Sunday, April 28, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদনারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ৫ দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ৫ দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

৪ঠা ফেব্রুয়ারি ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে

IMG_5056 Selected copy
৯ জানুয়ারি ২০১৬ বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে দেশব্যাপী (রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী) বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ নারী-শিশু নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচার,  অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া, পর্নোপত্রিকা, ব্লু-ফিল্ম, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ  গ্রহণের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।  তারই অংশ হিসেবে দুপুর ১২ টায় ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারীমুক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্ত, সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন ও অর্থ সম্পাদক তাছলিমা আক্তার বিউটি।
সমাবেশে সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, গত বছরের শেষ সপ্তাহে পত্রিকার পাতায় আসা একটি খবর প্রমাণ করে এদেশের নারী সমাজ কতটা অসহায়। গত বছর ১লা বৈশাখে গণতন্ত্র ও মুক্ত বুদ্ধির পীঠস্থান বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লাঞ্ছনার যে ঘটনা ঘটেছিল তা প্রতিবাদী করে তুলেছিল সারা দেশের বিবেকবান মানুষদের। প্রথমে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তা এড়িয়ে গেলেও প্রতিবাদের মুখে কিছুটা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করেছে এসবই ছিল লোক  দেখানো নাটক, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে মামলা নিষ্পত্তি করার। এভাবেই চলছে দেশ। জনগণ নিরাপত্তাহীন আতংকিত জীবন যাপন করছে। দেশের স্বাভাবিক নৈতিক মান যত খারাপ হতে থাকে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ততই হুমকির মুখে পড়ে। আর বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চলছে তাতে অপরাধীরা ভয়ংকরভাবে উৎসাহিত হয়ে পড়ছে। সমাজের শিক্ষিত -অশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত- নিন্মবিত্ত, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব পর্যায়ের নারীরাই এর শিকার হচ্ছে। নারী নির্যাতনের পাশাপাশি এ বছর শিশুদের ওপরও নৃশংস ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
বক্তারা আরো বলেন, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়া সকলেই নারীকে পণ্য হিসেবে  উপস্থাপন করে। পণ্য মানসিকতার কারণে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি তা হারিয়ে ফেলছে। পন্য মানসিকতা যে ভোগবাদের জন্ম দেয় তার ফলে সমাজের মধ্যে ভোগবাদী মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক, পর্নোগ্রাফির প্রসার হচ্ছে যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। অন্য দিকে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা নেই বললেই চলে। কর্মসংস্থানহীন বেকার যুবক জীবনের সম্ভাবনার দিশা খুঁজে না পেয়ে নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে নেশার হাতে। যে কিশোর-তরুণ-যুবকরা দেশের জনসম্পদ হওয়ার কথা তারাই আজ নারী নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আর শাসক গোষ্ঠীও এই নির্যাতনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে। ফলে নারী নির্যাতনের বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যে সংস্কৃতি চলছে তার হাত থেকে বেরিয়ে আসতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নারী-শিশু  নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ সকলের ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র এ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে সারা দেশে ২০১৪ সাল থেকে জেলায় জেলায় নারীনির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে  স্বাক্ষরসংগ্রহ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অশ্লীল পোষ্টারে কালি লেপন, পথসভা-হাটসভা, বিক্ষোভ সমাবেশ, ডিসি অফিস-পুলিশ সুপারের কার্যলয় ঘেরাও, নারী সমাবেশ, মতবিনিময় সভা ইত্যাদি। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ৫ দফা দাবিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালিত হবে। এতে সকলের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়।
দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে:
১. বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নসহ সারা দেশে নারী- শিশু নির্যাতনকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা কার্যকর করতে হবে।
২. অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে। পর্নো পত্রিকা, ব্লু-ফিল্ম, ইন্টারনেটে পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করতে হবে। নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারী দেহের অশ্লীল উপস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। মাদক ও জুয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা, ফতোয়াবাজ এবং ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা -কুসংস্কার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে
৪. সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইউনিফরম সিভিল কোড চালু করতে হবে। সিডও  সনদের পূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. নারীশিক্ষাকে বিস্তৃত ও পূর্নাঙ্গ করতে হবে। নারীর স্বাবলম্বীতার জন্য নারী শিক্ষাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য খেলাধুলা ও আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা আবশ্যিক করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত হোস্টেল নির্মান করতে হবে।
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments