Saturday, December 21, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধসান্ধ্যকালীন কোর্স শিক্ষার বিস্তার নয়, বাণিজ্যিকীকরণকে ত্বরান্বিত করবে

সান্ধ্যকালীন কোর্স শিক্ষার বিস্তার নয়, বাণিজ্যিকীকরণকে ত্বরান্বিত করবে

RU [dropcap]স[/dropcap]ম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি সান্ধ্যকালীন বা নাইট কোর্সবিরোধী বিশাল ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হলো। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, কয়েকদিন ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে হুমকি, পুলিশ-ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা, পরবর্তীতে ৭৯০ জন শিক্ষার্থীর নামে মামলা এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করলেও  বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে তারা সান্ধ্যকালীন কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ক্লাস চালু রেখেছে। কিন্তু এভাবে কি কোনো ন্যায্য আন্দোলন দমন করা যাবে? কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, গত ৮-১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন এভাবে বাণিজ্যিক কোর্স চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে তা ভেস্তে গেছে। যেসব জায়গায় ছাত্রদের অসংগঠিত অবস্থার সুযোগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাইটকোর্স চালু করা হয়েছে, সেখানে ক্রমেই এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে।

সান্ধ্যকোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সসহ নানা ধরণের বাণিজ্যিক কোর্স চালু করতে গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররা ভাবছে, শিক্ষকদের কারণে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষকসমাজ মনে করছে, ছাত্রদের কারণে তাদের বাড়তি আয়-রোজগারের পথটুকু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে সান্ধ্যকালীন কোর্স খোলার পক্ষে যে যুক্তিগুলো করা হয়-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অবকাঠামো বিকেলের পর পড়ে থাকে। এটাকে কাজে লাগিয়ে বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’পয়সা আয় হলে মন্দ কি?
২. বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি নাইটকোর্সের মাধ্যমে পূরণ করা যাবে।
৩. নাইটকোর্স চালুর মাধ্যমে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটবে।
৪. নাইটকোর্স বা ডিপ্লোমা কোর্স চালু হলে বিভাগের উন্নতি হবে। নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মিত হবে।
৫. শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থা আছে। তাই অনেকেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। যদি নিজস্ব ক্যাম্পাসেই কোর্স খুলে পয়সা আয় করা যায় তাহলে তো আর শিক্ষকদের বাইরে যেতে হবে না।
৬. পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোর্স চালু আছে। আমাদের দেশে হলে সমস্যা কি?

এই যুক্তিগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে ন্যায্যতা পায়নি, কেউ কেউ বড় জোর বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাই বারে বারেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এসব বাণিজ্যিক কোর্সের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এ কারণে ইদানিং কিছু শিক্ষক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় যুক্তি করছেন যা শুনতে আপাত অর্থে নমনীয় বা ছাত্রস্বার্থের পক্ষে বলে মনে হতে পারে। যেমন- ‘সান্ধ্যকোর্সের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক পরস্পর মুখোমুখি হয়ে পড়ছে। শিক্ষকরা যেমন আর্থিক সংকটে থাকেন এবং সে কারণে এসব কোর্স পড়াতে চান। কিন্তু ছাত্ররা মনে করছে এতে করে মূল ধারার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে, শিক্ষকরা পড়ানোর সময় পাবেন কম। তাছাড়া একই সময়ে কম পরিশ্রম করে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি নিয়ে যাবেন। এখান থেকে একটা যুক্তিনিষ্ঠ সমাধান বের করা দরকার। সমাধান হিসেবে আমাদের ভাবতে হবে কি করে মূল ধারার শিক্ষাকে ব্যাহত না করেই অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়। কিভাবে সিলেবাস কারিকুলামও একই রাখা যায়, যাতে ক্লাস ভিন্ন হলেও একই সিলেবাসে একই প্রশ্নপত্রে দিনে এবং সন্ধ্যায় পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। আর সান্ধ্য কোর্সে কেবল উচ্চবিত্তরাই বা পড়বে কেন? সাধারণদের জন্যও তো পড়বার ব্যবস্থা থাকতে পারে’ ইত্যাদি।

এভাবে বলা বাস্তবে ‘মিছরির ছুরি’র মত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করা, দেশের প্রয়োজনে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো কিংবা শিক্ষক সমাজের জন্য কিছুটা আর্থিক প্রণোদনার কথা বলতে বলতেই এইসব বুদ্ধিজীবীরা (!) সান্ধ্যকোর্সের মতো বাণিজ্যিক কোর্সের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝতে না পেরে এতে কেউ কেউ হয়তো বিভ্রান্তও হচ্ছেন। কিন্তু যত মিষ্টি করেই বলা হোক না কেন নাইটকোর্স উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যের পণ্য বানানোর অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আমরা মনে করি-
প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো পড়ে থাকে এই যুক্তি অসঙ্গত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো পড়ে থাকার মানে দাঁড়ায় সেখানে সামান্য কিছু ক্লাসের বাইরে আর তেমন কিছু হয় না। নয়তো পড়ে থাকার সুযোগ কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয় কি research institute নাকি training institute?। যদি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হয় তবে তা কখনও এক বেলার প্রতিষ্ঠান হতে পারে না বা কেবল কিছু ক্লাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এখানে প্রত্যেকটি বিভাগে বিস্তর জ্ঞান চর্চা, অর্জনের সুযোগ থাকতে হয়। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীত দিনের জ্ঞান সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিকতম বিষয়সমূহে নতুন জ্ঞানও সৃষ্টি করতে হয়। নয়তো সমাজ, চিন্তা বন্ধ্যা হয়ে যায়। শুধু বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কিছু বিষয়ে নয়, ইতিহাস-সাহিত্য-দর্শন-চারুকলা-নাট্যকলা সমস্ত ক্ষেত্রেই এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন। আর কোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান কি কেবল ওই বিষয় পড়লেই জানা যায়? এ জন্য নানা co-curricular activities-এর আয়োজন থাকতে হয়। একজন বিজ্ঞানের ছাত্রকে যেমন রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি জানতে হয় তেমনি  সাহিত্য কিংবা দর্শনের ছাত্রকেও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হয়। এজন্য ছাত্র- শিক্ষকের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াও খুব প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে?  এভাবে একজন শিক্ষার্থীর যদি আলোকিত-বিকশিত মানুষ হবার সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে তবে কি  অবকাঠামো পড়ে থাকার কোনো সুযোগ থাকে? আর তা না করে  কি কেবল কিছু বিষয়ের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়? একইভাবে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ যদি একজন শিক্ষকের কাজ হয়, তবে তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। তাহলে একজন শিক্ষক সকাল-বিকাল ক্লাস নেবার কথা ভাবেন কি করে?

দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বাজেট  ঘাটতি মেটাতে নাইটকোর্স বা সান্ধ্যকালীন কোর্স খোলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য এসব কোর্স খোলার অনুমতি দিয়েছে। এ কথার মাধ্যমে একটি কথাই পরিষ্কার হয়- এই ধরনের কোর্সের আমদানির উদ্দেশ্যই হলো অর্থ উপার্জন। ফলে ‘শিক্ষার বিস্তার’, ‘নিুবিত্ত-সাধারণ মানুষের পড়বার সুযোগ’ এইসব যুক্তিগুলো আর ধোপে টেকে না। এখানে প্রশ্ন দুটি। এক. শিক্ষকরা কি বিক্রি করতে উদ্যত হয়েছেন? দুই. বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আর্থিক দায়ভার অর্থাৎ বাজেট ঘাটতির দায় কি ছাত্ররা মেটাবে? শিক্ষকরা সন্ধ্যাবেলায় যা পড়াবেন তা শত-হাজার বছরের সঞ্চিত জ্ঞান। তা কোনো ব্যক্তিবিশেষের একক সম্পত্তি নয়। তাহলে কোন্ এখতিয়ারে তারা সন্ধ্যা বেলা মূলত অর্থের বিনিময়ে এই জ্ঞান বিক্রি করবেন? নিউটন-আইনস্টাইন-ভলতেয়ার-রুশো-মার্কস প্রমুখ মনীষীরা মানবজাতির কল্যাণে যে জ্ঞানভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন তা কি বিক্রয়যোগ্য জিনিস? দুই. বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নাকি রাষ্ট্রের? বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রেরই অর্ন্তগত প্রতিষ্ঠান এবং তা রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে উচ্চশিক্ষা। অর্থাৎ  শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ বহুগুণে সম্পদ রূপে ফিরে আসে। এই সম্পদ বস্তুগত ও ভাবগত উভয় ক্ষেত্রেই। তাই উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যক্তি সমাজে অনেক বেশি অবদান রাখতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয় এইভাবে সমাজের বিকাশে স্বীয় ভূমিকা পালন করে। এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপালন অর্থাৎ আর্থিক দায়িত্ব নেবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হলে এ দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। এখানে একটি কথা কখনো যুক্তি হিসেবে আনা হয়, ধনীরা বেশি ফি দেবে আর দরিদ্ররা কম ফি দেবে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানও এ কথা বলেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কি একটি ট্যাক্স আদায়ের প্রতিষ্ঠান? একজন শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যা কিছুই কেনে তার সাথেই কর দেয়। সেটাই সরকারের তহবিলে জমা হয়। সুতরাং নতুন করে পড়ার জন্যও তাকে বাড়তি অর্থ দিতে হবে-এটা একদিকে যেমন যৌক্তিক হয় না অন্যদিকে এটা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বৈষম্য সৃষ্টি করবে। আর কার কত অর্থ আছে, কে কত কর দেবে সে কাজ তো রাষ্ট্রের কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের,  বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়।

তৃতীয়ত, বলা হচ্ছে সান্ধ্যকোর্সের মাধ্যমে দিনের বেলার পাশাপাশি রাতেও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। এতে শিক্ষার প্রসার ঘটবে। কোন ধরনের শিক্ষার্থীরা পড়বার সুযোগ পাবে তা আগের আলোচনাতেই স্পষ্ট হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং এমবিএ করতে এখন খরচ লাগে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেবার সামর্থ কোন স্তরের শিক্ষার্থীদের আছে তা বলাই বাহুল্য। বাস্তবে এটি বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, ঐতিহ্যকে চাকরির বাজারে উচ্চমূল্যের সার্টিফিকেট হিসেবে বিক্রির পরিকল্পনা। কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে যুক্তি করেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স হলে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কি? আমাদের তো আর ফি বাড়ছে না? ওখানে পড়বে তো সামর্থবান চাকুরিজীবীরা। বাস্তবে এটি অন্যায্য বিষয়কে সময়ে গ্রহণযোগ্য করানোর চাতুরি! এখন যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টানা হয় তখন আর বাইরে যেতে হবে না, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইটকোর্সের দৃষ্টান্ত টানা হবে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজের শিক্ষার্থীদের ফি নির্ধারিত হয়েছে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। দিন আর রাতের ফারাক তো এভাবেই ক্রমাগত দূরীভূত হচ্ছে! শিক্ষকদের একাংশও যুক্তি করছেন-ওরা বেশি টাকা দিয়ে পড়তে পারলে তোমরা পারবে না কেন? তাই বলা যায়, নাইটকোর্সের সুদূর প্রসারী ফলাফল হবে ভয়াবহ। উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত জনসাধারণ।

চতুর্থত, অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়, সান্ধ্যকালীন কোর্সের টাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের উন্নতি হবে। বিভাগের উন্নতি বলতে আমাদের বোঝানো হয় চকচকে টাইলস, এসি ক্লাসরুম, দামি সোফা-ফার্নিচার। কিন্তু উন্নতি মানে আমাদের বোঝা উচিত গবেষণায় উন্নতি। কেননা গবেষণাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণসত্ত্বা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছরে কয়েকটি বিভাগে (এমবিএ, লাইব্রেরি সায়েন্স, পপুলেশন সায়েন্স, সোশাল ওয়েলফেয়ার ইত্যাদি) সান্ধ্যকোর্স খোলা হয়েছে কিন্তু এতে করে কি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড তার পুরোনো মর্যাদা ফিরে পেয়েছে? সান্ধ্যকালীন কোর্সের অর্থ দিয়ে এসব বিভাগে গবেষণায় বরাদ্দ বেড়েছে কি? বাস্তবে টাকার বিনিময়ে একটা সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয়াই যেন এসব কোর্স পড়ানোর উদ্দেশ্য। জ্ঞানে সমৃদ্ধ না হয়ে বাইরের চাকচিক্যকে আমরা উন্নতি বলতে পারি কি?
বিভাগ উন্নয়ন বলতে আলাদা কোন বিষয় আছে কি? বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এর পরিচালনার জন্য প্রতি বছর বাজেট প্রণীত হয়। বিভাগ পরিচালনার ব্যয় সেখান থেকেই আসার কথা। বরাদ্দকৃত টাকায় যদি বিভাগের খরচ সংকুলান না হয় তবে বিভাগের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দাবি জানানো। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি করবে। কিন্তু তা’না করে যদি শিক্ষার্থীদের পকেট থেকে অর্থ আদায়ের রাস্তা গ্রহণ করা হয় তবে যাদের এই আর্থিক সামর্থ নেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পথ বন্ধ হবে। সরকার টাকা দিতে গরিমসি করে কেন? সরকারের টাকা মানে মন্ত্রী-এমপি’দের ব্যক্তিগত টাকা নয়, জনগণের টাকা।

tumblr_ljzxwh88ca1qj3enmo1_400পঞ্চমত, শিক্ষকদের বাড়তি আয়ের উপায় হিসেবে সান্ধ্যকোর্সকে দেখা হচ্ছে। এ কথা সত্য যে, বর্তমান সময় ও চাহিদার বিবেচনায় শিক্ষকদের বেতন কম। উপযুক্ত বেতন বা সামাজিক নিরাপত্তা না থাকলে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে বিঘœ ঘটে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকদের অর্থের সংকুলান করবে কে? ছাত্ররা নাকি রাষ্ট্র? আজ যেসব শিক্ষকরা ছাত্রদের উপর ফি চাপিয়ে নিজেদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে চাইছেন তারা কি একবার ভেবে দেখবেন, তাদের ছাত্রজীবনে যদি অতিরিক্ত ফি’র বোঝা বহন করতে হতো, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটুকু কি অনেকেই হারাতেন না? তাহলে শিক্ষকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পরিপূরক বেতন-কাঠামো নিশ্চিত করবে কে? নির্দ্বিধায় এটি নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে, বাণিজ্যিক কোর্স খুলে আয় রোজগার করতে পারবে-এমন বৈধতা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে বাস্তবে শিক্ষক সমাজকে ছাত্রদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে শিক্ষা প্রদানের এই ব্যবস্থা ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে নিছক ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে পরিণত করেছে। আচার্য প্রফুল্ল রায় বলেছিলেন, “অর্থকে পরমার্থ জ্ঞানে যারা বিদ্যা-বুদ্ধি বিক্রয় করছেন, তাদের শিক্ষক বলা যায় কি? ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কি ক্রেতা-বিক্রেতার”?

সার্বিক অর্থে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংকটগ্রস্ত। শিক্ষকদের অবস্থাও ভালো নয়। কিন্তু তাই বলে কি যেনতেন উপায়ে একজন শিক্ষক আয় রোজগার করতে পারেন? শিক্ষকতা মহান পেশা। এ পেশাকে গৌরবোজ্জল করেছেন স্যার আশুতোষ মুখার্জি, বিজ্ঞানী সত্যেন বোস, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা, ড. আখলাকুর রহমান প্রমুখ। তাঁরা তাঁদের সময়ে এই পেশাকে সামাজিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে দেখেছেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতা হয়ত তাঁদেরও ছিল কিন্তু তাকে তাঁরা বড় করে দেখেননি, মাথা উঁচু রাখার শিক্ষাই দিয়েছেন। আজ যে আর্থিক সঙ্গতির জন্য শিক্ষকেরা নাইটকোর্স খুলতে চান, সেই সঙ্গতির অভাবে এদেশের অর্ধেকের বেশি শিশু প্রাথমিক শিক্ষাই শেষ করতে পারে না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে না পেরে ঝরে যায় অনেকে। যে দেশের চারভাগের একভাগ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে ধুঁকে ধুঁকে প্রতিদিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে, সেই রাষ্ট্রে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন কি করে? অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কুসংস্কার-তীব্র দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এদেশের লক্ষ- কোটি মানুষের প্রতি শিক্ষক সমাজের দায়ও কি কম? এ তো কেবল চাকরি মাত্র নয়, মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার সবচেয়ে শাণিত হাতিয়ার।

অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন আমরা কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলছি। কিন্তু এ আমাদের বলবার উদ্দেশ্য এটা নয়। আমরা যেমন সারাদেশের সার্বিক সংকট-দুর্বলতার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ও শিক্ষকসমাজের সংকটকে মূল্যায়ন করি তেমনি সরকারের কাছে দাবি করি এই খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রদানের। শিক্ষকবৃন্দ যেন সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা এবং বেতন কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হয়- এ দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।  কিন্তু তার ব্যবস্থা তো রাষ্ট্রকেই করতে হবে। সেজন্য শিক্ষকবৃন্দকে যেমন রাষ্ট্রের কাছে এই দাবি জোরের সাথে তুলতে হবে তেমনি ছাত্রসমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।

ষষ্ঠমত, অনেকে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে সান্ধ্যকোর্সের পক্ষে যুক্তি করেন। স্থান, কাল, প্রেক্ষিত বিবেচনা না করে এ ধরনের কথা কতটুকু সমীচীন? ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে, উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলো কি প্রক্রিয়ায় উন্নত হয়েছে এবং তাতে তাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কতটুকু অবদান। এসমস্ত দেশগুলো তাদের উন্মেষের কালে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। যদিও আজ পরিস্থিতি তেমনটি নেই। বুর্জোয়া ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণেই সকলকে উচ্চশিক্ষিত করা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। একইসঙ্গে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষাসহ পরিষেবাখাত মুনাফাবৃত্তির অন্যতম প্রধান খাতরূপে বিবেচিত হচ্ছে। সংকোচনের প্রয়োজনীয়তা  দেখা দিয়েছে। তাই বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে আজ সারা বিশ্বে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

শিক্ষা আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নিজের দেশেই নয়, বিভিন্ন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠান খুলে তাদের branding value বিক্রি করে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক উচ্চহারে বেতন-ফি দিয়ে পড়াশুনা করতে হয়। তারা যদি বাণিজ্যিকভাবে কোর্স পরিচালনা করে তবে তার সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা হবে কেন? বরং ইউরোপ, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের তুলনা হতে পারে এবং তা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা আর কতদিন মন্দের সাথে মন্দের তুলনা করে যাব?

শিক্ষকদের দু’পয়সা বাড়তি রোজগারের প্রচেষ্টার মধ্যেই নাইটকোর্সের বিষয়টি সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষা সম্পর্কে শাসকশ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা জানি জ্ঞান যেহেতু সামাজিক সম্পদ সেহেতু জ্ঞান লাভের অধিকারও সকলের। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারও সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সমাজ ধনী ও গরীব অর্থাৎ মালিক ও শ্রমিক – এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এক্ষেত্রেও বৈষম্য বিরাজমান। মালিকদের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রে শিক্ষাও সকলের জন্য নয় বিশেষত উচ্চশিক্ষা। অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতার স্তরে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মানুষকে শিক্ষিত করা প্রয়োজন ছিল তখনই শিক্ষা গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু আজ একচেটিয়া পুঁজির যুগে, পুঁজির স্বার্থে, অতীতে বহু লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোও ব্যবসায়ীদের মুনাফার শিকারে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাকেও তারা পণ্যে রূপান্তরিত করেছে। উচ্চশিক্ষাকে উচ্চ আয়ের সোপান হিসেবে ব্যবহারের নীতি গ্রহণ  করেছে। স্বভাবতই পুঁজিপতিদের স্বার্থে পরিচালিত বুর্জোয়া সরকারও এই দায়িত্ব অস্বীকার করবে। বাস্তবে করছেও তাই। বাজার অর্থনীতির সংকট সামাল দিতে বিশ্বপুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার শিরোমণি দেশগুলো মুক্তবাজার অর্থনীতির তত্ত্ব হাজির করেছে। যার মোদ্দা কথা হলো সমস্ত কিছুই বাজারের হাতে অর্থাৎ পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দাও। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কোন কিছুর উপর। শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের দেশের শাসকশ্রেণীরও একই দৃষ্টিভঙ্গি। এই বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে শিক্ষা ব্যবসা মহামারী আকার ধারণ করেছে। এদেশে এখন ৩১৭টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার প্রাইভেট স্কুল। মার্কেট রেস্টুরেন্টের ছাদের উপর চলছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার হিড়িক! যেখানে ১৯৯২ সালের আগ পর্যন্ত দেশে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না সেখানে এখন এ সংখ্যা ৭৮টি। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ৩৪টি।  লক্ষ লক্ষ টাকা না হলে প্রাইভেটে পড়া সম্ভব নয়। এই সামর্থ আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়তেও নানাভাবে বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নামে-বেনামে ফি, বাণিজ্যিক নানা কোর্স চালু করার পাশাপাশি বেসরকারি পুঁজি খাটানোর জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে নিয়েও ব্যবসা করার আয়োজন চলছে।

শিক্ষার সাথে ব্যবসার সম্পর্ক সবসময়ই বিরোধাত্মক। কেননা শিক্ষার অধিকার সার্বজনীন আর ব্যবসায়িক পণ্য প্রাপ্তি ক্রয়ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। যখনই শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা আঁটা হয়, তখনই তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। তাই যতই সুন্দরভাবে, অনেক কথার মালা সাজিয়ে এ দুটোর মধ্যে গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হোক না কেন তার শেষ মানে এটাই শিক্ষা সকলের জন্য নয়, যাদের টাকা আছে তাদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে। কমিশন গড়েই উঠেছিলো এই কারণে যে, এ  কমিশন স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অর্থের চাহিদা নির্ধারণ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সরকারের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। কিন্তু ‘রক্ষকই এখন ভক্ষকে’র মতো আচরণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে নয়, সরকারের হয়ে ভূমিকা পালন করছে। শাসকশ্রেণীর শিক্ষার বাণিজ্যিক নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রণয়ন করেছে ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র। এতে বলা হয়েছে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্রমাগত সরকারি বরাদ্দ কমাতে হবে, ব্যয় নির্বাহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াবে। সুপারিশ করা হয়েছে : “১. সরকার আগামী ২০ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দের অংশ ৯০%  থেকে ৭০% এ হ্রাস করতে পারে। ২. অর্থায়নের শূন্যতা হ্রাস করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব অর্থের উৎস তৈরি করা উচিত। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে টিউশন ও ছাত্র ঋণের নতুন প্রকল্প প্রবর্তন করতে হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থের উৎস তৈরি করা মানে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করা। কিভাবে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে কৌশলপত্রে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির কয়েকটি খাতের মধ্যে রয়েছে – ছাত্র বেতন বৃদ্ধি, আবাসন, ডাইনিং চার্জ বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ভাড়া দেয়া, ক্যাফেটেরিয়া ভাড়া, দোকান ভাড়া, কনসালটেন্সি সার্ভিস, বিশ্ববিদ্যালয়ের বীমা ইত্যাদি”। এ ছাড়াও সান্ধ্যকালীন কোর্র্সের মাধ্যমেও অর্থ আয়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে বাজেটে প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি এবং সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে লাগাতার ফি বৃদ্ধিসহ নাইটকোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স চালুর পাঁয়তারা করছে।

অতীতের বিভিন্ন মনীষী যাঁরা জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন তাঁদের শিক্ষা ভাবনায় আমরা পাই শিক্ষাকে তাঁরা সত্য-সুন্দরকে জানা এবং দেহে-মনে বিকশিত ও সৃজনশীল-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। বহু মানুষের সংগ্রামে অর্জিত এ শিক্ষাকে কোনভাবেই তাই মুষ্ঠিমেয় পুঁজিপতিদের মুনাফার স্বার্থে পরিচালিত হতে দেয়া যায় না। আজ যখন বাণিজ্যিকীকরণের করাল গ্রাসে শিক্ষা, মানবিকতা, মূল্যবোধ বিপর্যস্ত তখন সমাজের ডাকে আমাদের প্রত্যেককে সাড়া দিতে হবে। দেশের প্রত্যেকটি বিবেকবান, দায়িত্বশীল শিক্ষার্থীকে পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা।

 অনুশীলন : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মুখপত্র

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments