Tuesday, April 23, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ

ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতেই উচ্চশিক্ষা কমিশন

133614_shutterstock_49900726

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি ‘বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষা কমিশন আইন-২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দলিল।

রিপোর্টে এসেছে, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষা কমিশনের কোনো সুপারিশ যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে প্রতিপালন না করে, তাহলে কমিশন প্রয়োজনে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন কোর্স বা প্রোগ্রামের অনুমোদন বাতিল বা স্থগিত করাসহ শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে পারবে।এ ছাড়াও কমিশন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমনকি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত মঞ্জুরি স্থগিত করাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পারবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে যত পদক্ষেপই নিচ্ছে তার সবই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংস করার আয়োজনেরই অংশ। কারণ শাসকগোষ্ঠীর ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দলীয় উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, বিরোধীদের কোণঠাসা করা, সরকারি ছাত্রসংগঠনের হল ও ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র দাপট – এসবকিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও প্রতিবাদের স্থান, জাতির বিবেকের জাগরণ প্রথম এখান থেকেই শুরু হয়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী চায় এমন বিশ্ববিদ্যালয় যেটা অর্থনীতিকে চালু রাখার মতো দক্ষ মানুষের যোগান দেবে, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে না। ফলে শিক্ষাটা দেওয়া হবে, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও প্রয়োজন মাফিক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩’ এর মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেয়া হয়। এই অধ্যাদেশে অনেক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার পর এটিই ছিল তুলনামূলক অর্থে প্রগতিশীল। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে এই স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে আরও বেশি সংকুচিত করা হয়েছে। বস্তুত এখন নিজেদের পরিকল্পনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য গঠিত হচ্ছে উচ্চশিক্ষা কমিশন। পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, এই কমিশন উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়ংকর বিপদ ঢেকে আনবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, সিলেবাস নির্ধারণসহ সমস্ত ধরনের কার্যক্রমে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে শিক্ষক-ছাত্র সকলের গণতান্ত্রিক মতামতের কন্ঠরোধ করবে এই উচ্চশিক্ষা কমিশন। এই সামগ্রিক পরিস্থিতির মধ্যে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চরিত্রটুকু আর থাকতে দেবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় অথর্ব, অযোগ্য, মূল্যবোধহীন, সরকারের তল্পিবাহক একদল যন্ত্র সৃষ্টির কারখানায় পরিণত হবে। আর অতীতেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ফি নেয়া, পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ না করা,ভিসি- প্রো-ভিসি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত করা সত্ত্বেও ইউজিসি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ভবিষ্যতেও এই উচ্চশিক্ষা কমিশন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। ফলে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন কার্যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়ার শামিল।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ধ্বংসকারী ‘বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষা কমিশন আইন-২০১৮’ বাতিলের জোর দাবি জানান ও বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে এদেশের সচেতন শিক্ষক, বুদ্ধিজবী, ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments