Monday, April 29, 2024
Homeসাম্যবাদবুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর সন্ত্রাসের দায় ছাত্রসমাজের নয়

বুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর সন্ত্রাসের দায় ছাত্রসমাজের নয়

উপাচার্য পরিষদের সভায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নীতিহীন সুপারিশ

[dropcap]গ[/dropcap]ত ৬ এপ্রিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিষদের বৈঠকে উপাচার্যবৃন্দ ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করেছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ, বিশেষত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এই সুপারিশ করেছেন। তাঁদের এই উদ্বেগ ছাত্রসমাজ ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষকেই আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গণতান্ত্রিক মহলের উদ্বেগ এই জন্যে যে, ছাত্ররাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে এক করে দেখিয়ে বিভ্রান্তির ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী-দখলদারিত্ব, হলের গেস্ট রুমে টর্চার সেলে ছাত্রদের নির্যাতন তো তাদের নৈমিত্তিক কাজে পরিণত হয়েছে। যে উপাচার্যবৃন্দ আজ ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করছেন, তাঁদের নাকের ডগায়ই তো প্রতিদিন এ রকম ভয়াবহ নির্যাতন চলছে। এর বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি? নেন নি। বরং তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এ অপশক্তি বেড়ে উঠেছে। স্বাধীন মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে। এদের স্বার্থের সংঘাতে কত প্রাণ অকালে ঝরেছে তার ইয়ত্তা নেই। বুর্জোয়া রাজনীতি কত নৃশংস আর নির্মম হতে পারে, তার সর্বশেষ নজির নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বন্ধুকে খুন। এই হত্যা-খুনকে কোনও মানুষ কি রাজনীতি বলবেন, নাকি সন্ত্রাস?
হত্যা-খুন-সন্ত্রাসের কারণ উদ্ঘাটন না করে টোটকা চিকিৎসা হিসাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সুপারিশ কতটা সমীচীন? ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাই যদি সমাধান হতো তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকা অবস্থায়ই ছাত্রলীগ নেতা রুস্তমের হত্যাকাণ্ড ঘটল কীভাবে? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনীতি নিষিদ্ধ। সেখানে কেন দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে? এ দেশে সাধারণ আইন আছে, আইনের ধারাতেই সন্ত্রাসী-অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। তা না করে বুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনের অপকর্মের দায়ভার উপাচার্যবৃন্দ ছাত্রসমাজের কাঁধে চাপাতে চাইছেন কোন উদ্দেশ্যে? সে কি ছাত্রদের মঙ্গলাকাঙ্খা থেকে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার সৎ অভিলাষ থেকে? না কি এর পেছনেও আছে কোনো দুরভিসন্ধি। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে কি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব? ইতিহাস বলে, তা সম্ভব নয়। আজ যে উপাচার্যবৃন্দ এসব কথা বলছেন, তাঁরা কি একটা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারবেন? তাঁরা নিজেরা যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন তা কি গণতান্ত্রিক ছিল? এটা সবাই জানে, কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তাঁরা উপাচার্য নির্বাচিত হননি।

আমাদের দেশে ৫ বছর পর পর প্রধানত বুর্জোয়া দুই দলের মধ্যে এদেশের পুঁজিপতিদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার হিসাবে ক্ষমতার পালাবদল হয়। ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে সর্বত্র শুরু হয় দখলদারিত্ব ও দলীয়করণের মহোৎসব। প্রশাসন যন্ত্র থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, বিমানবন্দরের নামকরণ পর্যন্ত এদের দখলদারিত্ব বিস্তৃত হয়। দখলদারিত্বের এই সংস্কৃতির মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বাদ থাকে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো দখল করে হল-ক্যাম্পাস আর সরকার দখল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা উপাচার্য পদগুলো। আর নিজেদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত ব্যক্তিদেরকেই উপঢৌকন হিসাবে এই পদটি দান করেন। এটাও সবার জানা যে, এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য যারা এই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত অথবা একসময় যুক্ত ছিলেন সেইসব শিক্ষকদের মধ্যে চলে গোপন-প্রকাশ্য তীব্র প্রতিযোগিতা। সরকারি দলের স্বার্থ তিনিই সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করতে পারবেন – এই তোষামোদিতে যিনি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন, তার কপালেই জোটে সরকারি দলের অনুকম্পা। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি দলীয়করণ-দখলীকরণের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। নিজেরা দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে কোন নৈতিক বিচারে ছাত্রদের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করতে চাইছেন? এসব ব্যক্তিবর্গ বা উপাচার্যবৃন্দের দলভুক্ত অবস্থানের কারণে এটা আর কোনো কষ্ট-কল্পনা নয় যে, এর পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নেই, আছে অন্য কোনো দলীয় স্বার্থ বা পরিকল্পনা। এই চক্রান্ত বা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের অপতৎপরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে সংঘাত-সহিংসতার ধুয়া তুলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের চক্রান্ত হয়েছে। এদেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। আইনজীবী-শিক্ষক-সাংবাদিক-ডাক্তার এমনকি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চাকুরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সবাইকে বাদ দিয়ে সরকার ছাত্ররাজনীতির উপর এত খড়গহস্ত কেন?

আমরা সবাই জানি, সরকার একটি নীতি বা পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে। শিল্প-কৃষি-যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতের মতো শিক্ষা সম্পর্কেও তার একটি নীতি আছে। সেই নীতি হল শিক্ষাখাত থেকে ধীরে ধীরে সরকারি দায়িত্ব গুটিয়ে নেয়া, অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দ কমানো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ(!), চলবে নিজের আয়ে। এই নীতি অনুযায়ী শাসকমহল প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি’র ২০ মেয়াদী কৌশলপত্র। কৌশলপত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসাবেই, অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি তথা নাইটকোর্স চালু করছে। বিভাগ উন্নয়ন ফি’সহ নানা রকম খাতে বর্ধিত ফি আরোপ করছে। এভাবে ক্রমাগত ফি বাড়তে থাকলে দরিদ্র-সাধারণ ঘরের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা মাড়ানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। শাসকশ্রেণীও তাই চায়। একদিকে বর্ধিত ফি আরোপের মাধ্যমে শিক্ষাকে পণ্য করে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে শিক্ষাব্যবসায়ীরা। আর অন্যদিকে যার অর্থ খরচের সামর্থ্য নেই তারা ঝরে পড়বে। অর্থাৎ শিক্ষাসংকোচনের উদ্দেশ্যও পূরণ হবে।

সরকার শিক্ষা সংকোচন করতে চায় কেন? মহান সাহিত্যিক টলস্টয় বলেছিলেন, জনগণের অজ্ঞতাই সরকারের ক্ষমতার উৎস। জনগণকে অজ্ঞতার অন্ধকারে রেখে শাসকশ্রেণী সীমাহীন শোষণ-লুটপাট চালাতে চায়। শুধু শিক্ষা-বাণিজ্যই নয়, এদেশের ৫৪ ভাগ মানুষ কোনোরকম স্বাস্থ্যসুবিধা পায় না, ৪৩ ভাগ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা বেঁচে থাকার মতো সম্মানজনক বেতন পান না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা গরিব-মধ্যবিত্তের জীবন। আর অন্যদিকে সরকারি ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে মুনাফার পাহাড় গড়ছে একদল ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৩২ হাজার গুণ! কার কৃপায় এদের হাতে সঞ্চিত হয়েছে পাহাড়-সম সম্পদ? শোষণমূলক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই এ জন্যে দায়ী। শাসকশ্রেণী এই মূল সত্যকেই আড়াল করতে চায়। তাই শিক্ষাসংকোচনের নানা ফন্দি ফিকির করে। এই শোষণের স্বরূপ কিছুটা বুঝতে পারে ছাত্রেরাই, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তিও তারাই। পাকিস্তান আমলে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার শরীফ কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যয় ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করে শিক্ষাসংকোচনের প্রস্তাব করেছিল। সেদিন ছাত্ররা বুকের রক্ত দিয়ে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সরকারের শিক্ষাসংকোচনের নীলনক্সা প্রতিরোধ করেছিল। স্বাধীন দেশেও শোষণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শাসকশ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায় নি। তাই ৮৩ সালে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে মজিদ খানের বৈষম্যমূলক সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি বাতিল করতে বাধ্য করেছিল ছাত্ররা। বর্তমান সরকারেও শিক্ষা সম্পর্কে একই দৃষ্টিভঙ্গি। তাই ক্রমাগত বাণিজ্যিকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপছে অতিরিক্ত ফি’র বোঝা। আপনাদের নিশ্চয় স্মরণে আছে, কিছুদিন পূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল বাণিজ্যিকভাবে নাইটকোর্স চালু ও বর্ধিত ফি আরোপের প্রতিবাদে। সেই আন্দোলন দমনে প্রশাসন পুলিশ ও ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও মাস কয়েক পূর্বে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-বহির্ভূত কোনো কাজে অংশগ্রহণ করব না’ মর্মে অভিভাবকের প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আন্দোলন জয়ী হয়েছে। রাজনীতি যদি হয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, তাহলে সত্যিকারের রাজনীতি তো এটাই। এই রাজনীতিকেই ভয় শাসকদের। তাই শাসকশ্রেণী শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ তথা শিক্ষাকে পুঁজিপতিদের মুনাফা লুণ্ঠনের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সকল বাধা অপসারণ করতে চায়। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল ছাত্রআন্দোলন, ছাত্ররাজনীতি।
শিক্ষার অধিকার রক্ষার লড়াই শুধু নয়, এদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়েও ছাত্রসমাজের অগ্রগামী ভূমিকা অবিদিত নয়। স্বাধীনতা ৪২ বছর পরেও যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি নানা সময়ে শাসকশ্রেণীর আপস-রফার কারণে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এতবড় যে গণজাগরণ হয়ে গেল, তারও ভিত্তি তৈরি করেছে ছাত্রেরাই। তদারকি সরকারের ছদ্মবেশে ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যে অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসন জনগণের কাঁধে চেপে বসেছিল, সমস্ত ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সেই অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের শক্তি যুগিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সচেতন ছাত্রসমাজ। শাসকশ্রেণী তথা বর্তমান সরকারে কাছে ছাত্রদের এই ভূমিকা অজ্ঞাত নয়। তাই আজ যখন মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতা দমনের নামে আওয়ামী লীগ তাদের দোসর নীতিভ্রষ্ট পতিত বাম শক্তিকে সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের নাম করে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাবিরোধী অগণতান্ত্রিক শাসন চাপিয়ে দিয়েছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় শত্রু ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, এদেশের একচেটিয়া পুঁজির শোষণলুটপাটের স্বার্থে – এই শোষণ-লুটপাটের বিরুদ্ধে, অন্যায় ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যৌবনের অমিত শক্তি ধারণকারী ছাত্রেরাই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। ছাত্রসমাজের এই সম্মিলিত শক্তিকেই শাসকশ্রেণী ভয় করে, শোষণ-লুটপাটের অবাধ পরিবেশ তৈরির পথে বাধা মনে করে। তাই সেই বাধা অপসারণ করতে ছাত্রদের প্রতিবাদ করার, সংগঠিত হওয়ার অধিকার হরণের চক্রান্ত করছে। এটাও ফ্যাসিবাদী শাসনেরই আরেক লক্ষণ। এই ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত করার সহযোগী শক্তি ক্ষমতাসীনদের ছাত্রসংগঠন। এদের অপকর্মের চিত্র দেখিয়ে, এদের চরিত্রহীনতা দেখে কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন, ছাত্ররাজনীতি এখন আর আগের মতো নেই। রাজনীতিতে মূল্যবোধ নেই। পাকিস্তান আমলেও সরকারি ছাত্রসংগঠন এনএসএফ (ন্যাশনাল স্টুডেস্ট ফেডারেশন) এরকম হত্যা-খুন-দমন-পীড়নের কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু সেদিন তো কেউ এটা দেখিয়ে ছাত্রদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয় নি। কেন? কারণ ছাত্ররা সেদিন এদেশের গণমানুষের শিক্ষা-কাজের দাবিকে, গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিকে উচ্চকিত করেছিল, নিয়ত অপমান-লাঞ্ছনাময় জীবন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে, জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে রত হয়েছিল। এভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের সন্ধানে শোষিত মানুষের স্বার্থের পক্ষে রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে ছাত্রদের ন্যায়-নীতি-মূল্যবোধের ধারণা গড়ে উঠেছিল। আর আজ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় আদর্শহীন বুর্জোয়া ধারার রাজনীতি স্বভাবতই ব্যক্তিস্বার্থের পঙ্কে নিমজ্জিত। যা সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ত্বরান্বিত করছে। এই সংকট বুর্জোয়া রাজনীতির সংকট। বুর্জোয়া রাজনীতি আজ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে আর প্রতিফলিত করে না। তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নয়, ’৫২-’৬২-’৬৯-’৭১-’৯০-এর সংগ্রামের ধারাতে, শোষিত মানুষের পক্ষের যে রাজনীতি, অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আদর্শবাদী ও বিপ্লবী ধারার রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের মধ্য দিয়েই এই সংকটের সমাধান সম্ভব।

SSF_Roundtable

‘বুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর সন্ত্রাসের দায় ছাত্ররাজনীতির নয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ১৫ এপ্রিল বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর সন্ত্রাসের দায় ছাত্ররাজনীতির নয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন। সভার শুরুতে আলোচ্য বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু।
বৈঠকে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আকমল হোসেন, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক এ কে মনোয়ার উদ্দিন আহমেদ, মাসিক শিক্ষা বার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা, সাংবাদিক লেখক আবু সাঈদ খান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান,ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ডাকসুর সাবেক জি এস ডা. মুশতাক হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জহিরুল ইসলাম, বেলাল চৌধুরী প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বুর্জোয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়নের ছাপ সেটা তো এসেছে তাদের মূল রাজনৈতিক দলগুলোর লুটপাটকারী-সন্ত্রাসী-দখলদারী রাজনীতি থেকে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি গড়ে না তুলে ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা যাবে না।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সুপারিশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বৈঠকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সুপারিশের প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ১০ এপ্রিল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে বাণিজ্য অনুষদ ও কলাভবন ঘুরে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মলয় সরকার, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments