ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বাসদ(মার্কসবাদী) সিলেট জেলার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ১৩ জুলাই বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার সদস্য এ্যাড. হুমায়ুন রশীদ সোয়েব এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য সুশান্ত সিনহা সুমন, রেজাউর রহমান রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াৎ আহমেদ, শাবিপ্রবি শাখার আহবায়ক অপু কুমার দাশ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১লা জুলাই গুলশানে এবং ঈদের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের হামলায় প্রাণহানীর ঘটনা দেশবাসিকে স্তম্বিত করেছে। ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠার শ্লোগান তুলে যারা নিরপরাধ মানুষকে খুন করে তারা চূড়ান্ত মানবতাবিরোধী শক্তি। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই এবং এদেশের অধিকাংশ মানুষ বরাবরই তাদের প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার দায় মহাজোট সরকার এড়াতে পারে না। এখনো সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের চিহ্নিত না করে দলীয় স্বার্থে ব্লেম গেইম ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের খেলা খেলছে। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান জঙ্গী উত্থান বিশ্ব পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সাম্রাজ্যবাদীরাই বিভিন্ন সময় মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সৃষ্টি করেছে, মদত দিয়েছে, অস্ত্র-প্রশিক্ষণ-অর্থ দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই মনে করে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ বাস্তবে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শাসকগোষ্ঠী সবসময় জঙ্গীবাদের সমস্যা নিজেদের রাজনৈতিক হীন স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে এবং সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে একে প্রশ্রয় দিয়েছে। সর্বোপরি, এদেশের শাসকগোষ্ঠী সবসময় নিজেদের গণবিরোধী শাসন আড়াল করতে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছে, মোৗলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দিয়েছে, কূপমন্ডুক মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছে। অথচ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। জঙ্গীবাদের সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে আজ তাই প্রয়োজন মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আদর্শগত ও সাংস্কৃতিক সংগ্রাম, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক সমাজ-সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিবাদী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় মৌলবাদ ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ উভয়ের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠী ও কায়েমী স্বার্থের প্রভাবমুক্ত সকল বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদদায়িক শক্তি ও জনগণের প্রতি আমরা ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।