সংকটগ্রস্থ হবে উচ্চশিক্ষার মান।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই যুগের দীর্ঘ সেসনজট দুই বছরে দূর করার জন্য মূল সমস্যা দূর না করে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ থেরাপি ছাত্রদের কাঁধে চাপিয়ে ঘোষিত ২১০ দিন ক্লাস নিশ্চিত দূরে থাক সিলেবাসের কিয়দংশ পড়িয়েই হুড়োহুড়ি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। এতে শিক্ষার মান ভয়াবহ রকম নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন আবার ঘোষণা দিয়েছে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই তারা ছাত্র ভর্তি করাবে (অক্টোবরে ভর্তি, ১লা ডিসেম্বর হতে ক্লাস শুরু)! বাস্তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন করে শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে এটা হবে অনেকটা গায়ের জোরে বাধ্য করে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থী টানার মতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যার স্বল্পতার কারণে সেখানে ভর্তির অনিশ্চয়তা থেকে ছাত্ররা শুরুতে বাধ্য হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। কিন্তু এরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে একটা বড় অংশের শির্ক্ষাথী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাবে সঙ্গত কারণেই। তখন পিছনের তালিকা হতে ছাত্র ভর্তি করাবে। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু করতে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত গড়ায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা একটা বড় সময় ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ছুটে বেড়াবে। ফলে চাইলেও ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না। বরং এই প্রক্রিয়ায় ছাত্র চলে গিয়ে আসন ফাঁকা হওয়া শূন্য আসনে নতুন করে ভর্তি করাতে করাতেই কলেজগুলোর লম্বা সময় চলে যাবে। এবং জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না। আর এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি বাতিল করে চলে যাওয়া ছাত্রদের জিম্মি করে ভর্তি ফি বাবদ একটা বড় অংকের টাকা ফেরত না দিয়ে আর্থিক স্বার্থ-সিদ্ধি হাসিল করা হবে ।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট উত্থাপিত ৮ দফা দাবি মেনে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আহবান জানান।