স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনায় শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি ও দুর্নীতি রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১ টায় নিউ মার্কেট চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ অনুস্ঠিত হয়েছে। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি তাজনাহার রিপন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারন সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন নগর শাখার সহ-সভাপতি মুক্তা ভট্টচার্য, সদস্য জয়তু সুশীল, মোঃ সাইয়েম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “ ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতির জীবনে একটি গৌরবোজ্জ্¦ল মহিমাময় দিন। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী এরশাদের ডঃ মজিদ খান প্রনীত বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি বাতিলের জন্য জীবন দিয়েছিল শিশু দীপালি সাহা, জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, মোজাম্মেলসহ আরো অনেকেই। কিন্তু আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এই সংগ্রামের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে ভালাবাসা দিবসের নামে কর্পোরেট ভোগবাদী সংস্কৃতিকে উস্কে দিচ্ছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী তাদের ফুল-কার্ড-গিফটের ব্যবসা করার জন্য, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো তাদের ব্যবসার জন্য ভালোবাসা দিবসকে এমনভাবে তরুণদের সামনে উপস্থিত করেছে যে আজকের তরুণ ও ছাত্রসমাজ জানেই না সংগ্রামের এই ইতিহাসের কথা। আমরা মনে করি, ইতিহাস ভুলে গিয়ে, যারা বৃহত্তর সমাজের মানুষকে ভালোবেসে শিক্ষা রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণ না করে, শুধুমাত্র সংকীর্ণ, আত্মকেন্দ্রীক হয়ে ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করা যায় না। সমাজের মানুষের প্রতি দায়বোধ ও ভালোবাসা থেকে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই ভালোবাসার প্রকৃত মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব।”
বক্তারা আরো বলেন, “ যে সাম্প্রদায়িক, বাণিজ্যিকীকরণ ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল তা আজও পূরণ হয়নি। শাসক পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয় নি শাসকদের নীতি ও শিক্ষা সম্পর্কিত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। সারাদেশের স্কুলগুলোতে প্রতিবছর বাড়ছে ভর্তি ফি ও বেতন ফি। এর বিরুদ্ধে ছাত্র অভিভাবকরা লড়ছেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালু শিক্ষার মানের অবনমনই শুধু ঘটায় নি, কোমলমতি শিশুদের উপর মানসিক চাপও বাড়িয়েছে। স্কুলগুলোতে আজ কোচিং ব্যবসা চলছে। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজনের অভাব সৃজনশীলতা বাড়ায় নি, বরং বহুগুণে বাড়িয়েছে কোচিং ও গাইড ব্যবসা। চসিক পরিচালিত স্কুল-কলেজে ভর্তুকি কমিয়ে বেতন ও ভর্তি ফি দ্বিগুণ হারে বাড়ানোর যে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত তার ফলে ঝরে পড়েছে হাজার হাজার গরীব সাধারন শিক্ষার্থী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রের বাস্তবায়ন চলছে। বিভিন্ন বিভাগে নাইটকোর্স চালুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাইভেটে রুপান্তর করার চেষ্টা করছে সরকার। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠার পরিবর্তে ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারন ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারে না। সেখানেও এখন বছর বছর বাড়ছে সেমিষ্টার ফি, ভর্তি ফি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেজনজট নিরসনের জন্য স্বতন্ত্র পরীক্ষাহল. পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে ২১০ দিন ক্লাস নিশ্চিত না করে ক্রাশ প্রোগ্রামের নামে পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষা চালু শিক্ষার মানকেই ধ্বংস করছে। এভাবেই চলছে ক্রমাগত সর্বস্তরে শিক্ষাকে ধ্বংস করার নান আয়োজন।”
বক্তারা বলেন, “ সারাদেশে বাড়ীভাড়া, গাড়ীভাড়া, গ্যাসবিল, বিদ্যুৎবিল যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না মানুষের আয়। কিছুদিন আগে রেলের ভাড়া পুনরায় বৃদ্ধির যে ঘোষণা তা মানুষের জীবনকে আরো দূর্বিষহ করে তুলবে। এই সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষার ব্যয়। সামনের দিনে সাধারন মানুষেরা পড়াতে পারবেন তো তাদের সন্তানদের? ”
নেতৃবৃন্দ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনায় সর্বস্তরে শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।