Saturday, April 27, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদহাসিনা ও মোদি যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করুন — জাতীয় কমিটি

হাসিনা ও মোদি যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করুন — জাতীয় কমিটি

11391495_858821084201679_8090820391443760587_n
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর, বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং সুন্দরবনধ্বংসী প্রকল্প’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের ঘোষাণা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৩ জুন সকাল ১১ টায় মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, প্রকৌশলী মওদুদুর রহমান, গবেষক মাহা মির্জা। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, রাজনীতিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সাইফুল হক, রুহিন হোসেন প্রিন্স, এডভোকেট আব্দুস সালাম, বজলুর রশীদ ফিরোজ,মোশাররফ হোসেন নান্নু, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, নাসির উদ্দিন নসু, শহীদুল ইসলাম সবুজ, মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন,শামসুল আলম, মিজানুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, বহ্নি শিখা জামালী ,জুলফিকার আলী, ফকরুদ্দিন কবির আতিক, সেকান্দর হায়াত ,মীর মোফাজ্জল মোস্তাক প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূচনা বক্তব্যে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য আর হুমকি ধামকি দিয়ে আন্দোলন দমনের যত চেষ্টাই করা হোক না কেন দেশের জনগন কোন ভাবেই সুন্দরবন ধ্বংসী কোন প্রকল্প মেনে নেবে না। তিনি নীতিনিষ্ঠ অবস্থান থেকে সুন্দরবন রক্ষাসহ জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেতন দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানান।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এবারও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে পৃথক পৃথক বাণী দিবেন,….. কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার, বাণী ও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিকে সরকারেরই যে প্রকল্পটি সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করে তা হলো সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন করে সুন্দরবনের পাশে ভারতের এনটিপিসির নেতৃত্বে যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। আর তার পেছনে এখন যুক্ত হয়েছে ওরিয়ন প্রকল্প। সুন্দরবনের পাশে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে প্রবল জনমত, দেশি-বিদেশী বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, ব্যক্তি ও সংগঠনের আপত্তি সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে না সরকার। সম্প্রতি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি মূলক কাজও চলছে।
মূল কেন্দ্র নির্মাণের আগে মাটি ভরাট ড্রেজিং ইত্যাদি প্রস্তুতিমূলক কাজে খুব বেশি পরিবেশ দূষণ হওয়ার কথা না। কিন্তু এই প্রস্তুতিমূলক কাজের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণটুকুও নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি বলে খোদ সরকারি মনিটরিং রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে! বালি ভরাটের সময় ধুলো নিয়ন্ত্রণ, ড্রেজিং এর সময় শব্দ দূষণ ও কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা ইত্যাদির জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল, তার কোনটাই পালন করা হয়নি বলে স্বীকার করা হয়েছে সরকারেরই নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস এর নভেম্বর ২০১৪ সালের মনিটরিং রিপোটে। এই দূষণগুলোর জন্য হয়তো সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে না, কিন্তু এগুলো স্পষ্টতই দেখায় যে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে সুন্দরবনের কী ঘটবে। প্রস্তুতি পর্যাযেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে, যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হবে, যখন তা পুরোদমে চালু হবে, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার টন সালফার নাইট্রোজেন গ্যাস, ছাই, কয়লা ধোয়া পানি নির্গত হবে তখন কী ঘটবে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না।’ সম্প্রতি শ্যালা নদীতে তেলের ট্যাংকার ও ভোলা নদে সার বোঝাই জাহাজ ডুবি এ বিপদকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সুন্দরবনের ১৪ কিমি এর মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এনটিপিসি এ ধরনের কোনো প্রকল্প ভারতে করতে সক্ষম হতো না, কেননা ভারতের ‘ইআইএ গাইডলাইন ২০১০’ অনুসারে বনাঞ্চলের ২৫ কিমি-র মধ্যে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় না। ভারতে পরিবেশ আইন অনুসারে এনটিপিসির একাধিক প্রকল্প বাতিল করতে হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলা হয়, আপনারা যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করুন এবং দুদেশের সুন্দরবন বিকাশে কর্মসূচি নিন।
এছাড়া এবছরের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সকল অনুষ্ঠানে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনধ্বংসী সকল অপতৎপরতা বন্ধের দাবি সামনে আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৪ জুন মাগুড়ছড়া দিবস পালন। ঐ দিন মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদ ধ্বংসের জন্য শেভ্রন ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সুন্দরবন রক্ষাসহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবিতে দেশব্যাপী সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরন তুলে ধরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ভাবেও রামপাল প্রকল্প ও সুন্দরবন ধ্বংসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রর্যায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে আর্থিক বিনিয়োগ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নাই। তাই এই সুন্দরবন রক্ষায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশ-ভারতের জনগনের যৌথ প্রতিরোধসহ সারা বিশ্বের সচেতন মানুষ এই প্রতিরোধ আন্দোলনে শরীক হবে।

 

 

 

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments