Sunday, April 28, 2024
Homeফিচারদ্রোহ ও প্রতিবাদে বর্ষবরণ : ১ বৈশাখ ১৪২৩

দ্রোহ ও প্রতিবাদে বর্ষবরণ : ১ বৈশাখ ১৪২৩

বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনাকারীদের গ্রেফতার-বিচার না হওয়ার দায় সরকারের

20160414_164621 copy

দ্রোহ ও প্রতিবাদে বর্ষবরণ উদ্যাপনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও নারীমুক্তি কেন্দ্র। বৈশাখের প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে প্রতিবাদী ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়। কর্মীরা সংগঠনের নাম সম্বলিত বেল্ট পরিধান করে রমনার পার্কে ২০টি পয়েন্টে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে ব্যাজ পরিধানের মাধ্যমে নারী লাঞ্ছনার বিচার দাবি করেন পাশাপাশি সবাইকে এই উৎসবে নির্ভয়ে যোগ দেবার আহ্বান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের ক্যাম্পের একপাশে সাদা কাপড়ে দিনব্যাপী স্বাক্ষর ও মন্তব্য সংগ্রহ করা হয়। নানা স্তরের জনগণ বিশেষত নারীরা আগ্রহ সহকারে তনু হত্যা ও বর্ষবরণে নারী নির্যাতনের বিচার দাবি করে তাদের অনুভূতি স্বতঃস্ফুর্তভাবে ব্যক্ত করেন। ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভা যাত্রার পর দুই সংগঠনের ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পাস-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-টিএসসিতে দ্বিতীয় দফায় ব্যাজ পরিধান ও লিফলেটিং করা হয়। ক্যাম্পের চারপাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুভাষচন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী সত্যেন বোস, বেগম রোকেয়া, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কমরেড শিবদাস ঘোষ ও ড. শামসুজ্জোহার বক্তব্য সম্বলিত পোট্রেট ছাত্র-অভিভাবকদের নজর কাড়ে।

20160414_161048 copyবিকাল চারটায় হাকিম চত্বর থেকে একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা শাহবাগ-শামসুন্নাহার হল-টিএসসি হয়ে হাকিম চত্বরে শেষ হয়। শাহবাগ ও টিএসসিতে দুটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য ও ছাত্র ফ্রন্টের অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী। সমাবেশ পরিচালনা করেন ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা।

বক্তারা বলেন, “গত বছর পহেলা বৈশাখে প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নারীরা লাঞ্ছনার শিকার হয়। সেই বর্বর ঘটনার এক বছর হতে চলল। অথচ এই এক বছরেও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে নিপীড়নকারীদের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখন তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে পহেলা বৈশাখে নাকি লাঞ্ছনার ঘটনাই ঘটেনি! তাই তারাও নিপীড়নকারীদের খুঁজে পায়নি। তদন্তের নামে এই প্রহসনের কারণে, একের পর এক ঘটনার বিচারহীনতায় নিপীড়নকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে, ফলে ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। তনু ধর্ষণ-হত্যা এই বিচারহীনতারই পরিণতি।”

20160414_170455 copyতারা আরও বলেন, “ যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল লাঞ্ছনাকারীদের খুঁজে বের করে বিচার করা, তা না করে এবার পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তার নামে সার্বজনীন এই উৎসবকে সংকোচিত করা হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে পুলিশের সংখ্যা বাড়লেও উৎসবে জনসমাগম কমেছে। এটাই প্রমাণ করে নিরাপত্তার যত আওয়াজই সরকার তুলুক না কেন, নিরাপত্তাহীনতার বোধের কারণেই অনেক মানুষ উৎসবে আসেনি। এই এক বছরেও নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচার না হওয়ার দায় যেমন সরকারের, তেমনি উৎসবের আমেজ কমে যাওয়ার দায়ও সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।” নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার-বিচারের দাবি জানান এবং আগামী ২৫ এপ্রিল তনু ধর্ষণ-হত্যাসহ সারাদেশে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আহুত হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিবাদী পদযাত্রার পর ক্যাম্পের সামনে বসে হাঁড়ি ভাঙা খেলা, গণসঙ্গীত ও ফোক গানের আসর; যা গ্রীষ্মের দাবদাহে উপস্থিত জনতার উৎসাহ ও উদ্দীপনার তৈরি করে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments