বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট অফিসে পুলিশের সহযোগিতায় বাসদ (খালেকুজ্জামান) এর বহিরাগত নেতাকর্মীদের হামলা, ছাত্র ফ্রন্টের ৩০ সদস্য আহত
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়ে অবস্থিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের অফিসে গতকাল দুপুর দু’টায় বাসদ (খালেকুজ্জামান) এর ১০/১৫ জন নেতাকর্মী অতর্কিতে হামলা করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাক্তণ নেতা কিশোর আহমেদ। কৃষি বিশ্বদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ছিলো সৌরভ দাস (কৃষি অর্থনীতি লেভেল ৪ সেমিস্টার ১), প্রবাল রায় (মৎস্যবিজ্ঞান লেভেল ৩ সেমিস্টার ১), সুজন (কৃষি প্রকৌশল লেভেল ৩ সেমিস্টার ১), ইব্রাহিম খলিল (পশুপালন লেভেল ৩ সেমিস্টার ১), ইশরাত জাহান শাপলা (পশুপালন লেভেল ৪ সেমিস্টার ১), কৃষ্ণা রায় (ভেটেরিনারি লেভেল ৪ সেমিস্টার ১), আশিকুর রহমান পুলক, রাকিব আহমেদ ও সিফাত হোসাইন জয়া। বাকিদের প্রায় সকলেই ছিলো বহিরাগত। ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাফিকুজ্জামান ফরিদ ও দুই তিন জন কর্মী তখন অফিসে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর করে অফিসে থেকে বাইরে বের করে দেয় ও অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্য নেতাকর্মীরা সেখানে যান, তাদের উদ্ধার করেন ও অফিসে প্রবেশ করেন। এরপরও দফায় দফায় হামলা করার চেষ্টা হয়। আজ সকালে আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে গতকালের হামলায় জড়িত থাকা তিনজন বহিরাহগতকে অফিস এলাকা থেকে আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আজ বিকেলে বাসদ (খালেকুজ্জামান) এর গাজীপুর জেলা সমন্বয়ক রাহাত আহমেদের নেতৃত্বে গাজীপুর, বরিশাল, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ জেলার কর্মীদের ৩০/৩৫ জনের একটি দল আবার হামলা করে। আমাদের সংগঠন তা প্রতিহত করে এবং অফিসে অবস্থান নেয়। রাহাত আহমেদের নেতৃত্বে আক্রমণকারীরাও বাইরে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। তাদের আক্রমণে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম কর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরি, সহ সভাপতি জুনায়েদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রেমানন্দসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়। এর কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এসে অফিসে ঢুকে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে সংগঠনের সভাপতি রাফিকুজ্জামান ফরিদ, সাবেক সভাপতি আশরাফ মিল্টন, দপ্তর সম্পাদক মাগফুরা জেরিনসহ অনেকে আহত হয়। বর্তমানে আমাদের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত। দশজনের অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে বিপ্লবের চোখের আঘাত খুবই মারত্মক, গৌতমের মাথার আঘাত আশংকাজনক। চার জন অপারেশন থিয়েটারে আছে, তাদের সর্বশেষ অবস্থা আমরা এখনও জানতে পারিনি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আমাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা আঘাত পেয়েছে বলে নয়, এটি বামধারার ছাত্র রাজনীতির উপর আঘাত। আজ চূড়ান্ত রাজনীতিবিমূখ সময়ে আমরা অল্প কিছু বাম ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়াই করছি। বিরাট সংখ্যার ছাত্ররা আমাদের সাথে যুক্ত নয় ঠিক, কিন্তু ছাত্ররা আমাদের দাবিদাওয়াকে ঠিক মনে করে, আমাদের নিষ্ঠাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এই ঘটনা তাদের অনেককেই হতাশ করবে। যারা জবরদখল করে তাৎক্ষণিক পাওয়ার রাজনীতি করতে চায় তাদের কাছে এটা ব্যাপার নাও হতে পারে, কিন্তু যারা এ পথে আরও বহুদূর হাঁটতে চায়- তাদের জন্য পথটা একটু কঠিন হলো।
২০১৩ সালে মতাদর্শগত কারণে বাসদ বিভক্ত হয়। বাসদ ও বাসদ (মার্কসবাদী) নামে দুটি দল তাদের নিজস্ব কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নামেও দুটি সংগঠন সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাম ছাত্রসংগঠনসমূহের জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোটেও দুটি সংগঠনই ক্রিয়াশীল। চার বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় চলছে। এর মধ্যে কোথাও আমাদের সংগঠন তাদের কোন কর্মকান্ডে বাঁধা সৃষ্টি করেনি।
কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসের দখল নেয়ার জন্য বহিরাগতদের ডেকে এনে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবিব রুমনের তত্ত্বাবধানে, পার্টির দু’তিন জেলার সমন্বয়কসহ প্রাক্তন সংগঠকদের সক্রিয় উপস্থিতিতে, সামনে দাঁড়িয়ে নির্দেশনা দিয়ে যেভাবে অফিসে ঢুকে আমাদের উপর হামলা করা হলো, তাতে আমরা স্তম্ভিত। আমরা জানতাম, আমাদের পথ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামে যেহেতু একত্রে আছি সেহেতু সঠিকতার পরীক্ষা সেখানেই হবে। তবে আমরা অবাক হইনি একারণে যে, আমরা এও জানতাম যদি আদর্শের উপলব্ধি ভুল হয়, তবে সংস্কৃতি উঁচু তারে বাঁধা থাকবে- এ হতে পারেনা। কিন্তু এতটা পতন এত তাড়াতাড়ি হবে- তা আমরা আশা করিনি।
সমস্ত বিষয় মূহুর্তে মূহুর্তে আমরা প্রশাসনকে অবগত করেছি। বাম ছাত্র সংগঠনসমূহের জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোটকেও তা অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের অবাক করেছে। একই সাথে বাসদ (খালেকুজ্জামান) এর নেতাকর্মীদের পুলিশের সাথে পূর্বেই যোগসাজশের সন্দেহ আমরা না করে পারছিনা এই কারণে যে, আমরাই আক্রান্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হলাম; আবার আমাদেরকেই পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়া হলো। তিনজন নেতাকর্মীকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হলনা।
আমরা অবিলম্বে আমাদের অফিসের তালা খুলে দেয়া ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।”
এই ঘটনার প্রতিবাদে:
আগামীকাল কেন্দ্রীয়ভাবে বিকাল ৪ টায় টিএসসিতে সমাবেশ, দেশব্যাপী বিক্ষোভ পালিত হবে।