Sunday, April 28, 2024
Homeফিচারগণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও দমন-পীড়ন বন্ধ কর

গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও দমন-পীড়ন বন্ধ কর

নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক সংকট প্রশ্নে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা

স্বৈরতান্ত্রিক একতরফা নির্বাচন জনগণ মানে না

10896953_840407379315809_2130490818264626103_n

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে ৫ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় ২৩/২ তোপখানা রোডের নীচতলায় বাম মোর্চার অস্থায়ী কার্যালয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ও বর্তমান সঙ্কট প্রশ্নে মোর্চার অবস্থান ও কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সভা-সমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ৮ জানুয়ারি ঢাকায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা বিক্ষোভ করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা এড. আব্দুস সালাম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এক ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সে সময় একে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বললেও এখন তারা এর ভেতরেই ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধতা খুঁজছে। আর ইতোমধ্যেই সরকার তার শাসনের ১ বছরে লুণ্ঠন-পাচার, গুম-খুন-নির্যাতন, দুর্নীতি, বিরোধী মতের কর্মকাণ্ড দমন, বিদেশি শক্তির কাছে দেশের সম্পদ তুলে দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে একদলীয় ক্ষমতার নখ-দাঁত প্রকাশ করে দিয়েছে। এখন এই ধরনের ক্ষমতাকেই স্থায়ী করার স্বপ্নে বিভোর তারা। সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক কবর রচনা করাকেই তারা ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ দিবস হিসাবে পালনে মরিয়া। ৫ জানুয়ারি সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে জনজীবনের চলাচলে এক মহা দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণের সভা-সমাবেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করে একটা স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার অধীনে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার নিপীড়ক চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে। কোনো বিরোধী পক্ষকে কোথাও নামতেই দেয়া হচ্ছে না। সরকার তার কর্মকাণ্ডের বৈধতা পাওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গীবাদ দমনের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও উন্নয়নের বিপরীত হিসাবে দাঁড় করিয়ে দীর্ঘমেয়াদী একদলীয় শাসনের মতাদর্শিক বৈধতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষিত হলেও একদিকে রায় বাস্তবায়ন ও জামাত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখছে, অন্যদিকে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের সমস্ত পথ বন্ধ করে, সহিংসতা উস্কে দিয়ে কার্যত এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যাতে জঙ্গীবাদ উত্থানেরই নতুন করে পথ তৈরি হচ্ছে। বর্তমান মহাজোট সরকার স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার অধীনে একটা লুন্ঠনমূলক আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু রেখেছে এবং তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্রমাগত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই একচেটিয়া ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে রাজনৈতিক বৈরিতাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে তারা এখন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন দূরে থাক, সমাবেশের মত নিরীহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকেও অসম্ভব করে তুলেছে। রাজনীতিকে তারা এক আদিম পেশিশক্তির খেলায় পরিণত করেছে আর তাতে সরকারি দলকে অন্যায্য সুবিধা দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে দলীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করছে।

বিগত দিনগুলোতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের এই দলীয় ফ্যাসিস্ট চেহারা বদলে, এর গণতান্ত্রিকীকরণে শাসকদের বিরোধী পক্ষ বিএনপি জোটও শুধু অনুৎসাহীই কেবল নয়, সমর্থও নয়। বরং যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে তাকে একই ধরনের ক্ষমতার হাতিয়ার বানাতেই তারা আগ্রহী। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড এবং বর্তমানেও তাদের কর্মসূচির ভেতরে তা স্পষ্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতেই গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা নির্বাচনের আগে থেকেই বলে আসছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শর্ত হচ্ছে এখানকার লুণ্ঠনমূলক আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বদল। আর নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট সমাধান করতে হলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন নির্বাচনী ব্যবস্থা। বাংলাদেশ আজ যে অবস্থায় নিপতিত হয়েছে তাতে জনজাগরণ ও জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার আর কোনো বিকল্প নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক তৎপরতা ও দমন-পীড়ন বন্ধ করে অবিলম্বে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানান। অন্যথায় দেশে এক নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির দায় পুরোপুরি সরকারকেই বহন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলন থেকে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়নের প্রতিবাদে ৮ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বাম মোর্চা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি প্রদান করা হয়।

সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বাম মোর্চার বিক্ষোভ

সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়ন বন্ধ এবং নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে ৮ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশারেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক, বাসদ (মাহবুব)-এর কেন্দ্রীয় নেতা মহিনউদ্দীন চৌধুরী লিটন।

সমাবেশে বক্তারা ঢাকা মহানগরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এই ঘোষণা সরকারের চরম স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ও সংবিধান স্বীকৃত জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী। নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে সরকার জুলুম-নিপীড়নের যে পথ বেছে নিয়েছে তা সংঘাত সংঘর্ষের পথই কেবল প্রস্তুত করছে না, এভাবে প্রতিবাদের পথ বন্ধ করে সরকার জঙ্গীবাদেরই ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। সরকারি দলের উত্তরোত্তর পেশীশক্তি ব্যবহার করে রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা সরকারের নগ্ন ফ্যাসিবাদী চেহারাকেই তুলে ধরছে। মোর্চার নেতৃবৃন্দ সরকারকে সতর্ক করে বলেন, এইসব ঘটনার দায়দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলকেই বহন করতে হবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার নিজেই জনজীবন নিশ্চল করে দিয়ে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, বিরোধীদল তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকটের তৈরী হয়েছে, রাজনৈতিকভাবেই তা নিরসন করতে হবে।

সিলেট : সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়ন বন্ধ এবং নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজা ম্যানশনস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিটি পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়। এড. হুমায়ূন রশীদ সোয়েবের সভাপতিত্বে এবং সুশান্ত সিন্হা সুমনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রুবাইয়াৎ আহমেদ, অপু দাস প্রমুখ।

সাম্যবাদ জানুয়ারি ২০১৫

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments