Friday, April 26, 2024
Homeফিচারবন্ধ ঘোষিত চিনিকল চালু এবং চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় ...

বন্ধ ঘোষিত চিনিকল চালু এবং চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় ‘জাতীয় কনভেনশন ২০২১’ অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে ২৭ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী রংপুর কমিউনিটি সেন্টারে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ, আখচাষিদের ক্ষতিপূরণ, করোনা মহামারিকালে কৃষকদের ঋণ মওকুফ, বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শ্রমিকদের সারাবছর কাজ নিশ্চিতকরণ, সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণ প্রদান, প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জাম প্রদান ইত্যাদি দাবিতে জাতীয় কনভেনশন ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়।

কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি ও চিনিকল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। কনভেনশনের শুরুতে দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে সুসজ্জিত মানুষের একটি মিছিল রংপুর প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা  প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে আলোচনা পর্ব শুরু হয়।

কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক মোশাহিদা সুলতানা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন দুলাল, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহসানুল হাবীব সাঈদ, আনোয়ার হোসেন বাবলু, আহসানুল আরেফিন তিতু, বাংলাদেশ আখচাষি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনছার আলী দুলাল, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নীলুফার ইয়াসমীন শিল্পী, চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের প্রতিনিধি মো. দুলাল, বাবুল, মো. আতাউর রহমান, মো. বুলু আমিন, রমজান আলী, মো. শাহীদুর রহমান, মো. আব্দুর সাদেক জিহাদী প্রমুখ।

কনভেনশনে বক্তারা বলেন, সরকার এই করোনা মহামারি কালেও দেশে নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার বদলে রাষ্ট্রীয় শিল্প ধ্বংসের এক উন্মত্ত খেলায় মেতে উঠেছে। দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ করেছে সরকার। বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে – দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে সরকার লোকসান গুনছে। কিন্তু লোকসানের প্রকৃত কারণ কী, লোকসানের জন্য কারা দায়ী – এই বিষয়গুলো সরকার বরাবরের মতো জনগণকে জানতে দেয় না। একটু খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়, লোকসানের পেছনের দায় করপোরেশনের কর্তাদের দুর্নীতি-লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু চিনি নীতির অভাব। এর আগে সরকার বন্ধ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল। এর মধ্য দিয়ে বেকার হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাট চাষ, বিপণন ও ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। চিনিকলগুলোতে সরাসরি কর্মসংস্থান রয়েছে ১৬ হাজার লোকের। আর বন্ধ হওয়া ৬টি কলে কর্মরত আছেন ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। আখচাষে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত আছেন ৫ লাখ কৃষক। সব মিলিয়ে এ খাতে ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। বহু চিনিকলে ৩-৪ মাসের মজুরি ও বেতন বকেয়া পড়েছে। পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা প্রায়ই রাস্তায় নামছেন, আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন। করোনাকালে বহু মানুষ বেকার কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছে। এই সময় দরকার ছিল সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে সরকারিভাবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তা না করে উল্টো চিনিকলগুলোকে বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথে বসানো হচ্ছে।

অথচ কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে চিনি আনার বিপরীতে এই মানুষেরাই কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ বাঁচাচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের প্রণোদনা দেবার কথা তো ভাবেনিই, বরং তাদের ন্যায্য হিসাবের পাওনা বেতনও ঠিক সময়ে দিচ্ছে না।

কনভেনশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমাসহ শিল্পীবৃন্দ।

কনভেনশন থেকে নিম্নোক্ত দাবি উত্থাপন ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়:

১। এই কনভেনশন অবিলম্বে ৬টি চিনিকল বন্ধের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। কনভেনশন অবিলম্বে চিনিকল শ্রমিকদের সকল বকেয়া মজুরি প্রদান, আখচাষীদের আখের বকেয়া মূল্য পরিশোধ, চিনিকল আধুনিকায়ন করে সারাবছর শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার এবং আখচাষীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও চাষের উপকরণ প্রদানের নিশ্চয়তা দাবি করছে।

২) সরকার রাষ্ট্রীয় কল-কারখানা বন্ধ করার কারণ হিসেবে অব্যাহত লোকসানের কথা প্রচার করে, কনভেনশন লোকসানের কারণ, পরিমাণ জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করছে। লোকসানের দায় শ্রমিক ও আখচাষিদের দিলেও দুর্নীতি-লুটপাটের হিসাব প্রচার মাধ্যমে আসলেও এর জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা দোষীদের শাস্তি দেয়া হয়নি। কনভেনশন দুর্নীতি-লুটপাটের সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছে।

৩) চিনিকল রক্ষার আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে চিনিকল শ্রমিক, আখচাষি-শ্রমিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে এই কনভেনশন।

ঘোষিত কর্মসূচিসমূহ:

ক) চিনিকল ও আখচাষি এলাকায় গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিতরণ, মতবিনিময়, সমাবেশ, পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে।

খ) ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রমিক, ছাত্র, যুব, নারী, পেশাজীবী সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আগামী মে মাসে “চিনিকলসহ সকল রাষ্ট্রীয় কল-কারখানা রক্ষায় করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হবে।

গ) চিনিকল সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রমিক, আখচাষি, ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হবে।

ঘ) চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে গাইবান্ধা জেলা শহরে চার জন করে প্রতিনিধি, দুই জন আখচাষি ও দুই জন চিনিকল শ্রমিকের অংশগ্রহণে এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ঙ) ১৫টি চিনিকলের শ্রমিক ও আখচাষিদের যুক্ত করে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

(উৎস: সাম্যবাদ, এপ্রিল-মে ২০২১)

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments