Saturday, April 27, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদমোদির সফর প্রসঙ্গে বাসদ (মার্কসবাদী)'র প্রতিক্রিয়া।। তিস্তাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ছাড়া...

মোদির সফর প্রসঙ্গে বাসদ (মার্কসবাদী)'র প্রতিক্রিয়া।। তিস্তাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ছাড়া সুসম্পর্কের কথা বলা প্রহসন

জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিচালনা করতে হবে

cpi-m-logo_1বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সুসম্পর্কের ডংকা বাজানো হলেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এই সফরের আলোচ্যসূচিতেই নেই।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে যে ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল তা ৪৪ বছর পরে বাস্তবায়ন করে প্রচারের জোরে একেই বিরাট অর্জন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। যদিও ইতোমধ্যে কাঁটাতার দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী হত্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ‘বদান্যতা’র বিনিময়ে আওয়ামী মহাজোট সরকার কানেকটিভিটি-র নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন অর্থাৎ করিডোর সুবিধা দিতে চলেছে। কানেকটিভিটি বা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার আগে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। একই সাথে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি প্রত্যাহারে ভারতের প্রস্তাবিত আন্তঃনদীসংযোগ প্রকল্প এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎস বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করা প্রয়োজন। অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশের ‘ন্যাচারাল রাইট’ ও ন্যায্য পাওনা। ভারত সরকার একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের নদীব্যবস্থাকে বিপন্ন করেছে এবং নানা অজুহাতে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন আলোচনা ঝুলিয়ে রেখে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করেছে। এই নীতি অব্যাহত রেখে সুসম্পর্কের কথা বলা প্রহসন মাত্র।”

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “ভারতকে ট্রানজিট-এর নামে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক বিবেচনা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অবকাঠামোগত সামর্থ্য ও অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করা উচিত। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ পেলে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়, অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়। দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমমর্যাদাপূর্ণ মনোভাব থাকলেই একমাত্র এ ধরনের সহযোগিতার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দুর্বল দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের শাসকশ্রেণীর সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী রাজনীতির কারণে সেই পরিবেশ এ মুহূর্তে নেই। যেমন, সম্প্রতি নৌ-প্রটোকল সংশোধনীর খসড়ায় বাংলাদেশকে ভারতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয়। ট্রানজিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থায় যাবার আগে নিশ্চিত করতে হবে – সামরিক উদ্দেশ্যে এ সুযোগ যেন ব্যবহৃত না হয় এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যাতে হুমকির মুখে না পড়ে। তবে, বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও মৈত্রী দৃঢ় করতে রেলওয়ের মাধ্যমে (বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে মূল ভূখ-ের মানুষের যাতায়াতের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ভারতীয় শাসকদের মূল উদ্দেশ্য দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা নয়, তারা সেদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা চায়।”

তিনি আরো বলেন, “ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বাড়ানো, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের মূল ভূ-খন্ডে পরিবহন এবং আন্তঃদেশীয় এই গ্রিড থেকে বাংলাদেশেকে বিদ্যুৎ প্রদান ইত্যাদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলবে যা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগে সুন্দরবনের পাশে রামপালে বৃহদায়তন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন করার আত্মঘাতী প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।”

তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। শ্রীলংকায় সরকার পরিবর্তনে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এমনকি নেপালের শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসন না হওয়ার ক্ষেত্রেও ভারতের প্রভাব কাজ করছে। নেপালে ভূমিকম্প পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতার নামে অননুমোদিত গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারকে ভারত কিভাবে মদত দিয়ে চলেছে তা সবাই জানেন। ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী সেদেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের বাজার সম্প্রসারণ ও পুঁজি বিনিয়োগের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়াকে তার প্রভাবাধীন অঞ্চলে পরিণত করতে চায়। অন্যদিকে এই অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-চীন আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনাও ক্রিয়াশীল। এই প্রেক্ষাপটে নতজানু নীতি পরিহার করে স্বাধীন অবস্থান থেকে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিচালনা করার দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে।”

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments