গোটা বিশ্বে পুঁজিবাদ আজ মৃত্যুমুখে পতিত। অর্থনীতি, রাজনীতি কোন ক্ষেত্রেই সে আর কোন সমাধান দিতে পারছে না। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। বুর্জোয়া দুই দলীয় শোষণের ব্যবস্থাটাকেও তারা আজ প্রতিষ্ঠিত করতে করতে পারছে না। বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে। আমাদের দেশের দিকে তাকান। নির্বাচনের মাধ্যমে দলের পরিবর্তন হয়। এক দলের পরিবর্তে অন্য দল ক্ষমতায় যায়, কিন্তু মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। সেই নির্বাচনও নিয়েও কত সংকট, কত আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ছয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেল। যে দল ক্ষমতায় যাচ্ছে সেই দলই পুরো দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিচ্ছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ব্যাংক লুটপাট হয়ে গেল এই সময়ে। অথচ কোন প্রতিবাদ হচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই তার উপর নিপীড়ন, দুঃশাসন নামিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ১০ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণে মানুষ চূড়ান্ত বিক্ষুব্ধ। মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। একথা আওয়ামী লীগ জানে। তাই সে নির্বাচন নিয়েও সংকট সৃষ্টি করে চলেছে।কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে দেয়া তাঁর বক্তব্য এ কথাগুলি বলেন।
গত ৭ নভেম্বর ছিল মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০১তম বার্ষিকী ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে উপলক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য ও ঢাকা নগর শাখার ইনচার্জ কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক ও পরিচালনা করেন ঢাকা নগর শাখার সদস্য সীমা দত্ত। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী ও কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল। সমাবেশের আগে গণসংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ছাত্র, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষেরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “মহান রুশ বিপ্লব ও পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এই সভায় মিলিত হয়েছি। ১০১ বছর আগে রাশিয়ার মাটিতে কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশের জন্ম হয়েছিল। শ্রমিক-কৃষকের সেই রাষ্ট্র দেখিয়ে দিয়েছিল সভ্যতা কতটা সৃষ্টিশীল হতে পারে, জীবন কেমন সুন্দর হতে পারে। সেই সমাজতান্ত্রিক দেশ আর নেই। মার্কসবাদের পথ সঠিকভাবে অনুসরণ না করায় সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার একসময়ে পতন ঘটলো। কিন্তু সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেনি। সংকটজর্জরিত পুঁজিবাদী-সা¤্রাজ্যবাদী পৃথিবীর বুকে ‘সমাজতন্ত্র’ আজ নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে।
কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় মানুষ তাদের অধিকার পাচ্ছে না। পুঁজিপতিরা তাদের মুনাফার স্বার্থে বুর্জোয়াদেরকে দেশের শাসনক্ষমতায় আনতে চায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অগণতান্ত্রিকভাবে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ সরকার যে ফ্যাসিবাদী শাসন দেশে কায়েম করেছে, তা থেকে জনগণ মুক্তি চায়। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যতটুকু প্রকাশ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পেত, তাও এখন তারা বন্ধ করতে চাচ্ছে। ফলে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন দিতে তারা ভয় পাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে দেশে বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের শক্তিই পারে ফ্যাসিবাদী সরকারের উচ্ছেদ সাধন করতে এবং আরো উন্নত আদর্শের দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাতে।”
আওয়ামী দুঃশাসন রুখে দাঁড়ানো এবং ধনিকশ্রেণির দ্বি-দলীয় অপরাজনীতির বিপরীতে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে শুরু হওয়া এই সমাবেশে নেতৃবৃন্দ দেশের জনজীবনের চলমান সংকট থেকে উত্তরণে ১১ দফার ভিত্তিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।