সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সমাবেশে সভাপতি তাজনাহার রিপন বলেন, “ সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজে ভর্তুকি কমিয়ে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ালে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়বে অসংখ্য নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও গরীব পরিবারের সন্তানেরা। মেয়রের এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অমানবিক, অযৌক্তিক ও জনস্বার্থবিরোধী।”
২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজে ভর্তুকি কমিয়ে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি পেশের পূর্বে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে তাজনাহার রিপন এ কথা বলেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক আরিফ মঈন উদ্দিন ও সভাপতিত্ব করেন নগর সভাপতি তাজ নাহার রিপন। আরো বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস, নগর সহ সভাপতি মুক্তা ভট্টাচার্য, অর্থ সম্পাদক দীপা মজুমদার, সদস্য মো: সায়েম, জয়তু সুশীল, রাম প্রসাদ দে, প্রণব দে, আয়েন উদ্দিন এবং ভুক্তভোগী অভিভাবকবৃন্দ ।
বক্তারা বলেন, “শিক্ষা মানুষের সংগ্রামের ফল। তাই শিক্ষা সবারই প্রাপ্য অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষা মুষ্টিমেয় মানুষের অধিকারে পরিণত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের সাধারণ গরীব মানুষের শিক্ষা আবারো হুমকির মুখে পড়বে।”
ছাত্রনেতারা আরো বলেন, “শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ ক্রমাগত কমছে। শিক্ষাব্যবস্থার ৮০% ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। যার কারণে এদেশের সাধারণ নিম্ন- মধ্যবিত্তের বিশাল জনগোষ্ঠী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চসিক দীঘদিন শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষা ব্যয় কম হওয়ায় সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের কাছে প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি চসিক মেয়র ঘোষনা দিয়েছেন চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভতুকি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে চসিকের ৫ম সাধারন সভায় ফি নির্ধারিত হয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন। এ অনুযায়ী ভর্তি ফি হবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত ২৫৫০ টাকা, ৯ম- ১০ম শ্রেণি ২৭৪০টাকা। মাসিক বেতন হবে ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১৫০ টাকা, ৭ম-৮ম শ্রেণি ১৬০ টাকা, ৯ম-১০ম শ্রেণি ২০০ টাকা। কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি ফি ও বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে।
প্রতিবছর চসিক শিক্ষাখাতে যে ভর্তুকি দেয় তা নামমাত্র। এ বছর চসিক ১৬৩২ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। নগরবাসীর ট্যাক্স ও সরকারের উন্নয়ন অনুদান থেকেই এ অর্থ আদায় হয়। আমরা দেখি সিটি কর্পোরেশন ৬১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টাইগারপাসে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। পতেঙ্গা সী-বীচে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ব্যয় করবে ৩০০ কোটি টাকা। প্রশ্ন হলো দেশের উন্নয়নে কোনটি বেশি প্রয়োজন? শিক্ষা নাকি পাচঁ তারকা হোটেল আর বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র। সিটি কর্পোরেশন আইনে আছে শিক্ষার দায়িত্ব পালনে সিটি কর্পোরেশন অবশ্যই দায়ী থাকবে। নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতিতেও মেয়র বলেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা বিস্তারে ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ রেখে শিক্ষার প্রসার ও শিক্ষা উন্নয়নে অতীতের ভূমিকা বলবৎ রাখতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আজ তার দেয়া প্রতিশ্রুতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আমরা জানি একটি সুদক্ষ মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরীর জন্য একমাত্র হাতিয়ার হলো শিক্ষা। চসিকের অধীনে মোট ৪৬টি মাধ্যমিক স্কুল, ১৮টি কলেজ ও ছয়টি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার সহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৯০হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। এই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দক্ষ মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরী যেমন সম্ভব নয়. তেমনি জনগণের উন্নয়নও কখনো হবে না।”
বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে চট্টগ্রামের সাধারন মানুষ সহ সমাজ সচেতন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে এ আন্দোলন বেগমান করে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।
আন্দোলনের দাবির প্রতি চট্টগ্রামের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও নাগরিকবৃন্দ সমর্থন ও সংহতি জ্ঞাপন করেন।
সমাবেশ শেষে মিছিল সহযোগে মেয়র বরাবর স্মারক লিপি পেশ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র জোবাইদা নার্গিস স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে গত ৬ ডিসেম্বর মিছিল সমাবেশ, ১৭ ডিসেম্বর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।