‘বর্তমানে আমরা দেব-দেবীর জামানায় বাস করছি। এই শাসনে প্রশ্ন করা যায় না। প্রশ্ন করলে, প্রতিবাদ করলে দমন-নির্যাতন নেমে আসে। এই রকম একটা সময়ে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করে প্রতীকী গণভোটের যে আয়োজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট করেছে- তা আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে, স্বপ্ন দেখায়। তরুণ-যুবকদের এই কর্তব্যবোধ অামরা দেখে এসেছি ৫২, ৭১, ৯০ এমনকি ২০০৭-০৮ এর সামরিক শাসনকালে। আজকের এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশকে পথ দেখাবে।’ – প্রতীকী গণভোটের গণরায় প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান এমনটি বলছিলেন।
১৯ জানুয়ারি ‘১৭ বিকেল ৪টায় যশোর জেলার দড়াটানা ভৈরব চত্ত্বরে ‘সুন্দরবন নাকি রামপাল’ শীর্ষক গণভোটের গণরায় প্রকাশ অনুষ্ঠান অায়োজিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে গত ৬-১৮ জানুয়ারি যশোরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট সংগৃহীত হয়। মোট ভোট পড়েছে ৬৪৪৮টি, রামপালের পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৭৩টি (৭.৩৩%), ভোট বাতিল হয়েছে ৬৫টি (১.০২%) এবং সুন্দরবনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৯১০টি (৯১.৬৫%)। অর্থাৎ গণভোটে সুন্দরবন জয়ী হয়েছে। জনগণ রায় দিয়েছে, সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না।
গণরায় প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাসদ (মার্কসবাদী) যশোর জেলার সমন্বয়ক কমরেড হাসিনুর রহমান, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির যশোর জেলা শাখার সদস্য সচিব এ্যাড. মাহামুদ হাসান বুলু, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু। সভাপতিত্ব করেন উজ্জ্বল বিশ্বাস, পরিচালনা করেন পলাশ পাল।
ড. তানজীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না, কেননা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সরকারের এমন যুক্তি প্রতারণার শামিল। কেননা পৃথিবীতে এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি যার মাধ্যমে কয়লার দূষণ পুরোপুরি কমানো সম্ভব। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কতটা ক্ষতিকর তার প্রমাণ আমরা বড় পুকুরিয়ায় পাবো। তবুও সরকার সুন্দরবনের ক্ষতির ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না। আসলে সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে, যুক্তি-বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণকে পাশ কাটিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপদ আছে। ভবিষ্যতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। কিন্তু তা থেকে বাঁচবার একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যৌথভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করা।’