[dropcap]অ[/dropcap]নির্বাচিত, অবৈধ, অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে পরিচালিত এই দেশে মানুষ প্রতিদিনই একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস – একের পর এক ঘটনায় মানুষ দিশেহারা। কেউ জানেনা আজ কেমন যাবে। কখন যে কোন ভয়ংকর খবর আসবে, তা ভেবেই মানুষ নিয়ত আতঙ্কগ্রস্থ। তবে খুব সম্ভবত এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর হচ্ছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর। ভারত এশিয়ার অন্যতম সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সে আশেপাশের দেশগুলোকে তার প্রভাববলয়ে রাখতে চায়। শুধু বাংলাদেশ নয়; নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের উপর সে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তার প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। তাই পাকিস্তান ব্যতীত ভারতের পাশে অবস্থিত সকল দেশের উপরই ভারতের প্রভাববিস্তারকারী ভূমিকা আছে। আমাদের দেশেও আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় বসা ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা সর্বজন স্বীকৃত। আবার অপরাপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোও (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশ), ভারতের আশেপাশের দেশগুলোকে ভারতের প্রভাবান্বিত এটা ধরে নিয়েই তার ভিত্তিতে এই দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। তারা নিজেরা যে কিছু প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেনা তা নয়, তবে তার কোনো কিছুই ভারতকে ছাপিয়ে নয়। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এদেশে আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদই বটে।
নরেন্দ্র মোদি এদেশে যখন আসবেন তখন বাংলাদেশ-ভারতের বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কথা বলবেন এবং তার সমাধানের রাস্তা নির্দেশ করবেন — এমন কথাই শোনা যাচ্ছিল। বিশেষ করে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেবেন ও প্রয়োজনীয় চুক্তি তিনি করে যাবেন — এমনটাই অনেকে ভেবেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাদের আশার গুড়ে বালি ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। অথচ ভারত কানেকটিভিটি, ২৩টি পণ্যের শুল্ক ছাড়, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ করিডোরসহ যা যা চেয়েছে তার সবগুলোর ব্যাপারেই সুস্পষ্ট চুক্তি করে গেছে। শুধু ছিটমহল বিনিময়কে আমাদের প্রাপ্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ সেটা ৪১ বছর আগেই আমাদের পাওনা ছিল, ভারত এবার আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে মাত্র।
সুতরাং ফল কিছুই এদিকে গড়ায়নি। উপরন্তু বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করা এই দেশের উপর দিয়ে নরেন্দ্র মোদির মতো মানুষ ছড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন। কেউ কোনো কথাই বলতে পারলো না। নরেন্দ্র মোদি কে — পাঠকরা তা ভালোভাবেই জানেন। গুজরাট হত্যাকান্ডের এই খলনায়ক এদেশ সফর করে আমাদের ন্যায্য পাওনার ব্যাপারে কোনো আলাপ না করে, ভারতীয় পুঁজিপতিদের স্বার্থে সবরকম চুক্তি করে বিপুল সম্মান ও সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ফিরে গেলেন।
এটি আমাদের জন্য লজ্জার। বুর্জোয়া সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষত আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি মোদিকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের বাইরে থাকা বামপন্থী দল, যাদের পরিচিতি ও সংগঠন আমাদের চেয়েও বেশি — তারাও মোদিকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনচেতা মনোভাব এ ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে দারুণভাবে আহত হয়েছে। কোনো কিছু আদায় না করে সবকিছু দেয়ার যে কষ্ট, যে অবমাননাবোধ — সেটাকে ধারণ করে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলার মতো কোনো সংগঠিত শক্তি এ সময় ছিলনা। আমরা গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিলাম। সেদিন বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়, বাসদ (মার্কসবাদী)-সহ বামমোর্চার শরীক দলগুলোর অফিস শত শত পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। অফিসের নিচ থেকে গ্রেফতার করা হয় বাসদ (মার্কসবাদী)-র কর্মী শরীফুল চৌধুরী, প্রগতি বর্মন তমা এবং সায়েমা আফরোজকে। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ৩ জন এবং নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার ২ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
কি পেল বাংলাদেশ
নরেন্দ্র মোদির সাথে যৌথভাবে ‘৬৫ দফা ঢাকা ঘোষণা’ এসেছে। এটি পুরোটাই একটি আত্মসমর্পণের দলিল। ভারতের একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের স্বার্থে ‘কানেকটিভিটি’ দেয়া হয়েছে, দেয়া হয়েছে বিনা শুল্কে ভারতের ২৩টি পণ্যের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ। ট্রান্সশিপমেন্টের নামে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকছে ভারতীয় বাণিজ্য জাহাজগুলোর জন্য। শুধু তাই নয়, মংলা ও ভেড়ামারায় প্রতিষ্ঠিত হবে ভারতের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। খুলনা ও মংলার মধ্যে রেল সংযোগ চালু হচ্ছে। খুলনা ও কলকাতার মধ্যে চালু হচ্ছে দ্বিতীয় মৈত্রী রেল। ফলে মংলা বন্দর ও মংলা ইপিজেড থেকে ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ায় আর কোনো বাঁধা থাকবে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের মুজাফফর নগর পর্যন্ত হবে বিদ্যুৎ করিডোর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে ২৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছেন। মোদি বলেছেন ভারত তার বৃহৎ অংশীদার হতে চায়। তাই আদানি গ্রুপ ও আম্বানিদের রিলায়েন্স গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশেষ ব্যাপার হলো এটি একটি দায়মুক্তি চুক্তি। এই প্রকল্পের কাজ হবে বিনা টেন্ডারে এবং এর কোনো ব্যাপার নিয়ে বাংলাদেশে কোনো কথা তোলা যাবেনা, এদেশের আইনে কোনো বিচারও হবেনা।
আদানি ও রিলায়েন্স মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে আদানিরা উৎপাাদন করবে ১৬০০ মেগাওয়াট আর রিলায়েন্স গ্রুপ করবে ৩০০০ মেগাওয়াট। দু’জনে মিলে বিনিয়োগ করবে প্রায় সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকা।
দেশের বিদ্যুৎ খাতের ভয়াবহ অবস্থা। আমাদের মতো দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে নিজেদের বিদ্যুৎ খাতকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর দরকার ছিল, সেখানে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রথমে দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেয়া হলো। এখন আবার বিদ্যুৎ সেক্টরে ডেকে নিয়ে আসা হলো ভারতীয় পুঁজিকে, তাও আবার দায়মুক্তি দিয়ে। আমাদের মতো ছোট একটা দেশের জন্য এটা কতটুকু দরকার আর এভাবে দেয়া কতটুকু ঝুঁকির তা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন। কারণ দেশের বিদ্যুৎ খাতকে সম্পূর্ণ সরকারি তত্ত্বাবধানে রেখে চালানোর ক্ষমতা সরকারের আছে। সেটা বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বারবার হিসেব কষে দেখানো হয়েছে তাদের। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের বিরুদ্ধেও আন্দোলন হয়েছে। আজ কোন প্রয়োজন, কতটুকু প্রয়োজন তার কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই আদানি-রিলায়েন্স গোষ্ঠীকে এভাবে ডেকে আনা হলো।
সবমিলিয়ে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের রমরমা অবস্থা। এদেশ থেকে যতরকম সুবিধা দরকার তার আঠার আনা তুলে নিয়ে তারা দিল্লী ফিরে গেলেন। বাংলাদেশ সরকার শব্দমাত্র খরচ করলেন না, উপরন্তু সারাদেশকে এ ব্যাপারে নিঃশব্দ থাকার ফরমান জারি করলেন। অথচ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মোদি আশাবাদের বাইরে কিছুই বললেন না। সীমান্ত হত্যার কোনো কার্যকর সমাধানও নির্ধারণ করে গেলেন না। আমরাও তাদের কিছুই বললাম না। অথচ ভারতের পক্ষে এতগুলো অর্জন নিয়ে, দেশের সরকার ও সকল ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল সংবর্ধনা ও অভিনন্দন সহযোগে মোদি বীরদর্পে ঢাকা ত্যাগ করলেন।
কিছু প্রাপ্তি এদেশের পুঁজিপতিদেরও ঘটেছে। ভারতের কিছু অঞ্চলে ব্যবসার সুযোগ ঘটেছে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে পণ্য রপ্তানী সহজ হয়েছে। আগে ভুটানে পণ্য রপ্তানীতে যেখানে ২১ দিন লাগত, এখন লাগবে ৬ দিন — ইত্যাদি কিছু সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের পুঁজিপতিরা পেয়েছেন। এদেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা ওয়্যার হাউজের জন্য জায়গা পাওয়ার অঙ্গীকার পেয়েছেন। কিন্তু তাতে জনগণের কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশের না পাওয়ার তালিকাটা আসলে আরো দীর্ঘ। ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশের সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হতে যাচ্ছে, যা সুন্দরবনের জন্য নানা দিক থেকে বিপদ তৈরি করবে, সে সম্পর্কে মোদির সফরে কোনো আলোচনা হল না। বাংলাদেশ ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হল না।
দেশের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থের চেয়েও জনগণের সম্পদ লুন্ঠনের ভিত্তিতে যে পুঁজির বিস্তার এখানে ঘটেছে, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক পুঁজিপতিদের যে গোষ্ঠিটির এখানে জন্ম হয়েছে, তাদেরই স্বার্থের প্রয়োজনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে অসম চুক্তিগুলি করেছে। দেশের মানুষের মাঝে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি গড়ে উঠতে না পারার কারণে মানুষের মাঝে অবমাননা ও হীনমন্য মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের দেশপ্রেম প্রতিনিয়ত পরাজিত হচ্ছে। দেশের পুঁজিপতিগোষ্ঠী ও তাদের অনুগত শাসকশ্রেণী যেভাবে চাইছে প্রায় সেভাবেই দেশকে পরিচালিত করতে পারছে একটি সংগঠিত আন্দোলনকারী শক্তির অনুপস্থিতির কারণে।
তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন এখন বাংলাদেশের মানুষের জীবন মরণের সমস্যা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি। ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি লংঘন করে উজানে নিজেদের অংশে অধিকাংশ নদীতে বাঁধ দিয়েছে এবং একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা — প্রধান এই ৩টি নদীই ভারতের জল-আগ্রাসনের শিকার। ভারত পদ্মার উজানে ফারাক্কায় বাঁধ দিয়েছে। তিস্তা নদীর উজানে সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবা ব্যারেজে পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। মেঘনার অন্যতম উৎস নদী সুরমা-কুশিয়ারার উজানে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আয়োজন চলছে। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে এদেশের মোট পানিপ্রবাহের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে। ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পানি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও মনু, খোয়াই, মহানন্দা, গোমতী, মুহুরী, পাগলা, করতোয়া, জিঞ্জিরাম নদীর উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করেছে। সিলেটের সারি নদীর উজানে মেঘালয়ে বাঁধ দিয়ে ১২৬ মেগাওয়াট মাইনথ্রু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি নদীগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনেকগুলো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ডিহিং বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), সুবানসিঁড়ি বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), লোহিত বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), যাদুকাটা বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদীর ওপর), সোমেশ্বরী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদীর ওপর), ভৈরবী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (বরাক নদীর শাখার ওপর), নোয়া ডিহিং বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর), কুলশী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর) ইত্যাদি। প্রত্যেকটি প্রকল্পেই কমবেশি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। ফলে বাংলাদেশে মরুকরণ বাড়ছে। কৃষিপ্রধান এই দেশের জন্য নদী এক অমূল্য সম্পদ। গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষ কাঁদছে। কৃষিজমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কৃষক পথে বসছে। তিস্তা রক্ষার দাবিতে শুধু কৃষকই নয়, সমস্ত শিক্ষিত, সচেতন, দেশপ্রেমিক মানুষই পথে নেমেছেন।
কিন্তু এ নিয়ে কোনো চুক্তি হলো না। মোদি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মতো বলে গেলেন, তিনি ব্যাপারটি দেখবেন। যুক্ত ঘোষণার ১৯ নং আর্টিকেলে বলা হলো, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা চলছে। দ্রুত পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিবন্টন নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা চলছে —এমনটি উভয় প্রধানমন্ত্রী আমলে নিয়েছেন।’
তাহলে বুঝুন অবস্থাটা। কত ঢিলেঢালা ভাব, কত উপেক্ষা এ বিষয়ে। অথচ এটি বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা। ভারত সব অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের সমন্বিত পরিকল্পনার বদলে একেকটি করে আলোচনা করছে। অভিন্ন নদীর পানি সমন্বিত ও যৌথ ব্যবস্থাপনা-ব্যবহার-উন্নয়ন-রক্ষণাবেক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে যৌথ অববাহিকা কর্তৃপক্ষ গঠন করা দরকার। ইউরোপে রাইন নদীর অববাহিকায় যত দেশ আছে সবাই মিলে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে যৌথ কমিশন গঠন করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৬টি দেশ নিয়ে একইভাবে মেকং রিভার কমিশন কাজ করছে। অথচ এ অঞ্চলে এরকম কিছু হয়নি। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন একটি আছে, তার বৈঠকও হয়, কিন্তু অগ্রগতি কিছু নেই। কারণ এসকল বিষয়ে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি প্রসঙ্গে
ট্রানজিট ভারত বহুদিন আগে থেকেই চেয়ে আসছে। বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ভারতের সাতটি রাজ্যের (আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুণাচল) সাথে তার কেন্দ্রের যোগাযোগ বাংলাদেশের মধ্য দিয়েই সবচেয়ে সুবিধাজনক। এতে ভারতের এক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব কমে যায়। ফলে ভারত এর জন্য বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এবার ট্রানজিটকেই শুধু নাম পাল্টে দিয়ে কানেকটিভিটি করা হয়েছে। এবার ভারত সেই সুবিধা পেল। কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু হলো। অতি সত্ত্বর পণ্য পরিবহনও শুরু হবে। সবচেয়ে অবাক করা কথা এই পণ্য পরিবহনে ভারত সরকার বাংলাদেশের রাস্তা ব্যবহার করবে। তাতে তার অনেক খরচ বাঁচবে। কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবেই একদেশের পণ্য আরেকদেশে ঢুকলে যে শুল্ক দিতে হয়, ভারতের সাথে সেই শুল্কের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি, অর্থাৎ বিনাশুল্কে ভারতের এক জায়গা থেকে পণ্য বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে অন্য জায়গায় প্রবেশ করবে।
ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার আগে রাজনৈতিক বিবেচনা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অবকাঠামোগত সামর্থ্য ও অর্থনৈতিক লাভালাভ বিবেচনা করে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। ভারত সমুদ্রসীমাবিহীন স্থলবেষ্টিত কোনো দেশ নয়। ফলে ভারতকে ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশ আইনগত ও নৈতিক দিক থেকে বাধ্য নয়। তবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ পেলে ভারতের দু’অংশের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়, অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় হাজার হাজার ভারতীয় যানবাহন চলাচলের ভার বহনের ক্ষমতা কতটুকু আছে? ট্রানজিটের জন্য নতুন রাস্তা ও অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে সীমিত কৃষিজমির ওপর চাপ পড়বে। এর সাথে পরিবেশগত ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কতটুকু, অবকাঠামো নির্মাণে কত পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে, তা তুলতে কতদিন লাগবে, বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি না — ট্রানজিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থায় যাবার আগে এসব বিষয় খুঁটিয়ে বিচার করা দরকার ছিল। সামরিক উদ্দেশ্যে এ সুযোগ যেন ব্যবহৃত না হয় এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সর্বাগ্রে তা নিশ্চিত করা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক, পারস্পরিক আস্থা ও সমমর্যাদাপূর্ণ মনোভাব থাকলেই একমাত্র এ ধরনের সহযোগিতার বিষয় বিবেচনা করা যায়। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দুর্বল দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের শাসকশ্রেণীর আধিপত্যবাদী রাজনীতির কারণে সেই পরিবেশ এ মুহূর্তে নেই। সীমান্তে হত্যা ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই পরিবেশ নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, দুদেশের জনগণের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে মূল ভূখন্ড র মানুষের যাতায়াতের ধারণার আমরা বিরোধী নই। ব্রিটিশ আমলে এই পুরো অঞ্চলের যোগাযোগের জন্য আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পরও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ ছিল। যুদ্ধের পর দুই দেশের শাসকগোষ্ঠী পরস্পরকে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ গণ্য করে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহ্যগত যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের মৈত্রী দৃঢ় করতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রেলওয়ের মাধ্যমে (বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে) ভারতের দু’অংশের মানুষের যাতায়াতের সুযোগ দেয়া ভুল কিছু নয়। কিন্তু ভারতীয় শাসকদের উদ্দেশ্য দুদেশের জনসাধারণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা নয়, তারা সেদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা চায়। এবং সেটাই এবারের চুক্তিতে হয়েছে। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনের অবাধ সুযোগ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ভবিষ্যতের দুর্ভোগের বড় কারণ হতে পারে।
প্রতিবেশীর ওপর সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের সাথে কোনো চুক্তিতে যেতে হলে কিছু বিবেচনা মাথায় রাখা উচিত নয় কি?
ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে তার পারস্পরিক আস্থা ও মর্যাদার সম্পর্ক নেই। ভারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এই তো গত ৯ জুন শেষ রাতে মায়ানমারের সীমানা পেরিয়ে সে দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত এন এস সি এন-খাপলাং শিবিরে ভারতীয় সেনাবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে। এভাবে আরেক দেশের সীমানা অতিক্রম করে আক্রমণ করা খুবই ন্যাক্কারজনক। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার পর ভারত ঘোষণা দিয়েছে, তাদের প্রয়োজনে যে দেশেই এ প্রক্রিয়ায় ঢুকতে হয়, তারা ঢুকবে। এ ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মনে প্রশ্ন ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পূর্বতন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে পরাস্ত করার জন্য বিরোধী দলগুলোকে মদত দিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কর্তারা, এই অভিযোগ প্রকাশ্যে করেছেন পরাজিত রাজাপক্ষে। নেপালে ভূমিকম্প পরবর্তী ত্রাণকাজে ভারতীয় সেনার ভূমিকায় নেপাল সরকারের ক্ষোভ ও ভারতীয় সেনাদের নেপাল ত্যাগ করার ফরমান জারি তো অতি সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। এরও আগে সিকিম দখল করে নেয়া, মালদ্বীপে ক্যু’র মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটানো প্রভৃতি ঘটনায় ভারতের আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে এরূপ সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তার করা একটি দেশের সাথে ট্রানজিট সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার আগে একটু ভেবে দেখা উচিত নয় কি?
আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। চীন এখন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। আমেরিকা, ইউরোপ সবাইকেই চীনের কাছে যেতে হচ্ছে ঋণের জন্য। কারণ তার আছে বিপুল পরিমাণ ডলারের রিজার্ভ। আবার চীন নিজেও তার প্রভাব বিস্তার করছে। দক্ষিণ-পূর্ব চীন সাগরে চীন কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করছে। একটি যুদ্ধ ঘাঁটি হিসেবে সে দ্বীপটিকে গড়ে তুলছে। বিষয়টিকে একটি ঝুঁকি হিসেবে নিয়েছে আমেরিকা। চীনকে তারা সতর্ক করে দিয়েছে।
এদিকে চীন ও রাশিয়ার সাথে মিলে ভারত ব্রিকস্ গঠন করলেও আমেরিকার সাথে ভারতের ভাল বোঝাপড়া আছে। ভারতের সীমান্তে চীনের অবস্থান ভারতের জন্য সুখকর নয়। ফলে এ আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না, ভারতের উত্তর-পূর্বে যে চীন সীমান্ত, যে কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেখানে সৈন্য সমাবেশ করতে হলে এই ট্রানজিট রোডই সবচেয়ে কার্যকরী হিসেবে ভারত বেছে নেবে। এটি ঘটবেই তা আমরা বলছি না। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষকে এই বিষয়টিকে ভেবে দেখার জন্য বলছি। কারণ ইতিমধ্যেই ভারতের অসহিষ্ণু আচরণের কিছু নজির আমরা তুলে ধরেছি। আর সা¤্রাজ্যবাদের চরিত্র যারা বোঝেন তারা আমাদের আশঙ্কা একেবারে অমূলক মনে করবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সবচেয়ে আশংকার কথা, সেই উত্তপ্ত সময়ে এ ব্যাপারে ভারতকে বাধা দেবার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নিরপেক্ষ থাকাই বাঞ্চনীয়। তা না হয়ে কোনো একদিকে বাংলাদেশ জড়িয়ে গেলে তা এদেশের ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়।
ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে
ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা জনগণ প্রত্যক্ষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের ক্ষোভও অনেক বেশি। বিশেষ করে বহু অমীমাংসিত বিষয় মীমাংসা না করা, সীমান্তে হত্যাকান্ড, সর্বোপরি জনগণের ওপর চেপে বসা অন্যায়, অগণতান্ত্রিক সরকারের পেছনে ভারতের সরাসরি সমর্থন-এ সবের কারণে মানুষের মনে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মনোভাব প্রবল। কিন্তু এ কথা তো ঠিক যে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি-জামাত জোট, যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন – ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীতা তারা কেউই করবেনা। কারণ এদেশের পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা। এখানকার পুঁজিপতিরা ভারতীয় পুঁজিবাদের সাথে কোলাবরেশনে কিছু মুনাফা তুলতে চান। দেশ তাদের জন্য কিছু না। তারা তাদের মুনাফার প্রশ্ন যুক্ত থাকলে দেশপ্রেমের বন্যা বইয়ে দেবেন, ঠিক তেমনি সামান্য মুনাফার খোঁজ পেলে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব কিছুরই তোয়াক্কা করবেন না। ফলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা দেশের বুর্জোয়াদের কাছে একটি কথা মাত্র। বিশ্বের কোন দেশের বুর্জোয়ারাই আজ আর নিজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের ধার ধারেনা। মুনাফার প্রয়োজনে, পুঁজির বৃদ্ধি কিংবা রক্ষার প্রয়োজনে দেশের সবরকম স্বাধিকারের নীতি পদদলিত করতে তাদের মুহূর্তও বাধবেনা। আবার ভারত ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণে এ দেশের উপর তার সবরকম খবরদারি চালাবে। এর বিরুদ্ধে লড়তে হলে গোটা দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সেটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে জনগণকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ ও সাহসী হতে হবে।
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীতা করা মানে ভারতীয় জনগণের বিরোধীতা করা নয়। ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজিবাদ নিজের দেশের জনগণের উপর চরম অত্যাচার নামিয়ে নিয়ে এসেছে। সে দেশে চাষীরা আত্মহত্যা করছে। লে-অফ, শ্রমিক ছাঁটাই, বেকারত্ব সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা। এসবের বিরুদ্ধে সেখানকার গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষরা লড়ছেন, শ্রমিক-কৃষকরা লড়ছে। ভারতের বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার। তাই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভারতীয় জনগণ আমাদের বন্ধু। মনে রাখা দরকার ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবকে ভিত্তি করে একটি শ্রেণী মানুষের মধ্যে উগ্র ভারতবিরোধীতা ছড়িয়ে দিতে চায়। তারা তার সবরকম চেষ্টাও করছে। সাম্প্রদায়িক জিগির তুলে তারা তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত সবরকম ফায়দা হাসিল করতে চায়। দেশের জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত। এজন্য বাম গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের ঝান্ডা সমুন্নত রাখতে হবে।